গুয়াহাটি, ১৫ অক্টোবর (হি.স.) : ২০২১-এ অসম বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস কোমর কষে মাঠে নেমেছে। প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা বরাক উপত্যকায় নির্বাচনি ডঙ্কা বাজিয়ে দিয়েছেন। দলীয় নেতারা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি জনসভায় বরাক উপত্যকার ১৫টি আসনে বিজয়ী হতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপুন বরা, সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ বরবরা, প্রাক্তন মন্ত্রী রকিবুল হুসেন সহ বেশ কয়েকজন নেতা নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন গলানোর চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে কংগ্রেস সরকার গঠন করলে ১০০ দিনের মধ্যে পাঁচগ্রাম কাগজ কল চালু করা, পোয়ামারা চোরাইবাড়ি ৮ নম্বর জাতীয় সড়ক সংস্কার করা এবং করিমগঞ্জে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন সহ নানান প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে রিপুন-রকিবুলরা ইতিমধ্যে মহড়া শুরু করে দিয়েছেন।
বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক মোকাবিলা করতে মহাজোট গঠনের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। বদরউদ্দিন আজমলের এআইইউডিএফ, অখিল গগৈয়ের কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি তথা নব গঠিত ‘রাইজর দল’কেও মহাজোটে শামিল হতে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বদরউদ্দিনের দলের সঙ্গে মিত্রতার জন্য অবশ্য কংগ্রেসের অন্দর মহলে বিদ্রোহের চোরাস্রোত বইতে শুরু হয়েছে। যা নির্বাচনে কংগ্রেসের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। মহাজোট গঠন হলে বরাকের ১৫টি আসন পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন যে রিপুন-রকিবুলের অধরা থেকে যাবে, তা পরিসংখ্যান ঘাটালেই পরিষ্কার হষ়ে যাবে।
বরাক উপত্যকার ১৫টি আসনের মধ্যে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সাতটি আসন আজমলের দলের পক্ষে যাওয়ার পুরোপুরি সম্ভাবনা রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিজ্ঞ মহলের ধারণা। বদরপুর ও মধ্য হাইলাকান্দি আসন দুটি কংগ্রেস-এআইইউডিএফের মধ্যে রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আজমলের দলের অন্দর মহলে কানাঘোঁষা চলছে। এআইইউডিএফ-এর দখলকৃত মধ্য হাইলাকান্দি আসন কংগ্রেস চাইতে পারে। ঠিক সেভাবে নিজেদের দখলকৃত বদরপুর আসন আজমলের হাতে কংগ্রেস তুলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া দক্ষিণ করিমগঞ্জ, কাটিগড়া, সোনাই, কাটলিছড়া, আলগাপুর আসনগুলো এআইইউডিএফ দাবি করতে পারে।
বিশ্বস্তসূত্রের খবর, রাতাবাড়ি, পাথারকান্দি, উত্তর করিমগঞ্জ, শিলচর, লক্ষ্মীপুর, উধারবন্দ, বড়খলা, ধলাই আসন কংগ্রেস দলের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উভয় দলের অন্দরমহলে এমন এক সমঝোতা হতে যাচ্ছে বলে সূত্রটি দাবি করেছে। ২০১৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এবং এআইইউডিএফের নিজেদের দখলকৃত ৩৯টি আসন ছাড়া ১৮টি আসনে এই দুই দলের সম্মিলিত ভোট শাসক দল বিজেপি থেকে বেশি ছিল। রাজ্যের ১ নম্বর আসন রাতাবাড়িতে বিজেপি পেয়েছিল ৫৩ হাজার ৯৭৫টি ভোট। আর কংগ্রেস-এআইইউডিএফের সম্মিলিত ভোট প্রাপ্তির সংখ্যা ছিল ৫৩ হাজার ৩৭৫টি। বড়খলা আসনে বিজেপি পেয়েছিল ৩৬ হাজার ৪৮২টি ভোট, কংগ্রেস ও এআইইউডিএফের সম্মিলিত ভোট ছিল ৬২ হাজার ৪৩৭টি।
অনুরূপভাবে কাটিগড়া বিধানসভা আসনে কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ উভয় প্রার্থীর সম্মিলিত ভোটের সংখ্যা ছিল ৬৭ হাজার ৩৭৪। অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী ৫৯ হাজার ৭৩৬টি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পাথারকান্দি বিধানসভা আসনে বিজেপি পেয়েছিল ৪৬ হাজার ৫৪৪টি ভোট। কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ সম্মিলিতভাবে ভোট পেয়েছিল ৬৯ হাজার ৩২৪টি ভোট। উধারবন্দ আসনে বিজেপি পেয়েছিল ৫৪ হাজার ২০৪টি ভোট এবং কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ দলের উভয় প্রার্থীর সম্মিলিত ভোট প্রাপ্তির সংখ্যা ছিল ৫৪ হাজার ৩১৩টি ভোট। সোনাই বিধানসভা আসনে বিজেপি পেয়েছিল ৪৪ হাজার ২৩৬টি ভোট। অন্যদিকে কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ প্রার্থীর ভোট সংখ্যা ছিল ৬৮ হাজার ৪৯২টি।
মঙ্গলদৈ আসনে বিজেপি প্রার্থীর পক্ষে ভোট পড়েছিল ৭৩ হাজার ৪২৩টি। অপরদিকে কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ দুই দলের পক্ষে মোট ভোট পড়েছিল ৯৯ হাজার ৭৯৫টি। গোঁসাইগাঁও বিধানসভা আসনে বিজেপি পেয়েছিল ৪৫ হাজার ৫১৭টি ভোট। আর কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ দলের সম্মিলিত ভোটের সংখ্যা ছিল ৭১ হাজার ৬৬৫। পূর্ব বিলাসীপাড়া বিধানসভা আসনে বিজেপি প্রার্থীর পক্ষে ভোট পড়েছিলো ৫৯ হাজার ২০৬টি। কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ দুই দল মিলে ভোট পেয়েছিল ৯৭ হাজার ৩২৩টি। গোলকগঞ্জ বিধানসভা আসনে বিজেপির পক্ষে পড়েছিল ৭৪ হাজার ৬৪৪টি ভোট। অপরদিকে কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ মিলে ভোট পেয়েছিল ৮৫ হাজার ৯৫টি। বরপেটা আসনে বিজেপি জোট পেয়েছিল ৬৩ হাজার ৫৬৩টি ভোট। কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ দল সম্মিলিত ভাবে পেয়েছিল ৯৫ হাজার ৪৫০টি ভোট।
সরভোগ বিধানসভা আসনে বিজেপি পেয়েছিল ৫৬ হাজার ৫৫৪টি ভোট। কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ উভয় দলের প্রার্থীর সম্মিলিত ভোটের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার ৫১৪। বরসলা বিধানসভা আসনে বিজেপি পেয়েছিল ৫৩ হাজার ৯১৩টি ভোট। অপর দিকে কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ দলের সম্মিলিত ভোট প্রাপ্তির সংখ্যা ছিল ৫৪ হাজার ৫১। বটদ্রবা বিধানসভা আসনে বিজেপি প্রার্থীর পক্ষে ভোট পড়েছিল ৪৬ হাজার ৩৪৩টি। অন্যদিকে কংগ্রেস ও এআইইউডিএফের সম্মিলিত ভোট প্রাপ্তির সংখ্যা ছিল ৭৩ হাজার ৪৮০। বরক্ষেত্রী বিধানসভা আসনে বিজেপি পেয়েছিল ৬৯ হাজার ২২৩টি ভোট। অপরদিকে কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ দুই দলের ভোট প্রাপ্তির সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার ৫৬০। রহা বিধানসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন ৭৬ হাজার ৯৪১টি। অন্যদিকে কংগ্রেস ও এআইইউডিএফের পক্ষে সম্মিলিতভাবে ভোট পড়েছিল ৮২ হাজার ৬৩৪টি। নগাঁও বিধানসভা আসনে বিজেপি প্রার্থীর পক্ষে ভোট পড়ছিল ৬৬ হাজার ৬০৭টি। কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ দলের সম্মিলিত ভোট প্রাপ্তির সংখ্যা ছিল ৭১ হাজার ৪৮০।
এই পরিসংখ্যান থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, রাজ্যে কংগ্রেসের নেতৃত্বে মহাজোট গঠিত হলেও, নিশ্চিত ভাবে শাসক দলের দখলকৃত এই ১৮টি আসনে বিজেপির পক্ষে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তবে রাজনীতিতে কখন কী হয়, এর কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারণ রাজনীতির ময়দানে কে কখন কার শত্রু এবং কে কখন কার মিত্র হয়ে যাবে, এর কোনও গ্যারান্টি নেই। একমাত্র সময়ই বলতে পারবে মহাজোট শাসক দল বিজেপিকে কতটুকু কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারবে। তবে জোটের প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রে যে বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে তার পরিষ্কার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আর এই বিদ্রোহের ফায়দা নিতে শাসক দল বিজেপিও সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আর এই বিদ্রোহই ২১-এর নির্বাচনে শাসক দলকে এগিয়ে রাখতে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।