নয়াদিল্লি, ১৯ আগস্ট (হি. স.): ভারত সহ গোটা বিশ্বের ভবিষ্যৎ হচ্ছে জৈব চাষ। একে যতদিন না কৃষকরা আপন করে নেবে ততদিন পর্যন্ত তাদের মনে আনন্দ আসবে না। বুধবার বাড় জেলার কিষান মোর্চার আভাসি সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই কথা জানিয়েছেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ রবীন্দ্র কিশোর সিনহা। তিনি জানিয়েছেন, উৎকৃষ্ট কর্মের মধ্যে কৃষিকাজ অন্যতম। কিন্তু বর্তমানে কৃষকরা দুঃখের মধ্যে দিনযাপন করছেন। এর বড় কারণ হচ্ছে কৃষিতে উৎপাদনের ক্ষেত্রে খরচ অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু কৃষকেরা প্রকৃত দাম পাচ্ছেন না।এর মূল কারণ হচ্ছে কৃষকেরা পরম্পরাগত কৃষি কাজ পরিত্যাগ করেছে। বীজ, রাসায়নিক কীটনাশক, রাসায়নিক খাদ এবং শ্রমিকের উপর বেশি খরচ করতে হয়। এই খরচগুলোকে কম করতে হবে। এদিনের সম্মেলনে মগধি ভাষায় বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্র কিশোর সিনহা।
এদিন তিনি বলেন, পরম্পরাগত পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করলে কৃষকদের দ্বিগুণ আয় হবে। নিজের বীজ, খাদ, জৈবিক কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত। এতে করে ফসলের পরিমাণ বাড়বে এবং বাড়তি খরচ কমবে। গরুর গোবর এবং মূত্র দিয়ে কি করে কীটনাশক তৈরি করতে হয় তার ব্যাখ্যা কৃষকদের কাছে করেছেন রবীন্দ্র কিশোর সিনহা। আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে কৃষির মেলবন্ধন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রবীন্দ্র কিশোর সিনহা জানিয়েছেন, শিব ঠাকুরের মাথায় দেওয়া বেলপাতা, ভাং, ধুতরো এবং যে ফুল দেওয়া হয় র মনে রাখতে হবে পাতার গন্ধ শুঁকে সেই পাতা যদি গরু না চিবোয় তবে সেই পাতা দিয়ে কীটনাশক তৈরি করা যেতে পারে। এতে করে ফসল ভালো হবে এবং টাকাও বাঁচবে। পাশাপাশি সবাই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে।জৈব চাষের দ্বারা তৈরি হওয়া ফসল সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হয়। বাড়িতে দেশি গরু পুষলে তার থেকে পাওয়া গোবর এবং মূত্র দিয়ে সার তৈরি করা উচিত। কৃষকরা এমন করলে অতি সহজেই সার পাবে।তার সঙ্গে বাড়িতে খাওয়ার জন্য গরুর দুধ এবং ঘিও পাওয়া যাবে।আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে কিভাবে কৃষিকাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি কৃষকদের সিড়ি পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।এই পদ্ধতি ইউনিসেফ এর দ্বারা স্বীকৃত এবং গোটা বিশ্বের একাধিক দেশ এই পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করে চলেছে। ভালো সবজি ফলনের জন্য কৃষকদের মাল্টি লেয়ার ফার্মিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন এখানে একসাথে একই খেতে পাঁচ ধরণের সবজি ফলানো যায়। মাটির তোলায় আলু, ওল, কচু, আদা, হলুদ লাগানোর পর জমির উপরে নাইট্রোজেন যুক্ত ফসল যেরকম শাখ, ধনেপাতা, লাতুর যুক্ত ফসল ফলন করা যেতে পারে।এছাড়া দূরত্ব বজায় রেখে পেঁপে ফোলানো যেতে পারে।
রবীন্দ্র কিশোর সিনহা আরও জানিয়েছেন, ‘পরম্পরাগত কৃষি কাজ না করলে কৃষকদের দুঃখ কোনও দিন দূর হবে না।বীজ এবং রাসায়নিক সার বিক্রয়কারী কোম্পানীগুলির উপর নির্ভরশীল থাকলে কৃষকদের দুঃখ কোনদিন দূর হবে না।এই নির্ভরতাকে ত্যাগ করে আত্মনির্ভর হতে হবে। নিজের বীজ, নিজের জৈবিক সার, দেশি কীটনাশক কৃষি কাজে ব্যবহার করা উচিত। কৃষকদের পরিশ্রমের জন্যই করোনায় অনাহারে কারো মৃত্যু হয়নি।