একই দিনে আত্মহত্যায় নজির গড়ল ত্রিপুরা তিনজন আত্মঘাতী, একজন লড়ছেন মৃত্যুর সাথে

নিজস্ব প্রতিনিধি, বিলোনীয়া/ আগরতলা, ১২ জুন৷৷ একই দিনে আত্মহত্যায় নজির গড়ল ত্রিপুরা তিনজন আত্মঘাতী, একজন লড়ছেন মৃত্যুর সাথে৷ দুই গৃহবধূ আত্মঘাতী হলেন বিলোনীয়ায়৷ একজন প্রাণ দিলেন ফাঁসীতে ঝুলে এবং অপরজন অ্যাসিড খেয়ে৷ অন্যদিকে, আরেক যুবক আত্মহত্যার লক্ষ্যে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে৷ যদিও প্রাণে বেঁচে গিয়েছে ওই যুবক৷ তবে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে হাসপাতালের শয্যায়৷ তিনটি ঘটনাই ঘটেছে বিলোনীয়ায়৷


অ্যাসিড খেয়ে আত্মঘাতী হলেন এক মহিলা৷ মানসিক অবসাদ থেকেই ওই মহিলা আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি পরিবারের৷দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার পুরাতন রাজবাড়ি থানা এলাকার বাসিন্দা শেফালী দাস অ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন৷ পরিবারের সদস্যরা প্রথমে তাঁকে নিহারনগর প্রাথমিক হাসপাতালে নিয়ে যান৷ মহিলার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটতে থাকায় চিকিৎসকরা তাঁকে নিহারনগর প্রাথমিক হাসপাতাল থেকে বিলোনিয়া হাসপাতালে স্থানান্তর করেন৷ কিন্তু শেষ রক্ষা করা যায়নি৷ বিলোনিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷
পরিবারের সদস্যদের দাবি, মহিলা দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন৷ তাঁর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ মানসিক অবসাদ থেকেই মহিলা এই ঘটনা সংগঠিত করেছেন৷ এই ঘটনায় পুরাতন রাজবাড়ি থানায় মামলা হয়েছে৷ পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে৷ মৃতদেহটি ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে৷ অ্যাসিড খেয়ে মহিলার আত্মহত্যার ঘটনা রহস্যজনক বলে দাবি এলাকাবাসীর৷ পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ ওই ঘটনায় কেউ দায়ী হলে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে তাঁকে ব তাঁদের৷

এদিকে, বিলোনীয়া থানার অধীন লক্ষ্মীপুর গ্রামের সরস্বতী ভৌমিক (৪০) বৃহস্পতিবার নিজ বাড়িতেই ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছেন৷ পরিবারের লোকজনের অলক্ষে ওই মহিলা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে৷ পরে বিলোনীয়ী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ জানা গিয়েছে, ওই মহিলাও মানসিক ভাবে অনেকটাই অশান্তিতে ছিলেন৷
অন্যদিকে, গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এক যুবক৷ তার শরীরের অনেকটাই পুড়ে গেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন৷ পারিবারিক কলহের জেরে ওই সংগঠিত ঘটনার শিকার যুবকটি বর্তমানে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন৷


শুক্রবার দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বিলোনিয়ার সাতমুড়া কালিমুড়ার বাসিন্দা সুব্রত ধর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে৷ বর্তমানে অগ্ণিদগ্দ যুবক আগরতলার জিবি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন৷ পারিবারিক কলহের জেরে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে৷


এলাকাবাসী সূত্রের খবর, বিলোনিয়ার কালিমুরা এলাকার সুব্রত ধরের পরিবারে গত বেশ কিছুদিন ধরে কলহ চলছিল৷ তাদের ধারণা, কলহ সহ্য করতে না পেরেই শুক্রবার সকালে সুব্রত গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন৷ ঘটনার জেরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন পরিবারের লোকজনরা৷ তাকে অগ্ণিদগ্দ অবস্থায় দেখে দমকল বাহিনীকে খবর পাঠানো হয়৷ খবর পেয়ে দমকল কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন৷ অগ্ণিদগ্দ যুবককে উদ্ধার করে তারা প্রথমে নিয়ে যান বিলোনিয়া হাসপাতালে৷ কিন্তু তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাকে স্থানান্তর করেন আগরতলার জিবি হাসপাতালে৷ বর্তমানে তিনি জিবি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন৷ বিলোনিয়া থানার পুলিশ এ ব্যাপারে একটি মামলা নিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে৷

এদিকে, বিষপানে আত্মহত্যা করেছে এক ব্যক্তি৷ মৃত ব্যক্তির নাম প্রসেনজিৎ সূত্রধর৷ বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর৷ ঘটনার বিবরণে জানা যায় রাজধানীর দশমীঘাট এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত ফনি সূত্রধরের ছেলে প্রসেনজিৎ সূত্রধর৷ প্রায় ১০ বছর পূর্বে সে বিয়ে করে৷ বর্তমানে তার দুই শিশু সন্তান রয়েছে৷ অভিযোগ বিয়ের পর থেকে প্রসেনজিৎ সূত্রধরের স্ত্রীকে প্রসেনজিৎকে মারধর করতো৷ তাই তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়৷ তারপর থেকে তারা আমতলি থানার অন্তর্গত পাঁচ মুইখা এলাকার সজল সরকারের বাড়িতে ভাড়া থাকতো৷ সেখানেও প্রায় সময় মারধর করা হতো প্রসেনজিৎকে৷ এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে প্রসেনজিৎ বিষ পান করে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে৷ সাথে সাথে প্রসেনজিৎকে নিয়ে আসা হয় জিবি হাসপাতালে৷ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জিবি হাসপাতালে মৃত্যু হয় প্রসেনজিৎ-এর৷ ঘটনার পর প্রসেনজিৎ-এর শ্বাশুরি প্রসেনজিৎ-এর বাড়িতে ছুটে যায়৷ এবং ঘটনা সম্পর্কে বাড়ির লোককে আবগত করে৷ দ্রুত প্রসেনজিৎ-এর মা ও ভাই হাসপাতালে ছুটে আসে৷ তাদের অভিযোগ প্রায় সময়ই প্রসেনজিৎ-এর স্ত্রী প্রসেনজিৎকে মারধর করতো৷ পাঁচ মুইখা এলাকার যে বাড়িতে প্রসেনজিৎ ভাড়া থাকতো সেই বাড়ির মালিকের সাথে প্রসেনজিৎ-এর স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক ছিল৷ প্রায় সময়ই বাড়ির মালিক প্রসেনজিৎ-এর ঘরে আসত৷ মৃত প্রসেনজিৎ-এর ভাইয়ের সন্দেহ হয়তো তারা সকলে মিলে প্রসেনজিৎ-কে পরিকল্পনা করে হত্যা করেছে৷ মৃত প্রসেনজিৎ-এর ভাই আরও জানায় প্রসেনজিৎ-এর স্ত্রী ও ভাড়া বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে আমতলি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷