নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ সেপ্ঢেম্বর৷৷ রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে সামাজিক দূরত্ব না মেনে চলার কথা বলেছে কেন্দ্রীয় টিম৷ তাছাড়া কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ টিমের দাবী রাজ্যে মাস্ক ব্যবহার না করার প্রবণতাও অনেক বেশী৷ শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ কেন্দ্রীয় টিমের এই মন্তব্যের কথা বুধবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন৷
রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় টিমের প্রতিনিধি ডা. ডি পান্না, ডা. সত্যজিৎ সেন এবং ডা. পি কে ভার্মা এই তিনজন বিশেষ’ চিকিৎসকের দল বর্তমানে রাজ্যে অবস্থান করছেন৷ গত ১০ সেপ্ঢেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় দলটি জি বি, আই জি এম, হাঁপানিয়া কোভিড কেয়ার সেন্টার, ভগৎ সিং কোভিড কেয়ার সেন্টার, এডি নগর, উত্তর জেলা, ঊনকোটি জেলা এবং খোয়াই জেলার বিভিন্ন কোভিড কেয়ার সেন্টার ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন৷ আজ গোমতী ও সিপাহীজলা জেলা তারা পরিদর্শন করেছেন৷
আজ মহাকরণে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সফররত কেন্দ্রীয় চিকিৎসকদলটির প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ সফরকারি দলের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে রয়েছে অনেক জায়গায় বহু মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন না৷ ফলে এর থেকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে৷ দ্বিতীয়ত সামাজিক দূরত্ব যথাযথভাবে মানা হচ্ছেনা বলে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, মৃত্যুর হার বৃদ্ধির জন্য মূলতঃ সংকটাপন্ন হয়ে যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবার সুুযোগ গ্রহণ করার প্রবণতা বেশি দায়ি অথচ তখন আর চিকিৎসার সুুযোগ তেমন থাকে না, যা কেন্দ্রীয় সফরকারী দলের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে৷
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরও জানান, রাজ্যে বর্তমানে সুুস্থতার হার ৬৩.১৪ শতাংশ৷ কোভিড আক্রান্ত ১১২ জন গর্ভবতী মহিলা এবং ’রোগের সমস্যা জনিত রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে এবং সন্তান প্রসব হয়েছে৷ এরমধ্যে ১১০ জনই সুুস্থ হয়ে উঠেছেন৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, আগামী ১৮ এবং ১৯ সেপ্ঢেম্বর রাজ্য জড়ে মাস্ক পড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অভিযান চালানো হবে৷ প্রয়োজনে ফাইনও করা হবে৷
তিনি জানান, গত ২৪ মার্চ থেকে ১৪ সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত লকডাউন ও কার্ফু আইন অমান্য করার দায়ে ১০,৫৬০ জনকে প্রেপ্তার করা হয়েছে৷ ৫২৬টি বিভিন্ন ধরণের যানবাহন আটক করা হয়েছে৷ এছাড়া জরিমানা বাবদ ২ কোটি ৫৭ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪৫৫ টাকা আদায় হয়েছে৷ গত ২৯ জন থেকে ১৫ সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত মাস্ক না পড়ার জন্য ফাইন আদায় হয়েছে ১৮ লক্ষ ৮৬ হাজার ৮০০ টাকা৷ এক্ষেত্রে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২,০৫১ জনকে৷ আসন্ন বিশ্বকর্মা পুজোর ক্ষেত্রেও কিছু বিধিনিষেধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরোপ করা হয়েছে বলে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে জানান৷
রাজ্যে কোভিড-১৯ মহামারি সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে ’’দ্য ত্রিপুরা এপিডেমিক ডিজিস কোভিড-১৯ রেগুলেশনস, ২০২০’’ প্রণয়ন করা হয়৷ এই আইনের অধীনে মাস্ক/মুখাবরণ পরিধান করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়৷ এই আইন ভঙ্গ করলে আই পি সি (১৮৬০-এর ৪৫) ১৮৮ ধারায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রথমবার ধরা পড়লে ২০০ টাকা এবং পরবর্তী বারগুলিতে ৪০০ টাকা করে জরিমানা হবে৷ জনসাধারণকে মাস্ক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করতে স্বাস্থ্য দপ্তর, জেলা/পুলিশ প্রশাসন বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন, মাস্ক/মুখাবরণ ব্যবহার না করার অপরাধে জেলা/পুলিশ প্রশাসন বহু লোককে জরিমানা করেছেন৷ প্রশাসনিক এতসব প্রচেষ্টার পরও মাস্ক পরিধান বা সঠিকভাবে পরিধান নিয়ে জনগণের মধ্যে অনীহা পরিলক্ষিত হয়েছ
এই পরিস্থিতিতে সরকার রাজ্যে আগামী ১৮ এবং ১৯ সেপ্ঢেম্বর, ২০২০ ’’মাস্ক এনফোর্সমেন্ট ডে’’ হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তারই অঙ্গ হিসেবে এই দুই দিন বিভিন্ন মিডিয়া, সংস্থা ও সামাজিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে মাস্ক/মুখাবরণ ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যকলাপ ছাড়াও জেলা/পুলিশ প্রশাসন ’’দ্য ত্রিপুরা এপিডেমিক ডিজিস, কোভিড-১৯ রেগুলেশনস, ২০২০’’ কঠোরভাবে কার্যকর করবে৷ ফলে নিয়ম উল্লঙ্ঘনকারীদের জরিমানা করা হবে এবং আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে৷ জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় সংখ্যক যৌথ ফ্লাইং স্কোয়াড তৈরি করবে, যেগুলি সংশ্লিষ্ট রেগুলেশনটি কঠোরভাবে বলবৎ করার জন্য তৎপর থাকবে৷ আজ ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে এক আদেশে এই সংবাদটি জানানো হয়৷