নয়াদিল্লি, ২৪ আগস্ট (হি.স.): দিনভর টানা পোড়েনই সার ! সোনিয়া গান্ধীই আপাতত কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি থাকছেন। সোমবার প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে চলল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক । তাতে ছিল ‘মান-অভিমা’ । পরে আবার তা মিটেও গেল। ফলে দিনের শুরুতেই দায়িত্ব থেকে ‘অব্যাহতি’-র আর্জি জানিয়েও ইস্তফা দিলেন না সোনিয়া গান্ধী । শেষ পর্যন্ত ওয়ার্কিং কমিটির অনুরোধ মেনে অন্তর্বর্তী সভাপতি হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে রাজি হয়েছেন তিনি । আগামী ছ’মাসের মধ্যে কংগ্রেসের যে অধিবেশন ডাকা হবে, সেই পর্যন্ত দলের দায়িত্বভার সামলাবেন সোনিয়াই।
দলের অন্দরে প্রবল টানাপড়েনের মধ্যেই সোমবার বেলা ১১টা থেকে শুরু হয় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক। সোনিয়া গান্ধী দলের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী পদ থেকে অব্যাহতি চাওয়ার পরে আজকের বৈঠকে তাঁর উত্তরসূরি মনোনয়নের বিষয়টিই আজকের বৈঠকের মূল আলোচ্য ছিল। এদিন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের গোড়াতেই সোনিয়া তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়ে দেন। কিন্তু সেই সঙ্গে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন দলের এক শ্রেণীর নেতার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কংগ্রেসের ২৩ জন নেতা সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখে কংগ্রেসের দিশাহীনতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই চিঠির কথা ফাঁস হয়ে যায়। সেই প্রসঙ্গ টেনেই সোনিয়া বলেন, দল এমনিতেই সংকটে ছিল। তার মধ্যে এ ধরনের চিঠি লেখা কি দরকার ছিল। আপনাদের কোন কথা আমি শুনিনি। কী করিনি? এতে কি দলের ভাল হল? সোনিয়া কথা শেষ করার আগেই তাঁর পাশে বসে রাহুল বলেন, যাঁরা এই চিঠি লিখেছেন তাঁরা দলের ক্ষতি করেছেন। আমার তো মনে হয় এঁরা বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁত করে এসব করেছেন।
যে ২৩ জন নেতা সোনিয়াকে চিঠি লিখেছিলেন তাঁদের মধ্যে মাত্র তিন জন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য। এঁরা হলেন, গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা এবং জিতিন প্রসাদ। রাহুলের এ কথা শুনেই তীব্র আপত্তি জানান, গুলাম নবি। তিনি বলেন, রাহুল যে অভিযোগ করেছেন তা প্রমাণ করুক, আমি ইস্তফা দিয়ে দিচ্ছি। সোনিয়াকে চিঠি লিখেছিলেন কপিল সিব্বলও। রাহুল ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কী বলেছেন, তা পলকের মধ্যেই মিডিয়ায় ফাঁস হয়ে যায়। তার পর সিব্বলও প্রকাশ্যে মন্তব্য করে বলেন, এই অভিযোগ শুনে তিনি হতাশ। গত ত্রিশ বছর ধরে দলের জন্য তিনি কী করেছেন তার ব্যাখ্যা দিতেও নেমে পড়েন কপিল। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক থেকেই তাঁকে ফোন করে শান্ত করেন রাহুল।
ওদিকে বৈঠকের মধ্যে মনমোহন-চিদম্বরম বলেন, সোনিয়া গান্ধীই দলকে নেতৃত্ব দিন তাতেই কংগ্রেসের মঙ্গল। আবার লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, গান্ধী পরিবারের বাইরে কারও দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নেই। রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর পরীক্ষা নীরিক্ষা করে সে সব দেখা হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন সনিয়াই। এখন রাহুলেরই উচিত সভাপতি পদের দায়িত্ব মেনে নেওয়া। অধীরবাবু বৈঠকে আরও বলেন, ৬ মাস অপেক্ষা করারও দরকার নেই। রাহুল রাজি থাকলে ৬ দিনের মধ্যেই তাঁকে সভাপতি মেনে নিতে দল প্রস্তুত। যদিও তাতে রা কাটেননি রাহুল। এদিন প্রিয়ঙ্কা গান্ধীও বৈঠকে কোনও মন্তব্য করেননি। পরে বৈঠকের শেষে মনমোহন সিংহই প্রস্তাব দেন, আপাতত ৬ মাস কংগ্রেস সভানেত্রী থাকুন সোনিয়া গান্ধী। তার মধ্যে দলের সদস্য অভিযান ও সাংগঠনিক নির্বাচন হোক। তার পর ৬ মাসের মধ্যে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন ডেকে নতুন সভাপতির অভিষেক হবে। সেই প্রস্তাবে সায় দেন চিদম্বরম। পরে সেটাই সর্বসম্মত প্রস্তাব হিসাবে গৃহীত হয়।
প্রায় সাত ঘণ্টা পর সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল বৈঠক শেষের পরে জানানো হয়, নতুন সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে ওয়ার্কিং কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের পেশ করা প্রস্তাব সর্বসম্মত ভাবে গ্রহণ করে ওয়ার্কিং কমিটি স্থির করেছে, আগামী ছ’মাসের মধ্যে এআইসিসি-র পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন ডেকে নতুন সভাপতি নির্বাচন করা হবে। কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সোনিয়া তাঁর সমাপ্তি ভাষণে নেতৃত্ব পরিবর্তন চেয়ে ২৩ জন কংগ্রেস নেতার চিঠি পাঠানোর প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘আমি মর্মাহত হয়েছি। কিন্তু ওঁরা আমার সহকর্মী। আসুন আমরা এক সঙ্গে কাজ করি।’’