নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ জুলাই৷৷ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত মহিলাদের সুুবিধার কথা বিবেচনা করে ‘হোম স্টে’ ধাঁচে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবে রাজ্য সরকার৷ রাজ্য সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরকে উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷
আজ সচিবালয়ের ২নং সভাকক্ষে আয়োজিত সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের পর্যালোচনা বৈঠকে এই নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত মহিলাদের কর্মস্থলে কোন ধরণের থাকার ব্যবস্থা নেই তাদের জন্য এই ‘হোম স্টে’ নিরাপদে থাকার আশ্রয়স্থল হবে৷ পাশাপাশি স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত বিষয় এবং যাতায়াতের সুুবিধাগুলিও দেখতে হবে দপ্তরকে৷ এক্ষেত্রে বেসরকারি আবাসনও ব্যবহার করা যেতে পারে৷ দপ্তরের এই উদ্যোগ গ্রহণের ফলে কর্মরত মহিলারা খুবই উপকৃত হবে এবং কাজে মনোনিবেশ করতে পারবেন৷ একই সঙ্গে বেসরকারিভাবেও পরিকাঠামো নির্মাণে অনেকে আগ্রহী হবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন৷ তিনি বলেন, সরকার পরিচালিত বিভিন্ন হোমে বসবাসরত আবাসিকদের লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে৷ যাতে পরবর্তীতে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ধলাই জেলায় সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের অধীনে স্বেচ্ছাসেবকরা বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কাজে নিয়োজিত রয়েছে৷ এক্ষেত্রে জেলার মনু এবং ছামনু ব্লকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাদের নিয়োজিত করতে হবে৷ এ সকল স্বেচ্ছাসেবকদের সামাজিক সচেতনতামূলক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে, যেন সরকার বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির সুুবিধা নেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবকরা জনগণকে সচেতন করতে পারেন৷ রাজ্যে মহিলা সংক্রান্ত পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে দপ্তরের মহিলা হেল্পলাইনে বা ইমার্জেন্সী রেসপন্স সাপোর্ট সিস্টেমে যেসকল কলগুলি আসছে তা নিয়মিত ফলোআপ করে নিপত্তির জন্য কাউন্সিলিং-এর প্রয়োজিনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এদিনের সভায় গৃহ পরিচারিকাদের নাম পরিবর্তন করে এখন থেকে গৃহ সহায়িকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে৷
পর্যালোচনা সভায় সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব দীপা ডি নায়ার, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলি তুলে ধরেন৷ টিকাকরণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রেফারেল সার্ভিস, পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা, প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা এবং অতিরিক্ত পুষ্টি প্রদান ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা সম্পর্কে আলোকপাত করেন তিনি৷ তিনি জানান, রাজ্যে ৯,৯১১টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৬ মাস থেকে ৬ বছর পর্যন্ত ৩,২৫,৪১৯ জন শিশু এবং ৬৩,৪১৫ জন গর্ভবতী মহিলা বিভিন্ন পরিষেবা পাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, মারাত্বকভাবে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের পুষ্টি যুক্ত অতিরিক্ত খাবার দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷
তিনি বলেন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে পরিশ্রত পানীয়জল সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে৷ ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ৩০৬ জন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক ইতিমধ্যে ২৩৪টি নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র স্থাপনের জন্য অনুমোদন দিয়েছে৷ তিনি বলেন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি যথাযথভাবে হচ্ছে কিনা তা নিরুপনের জন্য ধলাই জেলায় ১,২৩৫টি এবং খোয়াই জেলায় ৯১৭টি গ্রোথ মনিটরিং যন্ত্র দেওয়া হয়েছে৷ বাকি জেলাগুলিতে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে৷ পোষণ অভিযানের অধীনে ৩,৮৪৬টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এল পি জি সংযোগ দেওয়া হয়েছে৷ পিছিয়ে পড়া ৫০০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রকে চিহ্ণিত করে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে৷
সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী মাত্র বন্দনা যোজনায় এ পর্যন্ত মোট ৫৯,১৯৪ জন সুুবিধাভোগী নথিবদ্ধ হয়েছে৷ বিদ্যালয় বর্হিভূত ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য শিক্ষা উন্নয়নের সুুযোগ প্রদান করা হচ্ছে৷ চলতি বছরে ৩৮৬ জন কিশোরী এ সুুবিধার জন্য চিহ্ণিত হয়েছে৷ ত্রিপুরা বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও কর্মসূচি রাজ্যের ৭টি জেলায় রূপায়িত হবে৷ তিনি বলেন, গার্হস্থ হিংসার শিকার হলে মহিলা বা মেয়েদের সহায়তার জন্য প্রতিটি জেলায় ওয়ান স্টপ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে৷ এই ওয়ান স্টপ সেন্টারগুলি আপাতত অস্থায়ীভাবে কাজ শুরু করলেও সেগুলির স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে জমি চিহ্ণিত করা হয়েছে বলে বিশেষ সচিব জানান৷ তিনি বলেন, রাজ্যে ৪টি স্বধর গৃহ রয়েছে৷ ২০১৯-২০ সালে ৩২৩ জন মহিলা এবং শিশুকে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও মহিলা পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে৷ ছেলেদের জন্য তিনটি শিশু আবাসন নির্মাণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷ দপ্তরের বিশেষ সচিব আরও জানান, ২০১৯-২০ সালে ১,২০১ জন দিব্যাঙ্গজনকে বিভিন্ন সহায়ক সামগ্রী দেওয়া হয়েছে৷ ৮৬,১৫৫ জনকে দিব্যাঙ্গ সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে৷ তিনি জানান, বর্তমানে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের ৩৩টি সামাজিক ভাতা প্রকল্পে ৩,৯২,৯৬২ জন সুুবিধাভোগী ভাতা পাচ্ছেন৷
পর্যালোচনা সভায় সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, মুখ্যসচিব মনোজ কুমার আলোচনায় অংশ নেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে মত প্রকাশ করেন৷ এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ সচিব প্রশান্ত কুমার গোয়েল, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা প্রিন্সি রানি সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷