আগরতলা, ২৯ আগস্ট (হি.স.)৷৷ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের ওবিসি সম্প্রদায়ের জনগণকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করার ওপর মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব গুরুত্ব দিয়েছেন৷ বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্যের অন্যান্য পশ্চাদপদ জাতিভুক্ত মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মানোন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে৷ আজ শনিবার সচিবালয়ের কনফারেন্স হল-এ অন্যান্য পশ্চাদপদ জাতি কল্যাণ দফতরের পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এ কথা বলেন৷ সভায় ওবিসি কল্যাণ দফতরের বিভিন্ন কর্মসূচির পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ওবিসি সম্প্রদায়ের জনগণকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে ওবিসি কপর্োরেশন থেকে ভরতুকিতে ঋণ প্রদান করা হয়৷ ঋণগ্রহীতা কপর্োরেশন থেকে যে প্রকল্পে ঋণ নিয়েছেন তা সঠিক কাজে লাগানো হয়েছে কিনা তা দফতরকে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে৷ পাশাপাশি যারা বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ নিয়েছেন তা সময়মতো পরিশোধ করার ব্যাপারেও ঋণগ্রহীতাদের সচেতন করার কাজ করতে হবে দফতরকে৷
সভায় ওবিসি কল্যাণ দফতরের সচিব ভিএস যাদব বলেন, রাজ্যে ৪৩টি ওবিসি সম্প্রদায়ের মোট ৯ লক্ষ ৪ হাজার ১২০ জন বসবাস করছেন৷ তাঁদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মানোন্নয়নে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে দফতর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে থাকে৷ সচিব আরও জানান, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে রাজ্যে মোট ৬৫ হাজার ৮৫৫ জন ওবিসি ছাত্রছাত্রী (প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি) প্রি-মেট্রিক স্কলারশিপ প্রদান করা হয়েছে৷ তাতে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৫৮ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা৷ ২০২০-২১ অর্থবর্ষে দফতর ৬৬ হাজার ওবিসি ছাত্রছাত্রী প্রি-মেট্রিক স্কলারশিপ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে৷ ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ১৩ হাজার ৬২২ জন ছাত্রছাত্রীকে (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি) পোস্ট-মেট্রিক স্কলারশিপ প্রদান করা হয়েছে৷ ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা৷ ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ১৯ হাজার ছাত্রছাত্রীকে পোস্ট স্কলারশিপ প্রদান করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে৷
চিব জানান, ওবিসি সম্প্রদায়ের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জব ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে অন্যান্য পশ্চাদপদ জাতি কল্যাণ দফতরের মাধ্যমে ১৮০ জন ছাত্রছাত্রীকে বিএড, ডিএলএড কোর্সে প্রশিক্ষণের জন্য স্পনসর করা হয়েছে৷ এছাড়াও ২০১০-২০ অর্থবর্ষে ৬ জন ছাত্রছাত্রীকে নার্সিং কোর্সে এবং ৫০ জনকে প্যারামেডিক্যাল কোর্সের জন্য স্পনসর করা হয়েছে৷ তিনি জানান, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে দফতরের নিউক্লিয়াস বাজেট থেকে ওবিসি সম্প্রদায়ের ১৫৮ জন গরিব রোগীকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রকৃত সুবিধাভোগীরা যাতে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন সে বিষয়ে দফতর এবং ওবিসি কপর্োরেশনকে গুরুত্ব দিতে হবে৷
সভায় ওবিসি কল্যাণ দফতরের সচিব আরও জানান, রাজ্যের হালাহালিতে ৭০ শয্যাবিশিষ্ট গার্লস হস্টেল এবং কুলাইতে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বয়েজ হস্টেল স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে দফতর৷ ইতিমধ্যেই দফতরের পক্ষ থেকে এই দুই হস্টেল নির্মাণের অনুমোদন পাওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৩ কোটি ৮৬ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে সচিব জানান৷ এছাড়া রাজ্যের অন্যান্য পশ্চাদপদ জাতিভুক্ত গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য দফতর একটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ২০০ জন গরিব ছাত্রছাত্রীকে এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে দফতর৷
সভায় ওবিসি কপর্োরেশন বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দফতরের সচিব বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ওবিসি কপর্োরেশন থেকে মোট ৭৬৮ জনকে শিক্ষা, পরিবহণ, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঋণ প্রদান করা হয়েছে৷ এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবর্ষে এই সকল ক্ষেত্রগুলিতে ১,৭০০ জনকে ঋণ প্রদান করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ওবিসি কপর্োরেশন৷ তিনি আরও জানান, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ২০০ জন ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত যুবক-যুবতীকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর যোজনার বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ প্রদান করা হবে৷ সভায় এছাড়া পোস্ট-মেট্রিক স্কলারশিপ প্রদান ব্যবস্থাকে অনলাইনে যুক্ত করা, ঋণ পাওয়ার জন্য দরখাস্তকে আধার সংযুক্তিকরণ, ঋণ প্রদানের পুর্বে প্রি-কাউন্সেলিং করা ইত্যাদি নতুন উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন দফতরের সচিব ভিএস যাদব৷

