ঝড় বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড ত্রিপুরা, বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ, ক্ষয়ক্ষতি প্রচুর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ মে৷৷ করোনা প্রকোপের মাঝেই প্রকৃতির তাণ্ডব অব্যাহত৷ আজ সকালে ভারী বর্ষণে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত রিপোর্টে খবর, পশ্চিম ত্রিপুরা, দক্ষিণ ত্রিপুরা এবং সিপাহিজলা জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ তবে, অন্যান্য জেলায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হচ্ছে৷ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে৷ এদিকে, সারা ত্রিপুরায় কমলপুরে সবচেয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে৷ এদিন ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাতে সারা রাজ্যে ৩৬টি গ্রাম প্রভাবিত হয়েছে৷ এছাড়া ২০৩টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ৪৫টি বাড়ি মরাত্মকভাবে এবং ১৫৫টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ঝড়ে গোমতী জেলার অম্পিতে গাছ পড়ে এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন৷


আবহাওয়া দফতর আগেই জানিয়েছিল, ২৭ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে৷ সে মোতাবেক আজ ভোররাত থেকেই ভারী বর্ষণ শুরু হয়ে যায়৷ বিমানবন্দরে অবস্থিত আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ত্রিপুরার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, কমলপুর ও পানিসাগরে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ তবে অন্যান্য স্থানেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম নয়৷ প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, কমলপুরে ১২১.৬ এমএম, পানিসাগরে ১১১.৪ এমএম, লেম্বুছড়ায় ৮৫.৫ এমএম, আগরতলায় ৭৯.৮ এমএম, সোনামুড়ায় ৭৫.৬ এমএম, কাঞ্চনপুরে ৭৫.৬ এমএম, বিশালগড়ে ৭০.২ এমএম, বগাফায় ৬৭.৪ এমএম, খোয়াইয়ে ৫৪.৪ এমএম, উদয়পুরে ৫৩.৬ এমএম, কৈলাসহরে ৫২.৪ এমএম, এডিনগরে ৪৪.৩ এমএম, অমরপুরে ৪০.৩ এমএম এবং বিলোনিয়ায় ২১.৪ এমএম বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ এদিকে, আজ ভোরে প্রায় ১৩০ কিমি বেগে ঝড় বয়ে গিয়েছে৷


রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের রিপোর্টে জানা গেছে, আজ ঝড়-বৃষ্টিতে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার সদর মহকুমার পুরনিগম এলাকায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ পুর এলাকার বিভিন্ন স্থানে গাছ ভেঙে পড়েছে৷ তাতে বিদ্যুৎ পরিষেবা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ বিদ্যুতের তার ছিড়ে পড়ার পাশাপাশি এডিনগরে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় সমগ্র এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে৷ গাছ ভেঙে পড়ায় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ধলেশ্বর রোড নম্বর ১ এবং রামনগর রোড নম্বর ৪-এ গাছ ভেঙে পড় যাতায়াত পুরো স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় গাছ সারানোর কাজ চলছে৷
এদিকে, গাছ পড়ে পুলিশ সদর কার্যালয়ের দেওয়াল ভেঙে গেছে৷ জিরানিয়ায় ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে অসম-আগরতলা জাতীয় সড়কে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় জাতীয় সড়ক থেকে গাছ সরানো হয়েছে৷


এদিন ঝড়-বৃষ্টিতে জিরানীয়ায় ৪২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ সাথে ৪৯টি বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ মোহনপুর মহকুমায় হেজামারায় গাছ পড়ে মোহনপুর-সিমনা রোড অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল৷ প্রশাসনের উদ্যোগে ওই গাছ সরানো হয়েছে৷ হেজামারায় ১১টি পরিবার বাড়িঘর সহ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে৷ এদিকে, ধলাই জেলার দুর্গচৌমুহনীতে দুটি গ্রাম ও চৌদ্দটি পরিবার বাড়িঘর সমেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ একইভাবে সালেমাতে পাঁচটি গ্রাম ও ৫০টি পরিবার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে৷ ওই জেলায় লংতরাইভ্যালীর মনুতে দুটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এছাড়া আমবাসায় একটি গ্রাম ও একটি পরিবার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে৷ এদিন, ঝড়ে খোয়াই জেলায় পুর পরিষদ এলাকায় একটি গ্রাম ও পাঁচটি পরিবার, পদ্মবিলে দুইটি গ্রাম ও তিনটি পরিবার এবং তুলাশিখরে একটি গ্রাম ও চারটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ঊনকোটি জেলায় কুমারঘাটে একটি বাড়ি ভূমিধসে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তেমনি দক্ষিণ জেলায় বিলোনীয়া মহকুমায় ঋষ্যমুখে একটি গ্রাম ও একটি পরিবার এবং রাজনগরে দুইটি গ্রাম ও দুটি পরিবার ও সাব্রুমে চারটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷


গোমতী জেলার উদয়পুরে কিল্লায় একটি গ্রাম ও তিনটি পরিবার, মাতাবাড়ি এলাকায় দুটি গ্রাম ও চারটি পরিবার, অমরপুরের দুটি গ্রাম ও ছয়টি পরিবার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে৷ ওই জেলায় অম্পিতে গাছ ভেঙে পড়ে এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন৷ এছাড়া হরিপুর এসবি সুকল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ বিদ্যুতের খঁুটি এবং একটি বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তেমনি করবুকে বিদ্যুতের আটটি খঁুটি ভেঙে পড়েছে৷ এদিনের ঝড়ে সিপাহীজলা জেলাতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ ওই জেলায় সোনামুড়া মহকুমার বক্সনগরে তিনটি গ্রাম ও সাতটি পরিবার, কাঁঠালিয়ায় দুটি গ্রাম ও পাঁচটি পরিবার, মোহনভোগে একটি গ্রাম ও তিনটি পরিবার, নলছড়ে একটি গ্রাম ও সাতটি পরিবার এবং জম্পুইজেলায় সবচেয়ে অধিক নয়টি গ্রাম ও পয়ত্রিশটি পরিবারের সাথে রাবার বাগান এবং বিদ্যুতের খঁুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷