নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৪ জুন৷৷ করোনা-র প্রকোপে দেশের বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রকে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর আত্মনির্ভর প্রকল্পের পূর্ণ সুফল প্রাপ্তির লক্ষ্যে ব্যাংকগুলিকে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণে পরামর্শ দিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ বুধবার এসএলবিসি-র বৈঠকে ত্রিপুরায় ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের দক্ষতার নিরিখে ঋণ প্রদান করতে ব্যাংকগুলিকে পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রের বর্ণনা দিয়ে আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গঠনের প্রশ্ণে ঋণ প্রদান সুনিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন তিনি৷
আজকের বৈঠকে আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার যে সব প্রকল্প ঘোষণা করেছে তা থেকে ত্রিপুরা প্রায় ৪,৮০০ কোটি টাকা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে লাভবান হতে পারে৷ কোন কোন ক্ষেত্রে ত্রিপুরার জনগণ লাভবান হবেন সে সমস্ত বিষয়গুলি সরকারের পক্ষে চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ সে অনুযায়ী ব্যাংকগুলি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলেই রাজ্যে সিডি রেশিও বাড়বে৷ এক্ষেত্রে যে সব ক্ষেত্রগুলিতে জনগণের ঋণের সুবিধা দেওয়া যায় সেগুলো অনুসরণ করে ব্যাংকগুলোকে কর্মসূচি নেওয়ার জন্য গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ রাজ্যের ব্যাংকগুলির বর্তমান সিডি রেশিও ৫৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে জাতীয় গড়ের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাংকগুলিকে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, পরিযায়ী শ্রমিক যাঁরা বিভিন্ন পেশায় দক্ষতার সাথে বহিঃরাজ্যে কাজ করতেন, বর্তমানে তাঁরা ত্রিপুরায় ফিরে এসেছেন৷ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে তাঁদের কাজের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে ঋণ দিতে ব্যাঙ্ক প্রতিনিধিদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷ তাঁর মতে, ত্রিপুরার অর্থনৈতিক বিকাশে রবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র৷ তাই রবার চাষের সঙ্গে যুক্তদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলির প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন৷ সাথে তিনি যোগ করেন, স্মোক হাউস নির্মাণের জন্য জমি সংক্রান্ত বিষয়ও সরলীকরণ করা হবে যাতে সুবিধাভোগীরা সহজেই ঋণ পেতে পারেন৷
স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাংকগুলোকে হোয়াটস্যাপ গ্রুপ তৈরি করে সমন্বয় সাধন করতে হবে৷ পাশাপাশি নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে তা পর্যবেক্ষণ করা দরকার বলে তিনি দাবি করেন৷ তাতে লক্ষ্যমাত্রা দ্রুত অর্জিত হবে বলে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ঋণগ্রহীতাদের ঋণ যেন অনুৎপাদক সম্পদে (এনপিএ) পরিণত না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রেখে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷ তাছাড়া ব্যাংকগুলোর মঞ্জুরিকৃত শিক্ষা ঋণ যেগুলি এখনও বণ্টন করা হয়নি সেগুলি শীঘ্র প্রদান করার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে তিনি অনুরোধ জানান৷
সভায় মুখ্যসচিব মনোজ কুমার কেন্দ্রীয় সরকারের সম্প্রতি ঘোষিত প্রকল্পগুলি ব্যাংকগুলির কর্মসূচি রূপায়ণে যেন প্রতিফলিত হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে পরামর্শ দেন৷ বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে ব্যাংকগুলির সিডি রেশিও বাড়ানোর ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন৷ সভায় পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের ডিজিএম আনন্দ কুমার স্টেট লেভেল ব্যাংকার্স কমিটির বিস্তারিত কর্মসূচি সম্পর্কে আলোচনা করেন৷ সভায় স্টেট লেভেল ব্যাংকার্স কমিটির চলতি বছরের নানাবিধ কর্মসূচি রূপায়ণের রূপরেখা তৈরি হয়৷ সভায় জানানো হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে মার্চ ২০২০ পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত ব্যাংকের সিডি রেশিও ৫৭ শতাংশ৷ যে সব ব্যাংকের সিডি রেশিও কম, তাদের সিডি রেশিও বাড়ানোর জন্য উদ্যোগী হতে পরামর্শ দেওয়া হয় স্টেট লেভেল ব্যাংকার্স কমিটির পক্ষ থেকে৷
সভায় জানানো হয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে নতুন এবং নবীকরণ মিলে মোট ৫৬,৬৫১ জনকে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড প্রদান করা হয়েছে৷ ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনে ৩,৪৬৬টি স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর ঋণের আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে৷ ত্রিপুরায় পিএমইজিপি প্রকল্পে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের মার্চ ২০২০ পর্যন্ত ১,০৬১টি ব্যাংক ঋণের মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে৷ ১২১৪টি ব্যাংক ঋণের মঞ্জুরি স্বাবলম্বন প্রকল্প দেওয়া হয়েছে৷ ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের মার্চ ২০২০ পর্যন্ত মিনি ডায়েরি প্রকল্পে রাজ্যে ৫৪৬টি প্রস্তাবিত ঋণের মঞ্জুরি দিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক৷ ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে মার্চ ২০২০ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ৬৭৮ জনের শিক্ষা ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে৷ মঞ্জুরকৃত অর্থ ১৪৫১.৪৭ লক্ষ টাকা৷ স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া প্রকল্পে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের ৩১ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত ৫১ জন এসসিএসটি মহিলা সুবিধাভোগীকে ঋণ দেওয়া হয়েছে৷
এদিনের সভায় ব্যাংকের নতুন শাখা খোলা, পর্যটন বিকাশে সহায়তা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়েও আলোচনা হয়েছে৷ শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের সচিব কিরণ গিত্যে, শিক্ষা দফতরের সচিব সৌম্যা গুপ্তা, পরিকল্পনা ও সমন্বয় দফতরের সচিব অপূর্ব রায়, আগরতলাস্থিত রিজার্ভ ব্যাংকের শাখার জেনারেল ম্যানেজার তমাল বিশ্বাস, নাবার্ডের ডিজিএম পিকে মহাপাত্র সহ এসএলবিসি কমিটির আওতাভুক্ত অন্য ব্যাংকের প্রতিনিধি, বিভিন্ন বিমা সংস্থার প্রতিনিধিগণ সহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকবর্গ আজকের সভায় উপস্থিত ছিলেন৷ এদিন ১৩২ তম স্টেট লেভেল ব্যাংকার্স কমিটির সভায় মুখ্যমন্ত্রী গত এসএলবিসি-র বৈঠকে উত্থাপিত বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাংক কতটুকু অগ্রসর হয়েছে তার পর্যালোচনা করেছেন৷