নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ এপ্রিল৷৷ রাজধানী আগরতলা শহর সংলগ্ণ প্রতাপগড় এর সাধু টিলা এলাকার এক ঠেলা চলক নিজের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে লকডাউন চলাকালে গরিব অংশের মানুষের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে রীতিমতো হিরুতে পরিণত হয়েছেন৷ মানবতাবাদী ওই ঠেলা রিস্কা চালকের নাম গৌতম দাস৷ তিনি গত ৬ এপ্রিল লকডাউন এর প্রথম পর্যায়ে নিজের উপার্জিত এবং সঞ্চিত টাকা দিয়ে এলাকার গরীব ও মেহনতী মানুষের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছিলেন৷ গরিব ঠেলা চালকের এই মানবদরদী কাজকর্ম সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টিগোচর হয়৷ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়৷
গরিব ঠেলা রিস্কা চালককের মানবতাবাদি কাজকর্মের ভূয়শী প্রশংসা করেছিলেন যারা সাহায্য পেয়েছেন তারা সহ বিভিন্ন অংশের মানুষজন৷ তার সেই মানবদরদী কাজকর্ম শুধু ত্রিপুরার গন্ডির মধ্যেই আবদ্ধ থাকেনি৷ মিডিয়ার যুগে এই সংবাদ দেশের প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মে মাসের শেষ রবিবার মন কি বাত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ত্রিপুরার আগরতলার প্রতাপগড় এর সাধু টিলার ঠেলা রিস্কা চালক গৌতম দাসের এই মানবতাবাদী কাজকর্মের ভূয়শী প্রশংসা করেন৷ প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার মন কি বাত অনুষ্ঠানে বলেন, আগরতলার ঠেলা রিস্কা চালক গৌতম দাস যেভাবে নিজের উপার্জনের টাকা অন্যের খাবারের জন্য খরচ করেছেন তা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে৷ প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুধু গৌতমদাসেরই নয়, গোটা ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রীর মন কি বাত অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই প্রতাপগড় এর সাধু টিলার ঠেলা রিক্সা চালক গৌতম দাসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক সহ বিভিন্ন অংশের মানুষজন৷
ঠেলা রিস্কা চালক মানবতাবাদি গৌতম দাসের বাড়িতে মানুষের ঢল নামে রবিবার৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক পৃথক পৃথকভাবে এই মানবতাবাদী’’ ব্যক্তিত্বকে এনে উষ্ণ সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন৷ তার জীবন জীবিকা সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেয়া হয়৷ নিজে একজন রিস্কা চালক হয়ে যেভাবে অন্যের জন্য সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন গৌতম বাবু তাতে রীতিমতো বিস্মিত মুখ্যমন্ত্রী সহ অনেকেই৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব তার সেবামূলক কাজের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান৷ দরিদ্র পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ঠেলা রিস্কা চালক গৌতম দাসকে প্রয়োজনীয় ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বিভিন্ন মহল থেকে সমাজসেবী গৌতম দাসকে সম্বর্ধনা দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ গৌতম দাস সেবাধর্মে যে নজির স্থাপন করেছেন তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছুই রয়েছে৷ সমাজে ধনাঢ্য অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা ইচ্ছে করলে লকডাউন চলাকালে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দুঃখ দুর্দশা দূর করতে পারেন৷ কিন্তু অনেকেই তাতে এগিয়ে আসছেন না৷ গরিব ঠেলা রিকশাচালক কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে লকডাউন চলাকালে গরিব অংশের মানুষের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে যে নজির স্থাপন করেছেন তা ত্রিপুরা রাজ্যের গর্বের বিষয়৷ তার কাছ থেকে প্রত্যেককেই শিক্ষা নেওয়া উচিত৷
এদিকে, বিরাট হৃদয়ের জন্য ত্রিপুরার যে গৌতম দাস কে দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চিহ্ণিত করেছেন, ত্রিপুরা সরকার তার পরিবারের জন্য আর্থিকভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে৷
রবিবার আগরতলা প্রতাপগড় এলাকার গরিব ঠেলা চালক গৌতম দাসকে নিজের সরকারি বাসভবনে সম্বর্ধিত করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর ’মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে দেশের গরীব অংশের নাগরিকরাও কিভাবে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে দুর্গত মানুষের সেবা করে চলেছেন তা তুলে ধরেন৷ এতে তিনি আগরতলার গরিব ঠেলা চালক গৌতম দাসের কাজের প্রশংসা করেন৷ প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন, গৌতম বাবু কিভাবে ঠেলা চালিয়ে রোজগার করে, সর্বস্ব দিয়ে, অসহায় মানুষের মুখে, খাবার তুলে দিয়েছেন৷
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরেই, রাজ্যজুড়ে গৌতম বাবুকে নিয়ে, বয়ে যায় প্রশংসার বন্যা৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব নিজ উদ্যোগে গৌতম বাবুকে নিয়ে আসেন তাঁর সহকারী আবাসে৷ সেখানে নিজের হাতে গৌতম দাসের গলায় পরিয়ে দেন রাজ্যের চিরাচরিত রিসা৷ হাতে তুলে দেন উপহারও৷ পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গৌতম দাসের মত এরকম রিক্সাচালক এবং ক্ষৌরকর্মী প্রায় বারো হাজারের মত চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ তাদেরকে মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে ১০০০ টাকা করে সহায়তা করা হবে৷
উল্লেখ্য, লকডাউন পরিস্থিতিতে রাজ্যের জনগণের সদর্থক ভূমিকার কথা নিয়মিত সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হচ্ছে৷ এরমধ্যে আগরতলার প্রতাপগড় এলাকার গরিব ঠেলা চালক গৌতম দাসের দুর্গত মানুষদের মাঝে ত্রাণ বন্টনের কথা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কাছে তুলে ধরেন, প্রদেশ বিজেপির সভাপতি ডা: মানিক সাহা৷ এর পর প্রধানমন্ত্রীর ’মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে তার কথা তুলে ধরায় খুশি সবাই৷

