বাংলাদেশের উদ্যোগীদের সাব্রুমে শিল্প স্থাপনে ভারতে নিযুক্ত হাইকমিশনারকে প্রয়াস নিতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ অক্টোবর৷৷ সাব্রুমের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোগীদের শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসার জন্য ত্রিপুরা সফররত ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মহম্মদ ইমরানকে প্রয়াস নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷


মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহম্মদ ইমরান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকারে মিলিত হন৷ মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন এবং তাঁর হাতে স্মারক উপহার তুলে দেন৷ বাংলাদেশের হাইকমিশনারও স্মারক উপহার হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তুলে দেন৷ সাক্ষাৎকারকালে বাংলাদেশের সাথে ত্রিপুরার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে সব বিষয় রয়েছে সেগুলি সমাধানের বিষয়ে আন্তরিক উদ্যোগ নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহম্মদ ইমরানকে অনুরোধ জানিয়েছেন৷ এছাড়াও সাক্ষাৎকারের সময় দুজনের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷

মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের চিটাগাঙ্গ বন্দর খুলে যাওয়ায় ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ উভয়ই লাভবান হবে৷ কারণ ওই বন্দরের মাধ্যমেই ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যগুলির মধ্যে পণ্য পরিবহণ করা হবে৷ এই বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের সামনে তুলে ধরার জন্য উদ্যোগ নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, রাজ্যের সাব্রুমের ৪ কিলোমিটারের মধ্যেই রেল স্টেশন, আইসিপি, লজিস্টিক হাব এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে৷ সাব্রুমে নির্মীয়মাণ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাংলাদেশের উদ্যোগীরা যাতে শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসেন, সে বিষয়ে প্রয়াস নিতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, ত্রিপুরায় পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস ও বিদ্যুৎ রয়েছে, যা শিল্প স্থাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ বাংলাদেশের উদ্যোগীরা সাব্রুমের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসলে তাঁদের প্রথম ৫ বছরের জন্য জিএসটি-তে ছাড় সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে৷


এদিন মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরার প্রসিদ্ধ হস্ততাঁত শিল্প, বাঁশবেত শিল্প এবং রবার শিল্পের বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে তুলে ধরতে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রসিদ্ধ পণ্য ত্রিপুরায় তুলে ধরার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷ এছাড়া, আগরতলা-আখাউড়া রেলপথের বাংলাদেশের দিকের রেলপথ নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা, রাজ্যের কিছু কিছু সীমান্ত এলাকায় ফেন্সিং নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা, বিলোনিয়া-ফেণী রেলপথটিকে মিটারগেজ থেকে ব্রডগেজে রূপান্তর করা, বাংলাদেশের সাথে ত্রিপুরার আমদানি-রফতানি আরও বৃদ্ধি করার জন্য রাজ্যে টেস্টিং ল্যাব স্থাপন, বাংলাদেশে যে সমস্ত পণ্য রফতানির বিষয়ে বন্দর বিধিনিষেধ রয়েছে তা নিরসনের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়৷


মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহম্মদ ইমরানের সৌজন্য সাক্ষাৎকারের সময় রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ কুমার, ত্রিপুরাস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার কিরীটি চাকমা উপস্থিত ছিলেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহম্মদ ইমরান জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে তা আরও গভীরতর হচ্ছে৷ সেই সম্পর্ককে আরও সুন্দরভাবে দ্রুত কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে৷ এছাড়াও ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ তিনি আরও জানান, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার জনগণ যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিল তা আজও বাংলাদেশের জনগণ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন৷ সেটা ধরে রেখেই আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *