গুয়াহাটি, ৮ মে (হি.স.) : ‘আপনারা আপনাদের বাড়ি আসুন, কিন্তু করোনা নিয়ে আসবেন না। অসমের পরিস্থিতি ভয়বহের দিকে যাচ্ছে। তাই অসমকে রক্ষা করার তাগিদে যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন।’ করজোড়ে বহিঃরাজ্যে আটক অসমবাসীদের প্রতি এই আবেদন রেখেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। শুক্রবার সরুসজাইয়ে নির্মিত অস্থায়ী কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের দফতরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যে করোনা-আক্রান্ত এবং এ সম্পর্কীয় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের নানা তথ্য দিয়েছেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, ভারতের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত অসমের শিক্ষাৰ্থী, কর্মসূত্রে এবং চিকিৎসারত অসমের বাসিন্দাদের নিজের রাজ্যে ফিরে আসতে বাধা দেওয়ার কোনও নৈতিক ও আইনি অধিকার সরকারের নেই। তবে পরিস্থিতি ও পরিবেশের সঙ্গে সাহসকে সম্বল করে আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে এর মোকাবিলা করতে হবে। তাই তাঁর আবেদন, যে যেখানে আছেন সেখানেই নিরাপদে থাকুন। কেননা কারোর সঙ্গে করোনা ভাইরাস আসছে কিনা তা কেউ জানে না। এজন্যই তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি বিনিত অনুরোধ জানাচ্ছেন, রাজ্যকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে সহায় করুন। যদি মাতৃভূমিতে আসেন তা হলে সরকারি নিয়মাবলি মেনে চলতে হবে। ওড়িশা সরকারের উদাহরণ দিয়ে মন্ত্ৰী বলেন, ওই সরকারও রাজ্যের স্বার্থে ওড়িশাবাসীকে বাইরে থাকার আহ্বান জানিয়েছিল।
আক্ষেপ করে মন্ত্রী ড. শর্মা বলেন, গুয়াহাটি মহানগরীতে ব্যাপক হারে লকডাউন লঙ্ঘন হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। একাংশ মালিকপক্ষ বেপরোয়াভাবে দোকানপাট খুলে বসেছেন। বাইকে দুজনের বেশি আরোহী যাতায়াত করছেন। প্ৰয়োজনে তো বটেই, অপ্ৰয়োজনেও অনেকে নিজেদের ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছেন। বহু অভিভাবক তাঁদের সন্তানসন্ততিকে নিয়ে বেড়াচ্ছেন। এভাবে যদি শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন, তা হলে সরকারের কোনও পদক্ষেপই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। তাই তাঁদের প্রতিও তাঁর বিনম্র অনুরোধে, শিশুদের ঘর থেকে বের করে আনবেন না। একই অনুরোধ বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতিও। তিনি বলেন, শিশুটি কেবল সংশ্লিষ্ট অভিভাবকের সম্পদ নয়, দেশেরও, তারা দেশের ভবিষ্যত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজও তিনি জনতাকে উসকে দিয়ে বলেছেন, শিশুদের নিয়ে কোনও অভিভাবক কিংবা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে রাস্তায় বা পাড়ায় ঘরের বাইরে দেখলে তাঁদের প্ৰশ্ন করুন। প্রতিবাদ করে তাদের ঘরে পাঠান।
অন্য প্রসঙ্গে বলেন, গুয়াহাটিতে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও আপাতত গ্ৰিন জোনেও থাকবে মহানগর। গুয়াহাটিতে আরও অদৃশ্য করোনা-আক্রান্ত রয়েছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। বলেন, কেন্দ্ৰীয় সরকারের নিৰ্দেশনা পেলেই বদলে যাবে গুয়াহাটির জোন। গতকাল বৃহস্পতিবার করোনায় আক্ৰান্ত অসমের চার রোগীর মধ্যে একজন ছাড়া বাকিদের কোনও ট্ৰ্যাভেল হিস্ট্রি নেই। দেবরাজ আচাৰ্য নামের আক্রান্ত ব্যক্তি শিলিগুড়ি থেকে অসমে এসেছিলেন। বাকিরা গুয়াহাটিতে থেকেই করোনায় আক্ৰান্ত হয়েছেন। যদি গুয়াহাটির কোনও নাগরিকের কাশি বা জ্বর হয় তা হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব।
মন্ত্রী জানান, গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক ডাক্তার করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। তাই আগামী তিন দিন গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বন্ধ থাকবে। কোনও নতুন রোগী ভরতি করা হবে না, মন্ত্ৰী শৰ্মা জানান।
কাছাড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, কাছাড়ে যে পাঁচ (সাংবাদিক সম্মেলনের পর বেড়ে হয়েছে আট) রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে তাদের সকলেই আজমির শরিফের সঙ্গে জড়িত। সাহাব উদ্দিন আহমেদ নামের ৪৬ তম করোনা রোগীর জ্বরের উপসর্গ অন্য রোগীদের চেয়ে বেশি। চার রোগীকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। কাছাড়ের বেশ কয়েকটি এলাকাকে কন্টেইনমেন্ট জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দেড় শতাধিক আজমির শরিফিকে কোয়ারেন্টইন করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।