নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ অক্টোবর৷৷ গ্রামীণ অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবায় যথাযথ পরিকাঠামো গড়ে তুলতে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে৷ গ্রামীণ এলাকায় উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে পারলেই রাজ্যবাসী উপকৃত হবেন৷ সরকার সেই দিশাতেই কাজ করছে৷ বুধবার মান্দাই ব্লকের বোরাখা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র (হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার)-এর নবনির্মিত ভবনের দ্বারোদঘাটন করে এ কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বলেন, ২০২২ সালের মধ্যে দেশে এ ধরনের দেড় লক্ষ হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার নির্মাণ করার ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২০০৭ সালে কাজ শুরু হলেও বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে এর পুনর্বিন্যাস হয়েছে৷ এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখন থেকে অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে৷ থাকবে ওপিডি পরিষেবা সহ ২৪ ঘণ্টা আইপিডি পরিষেবাও৷ দুর্গাপূজার প্রাক্কালে এলাকার নাগরিকদের জন্য এক সুসংবাদ নিয়ে এসেছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে৷ ১০ শয্যা বিশিষ্ট এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নির্মাণে রাজ্য সরকারের প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সবর্োপরি রাজ্যবাসীর একান্ত সহযোগিতায় করোনার প্রভাব বর্তমানে অনেকটাই আমাদের রাজ্যে কম রয়েছে৷ সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের নীচে৷ সুস্থতার হারও প্রায় ৮৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে৷ করোনা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মানা সত্ত্বেও অনেকেই সংক্রমণের ব্যাপারে আতঙ্কিত হচ্ছেন৷ সেজন্য রাজ্য সরকার সেরো সার্ভের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি টেস্ট প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে৷ যার মাধ্যমে বোঝা যাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শরীর কোভিডকে প্রতিহত করতে সক্ষম কিনা৷
তিনি বলেন, রাজ্যে ১১৬টি কমিউনিটি এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে৷ তাছাড়া রয়েছে জেলা হাসপাতাল, জিবিপি, আইজিএম, টিএমসি সহ বেসরকারি নার্সিং হোম৷ এগুলিতে কোভিড-১৯-এর পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে৷ করোনা পরিস্থিতিতে হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীর জন্য রয়েছে অক্সিমিটারের ব্যবস্থা৷ এর মধ্যে দিয়ে রোগী নিজেই অক্সিজেনের মাত্রা নির্ধারণ করতে পারবেন৷ তিনি জানান, উপসর্গযুক্ত করোনা রোগী যাদের অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে তাদের নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে৷ এক্ষেত্রে তিনি আরও উল্লেখ করেন, হোম আইসোলেশনে থাকা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি যদি তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি হয়ে থাকেন এবং তিনি যদি সরকারি চাকরিজীবী না হন সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ১০ দিনের খাদ্য সামগ্রী অথবা ১,৫০০ টাকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে৷
তিনি আরও বলেন, করোনা অতিমারির শুরুতে রাজ্যে মাত্র ৩০০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং একটি ভেন্টিলেটর ছিলো৷ এখন বেড়ে ১,১৩৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং ৯২টি ভেন্টিলেটর রাজ্যে রয়েছে৷ সেই সঙ্গে ৫০০ পিপিই কিট তখন ছিলো যা বর্তমানে প্রায় ৬৫,০০০টি রয়েছে৷ করোনা মোকাবিলায় গ্রাম থেকে শহর সমগ্র ত্রিপুরা প্রস্তুত রয়েছে৷ ঢেলে সাজানো হয়েছে সমস্ত জেলা হাসপাতাল, কমিউনিটি ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকেও৷ স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক, নার্স, আশাকর্মী, পুলিশ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সহ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের তৎপরতার জন্যই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ এজন্য তিনি তাঁদের ধন্যবাদ জানান৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করার ফলে গত ৫ বছরের তুলনায় রাজ্য থেকে বহিঃরাজ্যে রেফার কেইসের হার কমেছে৷ পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি জানান, ২০১৯-২০ সালে রেফার কেইসের সংখ্যা ছিলো ১,৯৮৮টি৷ ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে ২০২০ পর্যন্ত সেই সংখ্যা মাত্র ৫৩২৷ তিনি বলেন, রাজ্যে গত দু-বছরে মোট নিউরো সার্জারি করা হয়েছে ৩০০ জনের৷ এছাড়াও নিউরো সংক্রান্ত ১,৩০০ জন রোগী জিবি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছেন৷ খুব অল্প খরচে এই চিকিৎসা সুবিধা পেয়েছেন রোগীরা যা কল্পনাতীত৷
আগামী দিনগুলিতে রাজ্যের নাগরিকদের যেন বহিঃরাজ্যে গিয়ে চিকিৎসা না করতে হয় সে দিশাতে রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে চলেছে৷ তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে রাজ্যে প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ ই-কার্ড প্রদান করা হয়েছে৷ এই স্বাস্থ্য প্রকল্পে একজন রোগী সর্বাধিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুবিধা পেতে পারেন৷