BRAKING NEWS

দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর : লকডউনে তলানিতে শহরের দূষণ

কলকাতা, ১৭ এপ্রিল (হি. স.) : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ স্বপ্ন দেখেছিলেন দূষণমুক্ত এক পরিবেশের। ‘চৈতালি’-তে লিখেছিলেন, “দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,/ লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নবসভ্যতা!“ এতদিনে বুঝি সত্য হয়ে ফুটে উঠল তাঁর স্বপ্ন। লকডাউনে এক ঝটকায় নেমে গিয়েছে দূষণের মাত্রা।

কলকাতা তো বটেই, দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাইতেও ছবিটা একই রকম। ‘পরিবেশ অ্যাকাডেমী’-র সভাপতি তথা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অন্যতম প্রাক্তন কর্তা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে এ কথা জানিয়ে বললেন, “এক সময় শব্দের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে আমরা ‘সাইলেন্স জোন’ তৈরির দাবি তুলেছিলাম। হাসপাতাল, হাইকোর্ট, স্কুলের আশপাশে ফলক বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই সব জায়গায় শব্দের তীব্রতার মাত্রা ৪০ ডেসিবেলে বেধে দেওয়া হয়েছিল। অধিকাংশ স্থানেই সেই মাত্রা ছাড়িয়ে যেত। এখন গোটা শহরই কার্যত ‘সাইলেন্স জোন’।

একই মন্তব্য বিশিষ্ট পরিবেশ-প্রযুক্তিবিদ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষের। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, “শহরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ব্যস্ত সময়ে শব্দের মাত্রা ৮০-১০০ ডেসিবেল হত। এখন তা নেমে এসেছে ৩০ ডেসিবেলে। আগের চেয়ে ডাস্ট পলিউশন  কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কারখানার চিমনি, গাড়ির ধোঁয়া প্রভৃতি অর্থাৎ কার্বন ডাই অক্সাইডের মত ‘গ্রিনহাউস গ্যাস’-এর জন্য নানা রকম অসুখ হয়। এই লকডাউনে তা কমেছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৯০ শতাংশ।“

কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন অতিরিক্ত কমিশনার সন্ধি মুখোপাধ্যায় দীর্ঘদিন শহরের ট্রাফিকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি জানান, ‘পিএম টু পয়েন্ট ফাইভ’ কথাটা পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য উভয় ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ‘পিএম’ হল পার্টিকুলেট ম্যাটার। আর, ‘টু পয়েন্ট ফাইভ’ শ্বাসবাহিত টুকরো ধুলিকণার পরিমাপ। এটির একক মাইক্রোমিটার। এই কণা নিঃশ্বাসের সঙ্গে বেশি মাত্রায় ফুসফুসে চলে গেলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।

সন্ধিবাবু ডিসি (ট্রাফিক) ছিলেন ১৯৮৯-’৯২। তিনি বলেন, “ওই সময় বনানী কাক্কার ‘পাবলিক’ নামে একি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে কিছু স্কুলের ছেলেমেয়েকে নিয়ে ক্রমান্বয়ে শব্দ ও পরিবেশ দূষণের ব্যাপারে শিবির করেন। প্রকাশ্যে রাস্তয় নেমে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড-সহ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেন। এর পর নানা সময়ে কিছু মানুষ ও গোষ্ঠী এই ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছেন। অন্যথায় পরিস্থিতি আরও নেতিবাচক হত।

প্রযুক্তি-পরিবেশবিদ সোমেন্দ্রমোহনবাবুর অন্যতম হবি সারাদিন মাঝে মাঝে দূষণের পরিমাপ দেখেন। এই প্রতিবেদককে তিনি জানালেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি  কলকাতায় ‘পিএম টু পয়েন্ট ফাইভ’ ছিল ১৩৫ এমজি। শুক্রবার তা কমে হয়েছে ৪৫ এমজি। অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ। এ শহরে পরিমাপযন্ত্রটি আছে ফোর্ট উইলিয়ামে। দেশের অন্য তিন বড় শহরের ছবিটা কেমন? সৌমেন্দ্রবাবুর এই সময়ে চেন্না, মুম্বাই এবং দিল্লিতে হিসেবটি হল যথাক্রমে ১৫, ২৩ এবং ১৫৩। অর্থাৎ, এদিক থেকে দিল্লির চেয়ে দেশের অন্য তিন বড় শহর অনেকটাই আশাব্যঞ্জক স্থানে।

কবি বলেছিলেন, “হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,/ দাও সেই তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি,”। তপোবন আর ফিরে পাওয়া যাবে না। কিন্তু লকডাউনের পর আমরা কি সম্মিলিতভাবে দূষণের মাত্রা টেনে নামিয়ে রাখতে পারব?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *