করোনা : রাজ্যে ৩০.৩ শতাংশ সংক্রমণের উৎসের খোঁজ মিলেনি

আগরতলা, ২৯ আগস্ট (হি.স.)৷৷ করোনা-র সংক্রমণ সংস্পর্শে থাকা কিংবা ভ্রমণ ইতিহাস ছাড়াই মানুষের দেহে পাওয়া যাচ্ছে৷ মোট করোনা আক্রান্তের ৩০.৩২ শতাংশের সংক্রমণের উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা তার জ্বলন্ত উদাহরণ রূপে চিহ্ণিত হয়েছে৷ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, মনে হচ্ছে করোনা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে৷ অন্তত কোভিড-১৯ সংক্রান্ত টেকনিক্যাল অ্যান্ড অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্যদের দেওয়া তথ্যে এমনটাই মনে হয়েছে৷


আগরতলা পুর নিগম এলাকা সহ সমগ্র পশ্চিম জেলায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার দ্রুত বেড়ে চলেছে৷ আজ শনিবার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত টেকনিক্যাল অ্যান্ড অ্যাডভাইজরি কমিটির এক সভায় পশ্চিম জেলার সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে৷ পর্যালোচনা সভায় দেখা গেছে, গত ১৬ আগস্ট থেকে এই সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ এই পরিস্থিতিতে জনসাধারণকে আরও সচেতন হতে হবে৷ জনসাধারণকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় সমস্ত সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে৷ আজ আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের কাউন্সিল রুমে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন কোভিড-১৯ সংক্রান্ত টেকনিক্যাল অ্যান্ড অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. সঞ্জীব কুমার দেববর্মা, অধ্যাপক ডা. অঞ্জন দাস ও অধ্যাপক ডা. দামোদর চ্যাটার্জি৷ সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে রাজ্যে নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি পশ্চিম জেলায়৷


সাংবাদিক সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. সঞ্জীব কুমার দেববর্মা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ মুহূর্তে পশ্চিম জেলায় সবাইকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে৷ তিনি জানান, এখন প্রয়োজন বেশি মাত্রায় টেস্ট৷ মাইল্ড ও অ্যাসিম্পটোমেটিক রোগীর জন্য রাজ্যে হোম আইসোলেশন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে রোগীকে নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অধীনে রাখা হবে এবং রোগীকে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তারের মোবাইল নম্বর দেওয়া হবে৷ সামান্য উপসর্গ থাকলে টেস্ট করানো উচিত৷ এতে ভয়ের কিছু নেই৷ তিনি বলেন, আমাদের রাজ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণে মৃত্যুহার জাতীয় হারের চেয়ে অনেক কম৷
এক তথ্য তুলে ধরে ডা. সঞ্জীব দেববর্মা বলেন, গত তিনমাসে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সারা ত্রিপুরাকে ছাপিয়ে গেছে৷ পশ্চিম ত্রিপুরায় সংক্রমণের হার ৩১.৮৬ শতাংশ, যা রাজ্যে সবর্োচ্চ৷ তিনি বলেন, এক সময় সিপাহিজলা জেলা করোনা আক্রান্তে শীর্ষে ছিল৷ কিন্তু এখন ওই জেলা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় সবচেয়ে কম আক্রান্ত জেলা ঊনোকটি৷ ওই জেলায় সংক্রমণের হার ৪.৬ শতাংশ৷


করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে ডা. সঞ্জীব দেববর্মা বলেন, সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, মোট আক্রান্তের ৩০.৩২ শতাংশের সংক্রমণের উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তেমনি, সংস্পর্শে গিয়ে সংক্রমিত হয়েছেন ৩০.৫৩ শতাংশ এবং ভ্রমণ ইতিহাস রয়েছে ২৬.২০ শতাংশেব৷ সাথে তিনি যোগ করেন, টিএসআর এবং বিএসএফ জওয়ান আক্রান্তের হার ১২.৯০ শতাংশ৷
এদিকে, ত্রিপুরায় করোনা আক্রান্ত আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে শনিবার৷ প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের মৃতের ঘটনায় আতঙ্ক ক্রমশ বাড়ছে৷ এদিকে, শনিবার রাজ্যে নতুন করে ৪৪৭ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ মিলেছে৷ ৩৭২২টি নমুনা পরীক্ষায় ওই করোনা আক্রান্তদের সন্ধান মিলেছে৷ বর্তমানে করোনা আক্রান্ত সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪৩৭৬ জন৷
স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে এন্টিজেনে ২৬৬৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৮৭ জনের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে৷ এদিকে, ১০৫৭টি আরটিপিসিআর পরীক্ষায় ৬০ জনের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে৷ এদিকে, জেলা ভিত্তিক আক্রান্তের হিসেবেউনকোটিতে ৪৪ জন, উত্তর ত্রিপুরায় ৩৮জন, ধলাইতে ২৪ জন, খোয়াইতে ৫৮ জন, পশ্চিম ত্রিপুরায় ১৭০ জন, সিপাহীজলায় ২৮ জন, দক্ষিণ ত্রিপুরা ৪২ জন এবং গোমতী জেলায় ৪৩ জন কোভিড-১৯ পজেটিভ রয়েছেন৷ শনিবার যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে দুইজন উত্তর জেলার এবং একজন করে পশ্চিম ও ঊনকোটি জেলার বাসিন্দা৷ তাছাড়া এদিন বিভিন্ন কোভিড কেয়ার সেন্টার থেকে ১৯৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *