গুয়াহাটি, ২ এপ্রিল (হি.স.) : মহামারি কোভিড-১৯ নোভেল করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করলেও এই কয়দিন মোটামুটি ভালোই ছিল উত্তর-পূৰ্বাঞ্চল। ভাবা হয়েছিল, এই মহামারির থাবা থেকে কোনও রকম রক্ষা পেয়ে যাবে উত্তরপূর্ব। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। দিল্লির হজরত নিজামউদ্দিন মরকজে তবলিগ-ই জামাতের ঘটনায় অসম-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি এর গ্রাস থেকে রেহাই পায়নি। নিজামউদ্দিনে জামাতে অংশগ্রহণ করে এতদঞ্চলের বহু মানুষ করোনা ভাইরাস বহন করে নিয়ে এসেছেন। গত ৩১ মার্চ অসমে প্রথম করোনা-আক্রান্তের খবর পাওয়ার পর গতকাল একদিনে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬-য়। এই সংখ্যা আজ রাতের দিকে আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন অসমের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। ইত্যবসরে অরুণাচল প্রদেশ এবং মণিপুরেও নিজামউদ্দিন-ফেরত দুই ব্যক্তির শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই খবরে রীতিমতো ঘুম উবে গেছে উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলবাসীর। কীভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে গভীর চিন্তায় পড়েছে কেন্দ্ৰ ও উত্তরপূর্বের রাজ্য সরকারগুলি।
প্রসঙ্গত, নিজামউদ্দিনের মরকজে তবলিগ-ই জামাতে যোগদান ও সেখান থেকে সন্দেহজনক সংক্ৰমিত তালিকায় এই খবর লেখা পর্যন্ত গোটা দেশে রয়েছে প্রায় ৭,৬০০ জন। এদের খুঁজে বের করা এবং পরীক্ষা করা রীতিমতো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্ৰ ও রাজ্য সরকারগুলির কাছে। কেউই স্বেচ্ছায় এসে নিজের নিজের এলাকায় হাসপাসাতালে নিজামউদ্দিনের যাওয়ার ঘটনার তথ্য প্রকাশ না করায় করোনা সংক্রমণের সংখ্যা আরও দ্রুতগতিতে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় এ মুহর্তে জনসাধারণকে আরও বেশি করে সতর্কতা অবলম্বন করতে সব রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এমন-কি মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা ভিডিও-বার্তায় কাতর অনুরোধ জানাচ্ছেন।
অরুণাচল প্ৰদেশে এই প্ৰথম মরকজ জামাত ফেরত এক ব্যক্তির শরীরে মারণ সংক্রমণ কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়েছে। মণিপুরেও একজনের শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। ওই ব্যক্তিও দিল্লির নিজামউদ্দিন ফেরত। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্ৰী নংথমবাম বীরেন সিং টুইট করে এই খবর দিয়েছেন। এখন পৰ্যন্ত মণিপুরে করোনা আক্ৰান্তের সংখ্যা ২-এ দাঁড়াল। তবে তাঁদের মধ্যে একজন ২৩ বছর বয়সি মেডিক্যাল-গবেষক জনৈক যুবতী রয়েছেন। তিনি লন্ডন-ফেরত। ২৪ মার্চ তাঁর শরীরে কোভিড-১৯ পজিটিভ বলে ধরা পড়েছিল। এদিকে মুখ্যমন্ত্ৰী বীরেন সিং জানান, ওই ব্যক্তির সঙ্গে আরও যারা নিজামউদ্দিনে ধৰ্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তাদেরও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। জানা গেছে, মণিপুর থেকে ১০ জন নিজামউদ্দিনে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৮ জনের টেস্ট রিপোৰ্ট নেগেটিভ এসেছে। বাকি ২ জনের মধ্যে একজন পজিটিভ এবং একজনের রিপোৰ্ট এখনও আসেনি।
এদিকে অরুণাচল প্রদেশের তেজুতে যার শরীরে করোনা ভাইরাস পজিটিভ ধরা পড়েছে, তিনি গত ১৬ মাৰ্চ নিজামউদ্দিনের তবলিগ-ই জামাতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর শরীরে করোনার উপস্থিতির কথা লাহোয়ালের আইসিএমআর পরীক্ষাগারে নিশ্চিত হয়েছে। তাঁর শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়লে লোহিত জেলা প্ৰশাসন গত ২৪ মাৰ্চ থেকে তাঁকে কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে। শুধু ওই ব্যক্তিই নয় তবলিগ-ই জামাতে যাঁরাই যোগ দিয়েছেন তাদের সকলকেই মাৰ্চের শেষের দিক থেকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্ৰী পেমা খান্ডু জানিয়েছেন কোভিড-১৯-এ আক্ৰান্তদের জন্য ৩০০ বিছানা যুক্ত হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে সব জেলায় পরিকাঠামো উন্নত সেখানে ভেন্টিলেটর দেওয়া হবে। উন্নতমানের পিপিই এক দু-দিনের মধ্যে সেখানে পৌঁছে যাবে। করোনা ঠেকাতে সিনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে পরামৰ্শ চলছে। পাসিঘাট সমেত গোটা অরুণাচল প্ৰদেশবাসীর জন্য কম পক্ষে ৫০টি ভেন্টিলেটারের ব্যবস্থা করা হবে। এর পর যেখান থেকে যেমন চাহিদা আসবে ব্যবস্থা করা হবে। এখন পৰ্যন্ত ৫৮ জনের লালা ও রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩৩ জনের নেগেটিভ এসেছে। বাকি ২৫ জনের পরীক্ষা চলছে। শুক্ৰবারের মধ্যে এঁদের রিপোর্ট চলে আসবে বলে ধারণা মুখ্যমন্ত্রীর। বিভিন্ন জেলা প্ৰশাসনকেও করোনা ভাইরাস ঠেকাতে যাবতীয় প্ৰস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। ডেপুটি কমিশনার, ডিএমওদের সঙ্গে কথা বলে নিজামউদ্দিন-ফেরতদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
প্ৰসঙ্গত, অসমে এখন পৰ্যন্ত ১৬ জন এই ভাইরাসে আক্ৰান্ত হয়েছেন। এঁরা সকলেই তবলিগ-ই জামাত ফেরত। আরও চারজন দিল্লিতে চিকিৎসাধীন। বৃহস্পতিবার সকাল পৰ্যন্ত প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী অসম, অরুণাচল প্ৰদেশ, মণিপুর এবং মিজোরামের একজনকে নিয়ে মোট ২০ জন আক্ৰান্তের খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৮ জনই দিল্লির নিজামউদ্দিন মরকজের তবলিগ-ই জামাত-ফেরত।