নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ মার্চ৷৷ নারীর সমানাধিকারের জন্য সারা পৃথিবীতে এবং আমাদের দেশেও বিভিন্ন আন্দোলন হয়েছে৷ তাতে অনেকটা সাফল্যও এসেছে৷ তবে মহিলাদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করতে হবে৷ তাদের স্বরোজগারি করতে হবে৷ আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত আলোচনা সভার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷ এবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আলোচনার মূল ভাবনা ছিল ’আই এম জেনারেশন ইকুয়ালিটি, রিয়েলাইজিং ওমেনস রাইট’৷
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, বছরের প্রতিটি দিনই যদি আমরা নারীর সমতার বিষয়ে সমাজকে অনুভব করাতে পারি তবেই তাদের সমতা আসবে৷ এই সমতা একদিনে আসবেনা৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমাজে এখনো পণ প্রথা লুকিয়ে আছে৷ তবে তা অন্য রূপে৷ দেখা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই মেয়ের বিয়েতে না চাইতেও দামী দামী জিনিসপত্র দেওয়া হচ্ছে৷ এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে৷ তিনি বলেন, নারীকে স্বাবলম্বী করতে, স্বনির্ভর করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করছে৷ সমাজকল্যাণ, স্বাস্থ্য দপ্তর সহ বিভিন্ন দপ্তর এসব প্রকল্প রূপায়ণ করছে৷ এসব প্রকল্প বিষয়ে আরও সচেতনতা প্রয়োজন৷ এজন্য মহিলা ভলান্টিয়ার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়িকর্মী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন কাজ করছে৷ এসব কিছুর পরও সমানাধিকারের জন্য মহিলাদের আর্থিক সমতাই মুখ্য বিষয়৷ তিনি বলেন, আমাদের রাজ্য ছোট হলেও এখানে প্রায় ২৪ হাজার স্বসহায়ক দল রয়েছে৷
এরমধ্যে বেশীরভাগই মহিলা দ্বারা পরিচালিত৷ তিনি বলেন, তাদের স্বয়ংসম্পর্ণ করার জন্য আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে৷মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন কিছু শুরু করার আগে বেশী ভাবলে হবেনা৷ কাজ শুরু করতে হবে৷ সামনে বাঁধা এলে তা মোকাবিলা করতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে মহারাণী তুলসীবতী, কা’নপ্রভা দেবী, সরোজিনী নাইডু প্রভ’তি ব্যক্তিত্বের কথা তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, সমাজের সবক্ষেত্রে মহিলাদের এগিয়ে আসতে হবে৷ মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে যে আমি এই কাজটি করতে পারবই৷ আপনারা যে দায়িত্ব পেয়েছেন তা সঠিকভাবে পালন করতে হবে৷ আমরা চাই আমাদের রাজ্যেও সরোজিনী নাইডু, ঝাঁসির রাণী, মতঙ্গিনী হাজরার মতো ব্যক্তিত্ব তৈরী হোক৷
অনুষ্ঠানের সভাপতি সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী সান্তনা চাকমা বলেন, সারা রাজ্যেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করা হচ্ছে৷ মহিলাদের অধিকার রক্ষায় তাদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তর কাজ করছে৷ এ বিষয়ে তিনি নারী কল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে সবার সহযোগিতা কামনা করেন৷ আলোচনায় পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা সরকার দেব বলেন, বর্তমান সরকার মহিলাদের কল্যাণে, তাদের যোগ্য সম্মান দেওয়ার জন্য কাজ করছে৷
ত্রিপুরা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বর্ণালী গোস্বামী বলেন, নারী পুরুষ উভয়ে মিলেই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷ সমাজের প্রতিটি কাজে অংশ নিতে হবে৷ আলোচনায় অংশ নিয়ে ত্রিপুরা শিশু সুুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন নীলিমা ঘোষ বলেন, রাজ্যে যেন কেউ নারীদের উপর নির্যাতন না করে তা প্রতি’া করতে হবে৷ এবছর নারী দিবসের মূল ভাবনার উপর আলোচনা করেন ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন ড. চন্দ্রিকা বসুু মজমদার৷
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবী পাপিয়া দত্ত৷ সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব দীপা ডি নায়ার৷ মে’ ছিলেন আয়োজক দপ্তরের অধিকর্তা গু’া সনোবার৷ মে’ রাজ্যভিত্তিক ক্যুইজ ও শ্লোগান প্রতিযোগিতায় বিজয়িদের পুরস্ক’ত করা হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিগণ তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন৷ অনুষ্ঠানের শুরুতে সঙ্গীত পরিবেশন করে শচীন দেববর্মণ সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা৷