নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ মে৷৷ রাজ্যে একদিনে ১২জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে৷ সকলেই ধলাই জেলা সদর আমবাসায় জওহরনগরস্থিত বিএসএফের ১৩৮ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের জওয়ান৷ ওই ব্যাটেলিয়ানেরই দুই জওয়ানের গতকাল কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজেটিভ এসেছিল৷ ২৪ ঘন্টার মধ্য আরও ১২ জনের করোনা সংক্রমণের রিপোর্টে সারা রাজ্যেই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে৷ বিশেষ করে ধলাই জেলা মারাত্মক আতঙ্কে ভুগছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব রাজ্যবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন৷ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মাঠে নেমে পড়েছে বলে তিনি রাজ্যবাসীকে আশ্বস্থ করেছেন৷
ইতিপূর্বে রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত দুই রোগী সুস্থ হয়েছেন৷ ত্রিপুরা করোনা মুক্ত রাজ্য হিসেবে সারা দেশে প্রশংসিত হয়েছিল৷ কিন্তু, গতকাল থেকে আবারও করোনার কালো মেঘ রাজ্যে দেখা দিয়েছে৷ গতকাল করোনা আক্রান্ত দুই রোগীর সন্ধান মিলতেই ধলাই জেলা কার্য্যত শুনশান হয়ে পড়েছিল৷ আজ আরও ১২ জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়ার ঘটনায় রাজ্যবাসীকে ভীষণ চিন্তায় ফেলেছে৷
স্বাস্থ্য সচিব তথা অতিরিক্ত মুখ্য সচিব এস কে রাকেশ জানিয়েছেন, গতকালের করোনা আক্রান্ত দুই বিএসএফ জওয়ানের সংস্পর্শে যারা রয়েছেন তাদের অধিকাংশকেই খোঁজে বের করা হয়েছে৷ ইতিমধ্যে কুলাই এবং গন্ডাছড়া মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশজনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে৷ বিএসএফের পক্ষ থেকে ওই দুই জওয়ানের সংস্পর্শে ছিলেন এমন ২৬ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে৷ তাদের সকলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে৷
কিন্তু, সন্ধ্যার পর ১২ জন বিএসএফ জওয়ান কোভিড-১৯ পজেটিভ হিসেবে রিপোর্ট এসেছে৷ এই বিষয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারীকের কথায় ওই ১২ জনের করোনা আক্রান্তের কোনও লক্ষণ ছিল না৷ তারা ছুটি থেকে রাজ্যে ফেরার পর কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা অতিক্রম করেছে৷ তিনি বলেন, গতকাল ওই দুই জওয়ানের রিপোর্ট পজেটিভ আসার আগেই তাদের সংস্পর্শে থাকা উচ্চ ঝুকিপূর্ণ চৌত্রিশ জনকে চিহ্ণিত করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে৷ আজ ভোরে তাদের নমুনা জিবি হাসপাতালের ল্যাবে পৌঁছেছে৷ তার দাবি, ওই নমুনাগুলি দুইবার পরীক্ষা করা হয়েছে৷ তাতে ১২ জনের দুইবারই পরীক্ষায় কোভিড -১৯ পজেটিভ এসেছে৷
তিনি বলেন, বিএসএফ জওয়ানদের করোনা আক্রান্তের কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে৷ লক্ষণহীন হওয়ায় তারা কীভাবে আক্রান্ত হতে পারেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ এখনও পর্যন্ত বিএসএফ জওয়ানদের শতাধিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে৷
এদিকে, আজ স্বাস্থ্য দপ্তরের দুই অধিকর্তার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কুলাই ও গন্ডাছড়া সফর করেছেন৷ ট্রিটমেন্ট প্রটোকল সম্পর্কে ওই দুই হাসপাতালকে অবগত করানো হয়েছে৷ পাশাপাশি ১২ জন বিএসএফ জওয়ান করোনা আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই গন্ডাছড়ার দুর্গাপুরস্থিত ক্যাম্প কোভিড-১৯ এপিসেন্টার হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে৷ এই ক্যাম্পের তিন কিলোমিটার এলাকা করোনা অতি স্পর্শকাতর জোন হিসেবে বিবেচনা করা হবে৷ তাতে গন্ডাছড়া বাজার, নারায়ণপুর, তেত্রিশ কেভি এবং গন্ডাছড়া কলেজ এলাকা এর আওতায় আসবে৷ সম্পূর্ণ তালিকা আগামীকাল ঘোষণা দেওয়া হবে৷ ওই এলাকায় সমস্ত অফিস, ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস বন্ধ থাকবে৷ শুধুমাত্র জরুরী পরিষেবার সাথে যুক্ত ক্ষেত্রগুলি ছাড় পাবে৷ এদিকে, জওহরনগর বিএসএফ ক্যাম্প এবং কুলাই হাসপাতাল এলাকাও করোনা অতি স্পর্শকাতর হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, বিএসএফ জওয়ানরা কীভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সেই কারণ খঁুজে বের করা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ পাশাপাশি তাদের সংস্পর্শে কারা এসেছেন তাও খুঁজে বের করতে হবে৷ তবে, আক্রান্ত হওয়ার কারণ অনুসন্ধান না হওয়া পর্য্যন্ত এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে বিএসএফকেও দায়িত্ব নিতে হবে বলেই মনে করা হচ্ছে৷ বিএসএফের প্রথম জওয়ান করিনা বিওপিতে কাজে যোগ দেওয়ার পরই করোনা আক্রান্তের লক্ষণ দেখা দিয়েছিল৷ তিনি, গত ১১ মার্চ ছুটি কাটিয়ে ত্রিপুরায় ফিরেছিলেন৷ এখানে প্রশ্ণ উঠা খুবই স্বাভাবিক দীর্ঘ সময় করোনার সাথে যুদ্ধ করা কীভাবে সম্ভব হয়েছে৷ কারণ, বহিঃরাজ্য থেকে সংক্রমিত হয়ে ত্রিপুরায় আসার ক্ষেত্রে ওই জওয়ানকে মাসাধিক কাল করোনার সাথে লড়াই করতে হয়েছে৷ এরপরই লক্ষণ দেখা দিয়েছে৷ কিন্তু, এই তত্ব মেনে নেওয়াটা অনেকটাই অসম্ভব বলে মনে করছেন চিকিৎসক মহল৷