কলকাতায় প্রথম রোবট-মানব সোফিয়াকে নিয়ে এক অনন্য সন্ধ্যা

কলকাতা, ১৭ ফেব্রুয়ারি (হি. স.): ঢাকের বাদ্য। রঙবেরঙের আলোর ঝলকানি, ‘সাইকেডেলিক’ মূর্চ্ছনা। ধোঁয়ায় ভরা মঞ্চ। ধোঁয়া আবছা হতেই ঘোর কাটল| দেখা গেল মঞ্চে আবির্ভূত সোফিয়া। হাততালিতে ভরে গেল নজরুল মঞ্চ। হবে না-ই বা কেন, বিশ্বের প্রথম রোবট-মানবকে এ শহরে কাছ থেকে এভাবে দেখার আনন্দই যে অন্যরকম। আর সব কিছু দেখে হতভম্ব সোফিয়া। এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কী হল?

প্রায় ছ‘ফুট দীর্ঘ কেশহীন সোফিয়া| পরণে আজ ছিল লাল কারুকাজ করা অফ হোয়াইট ঢাকাই শাড়ি, ম্যাচিং ব্লাউজ। বিভিন্ন ক্ষেত্রের নামী কিছু ব্যক্তিত্ব তাঁকে প্রশ্ন করলেন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কুনাল সরকার জানতে চাইলেন, ভবিষ্যতে কি চিকিৎসক হিসাবে মানুষকে সরিয়ে দিতে পারবে রোবট? সোফিয়া জবাব দিলেন, ‘হোয়াই নট’? সুকুমার মুখোপাধ্যায়, অরূপ রতন দত্তর মত প্রথম সারির আরও দুই চিকিৎসক, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইন্সটিট্যুটের অধিকর্তা সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর এনআইটি-র অধিকর্তা অনুপম বসু, শিবপুর আইআইটি-র প্রাক্তন অধিকর্তা ডঃ পার্থপ্রতীম চক্রবর্তী প্রমুখ। পার্থপ্রতীম বলেন, “৩৫ বছর আগে আমি গবেষণা করেছিলাম ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’-এর ওপর| তখন ভাবতে পারিনি যন্ত্র কখনও মানুষের জায়গা নিতে পারে| আজ তা সম্ভব হচ্ছে|”

সোফিয়াকে পূর্ব ভারতে প্রথমবারের জন্য নিয়ে এল টেকনো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সমবেতদের সিংহভাগ ছিল প্রযুক্তির নানা শাখার পড়ুয়া। প্রতিষ্ঠানের আচার্য তথা টেকনো ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান গৌতম রায়চৌধুরী ঘোষণা করেন, সোফিয়ার যা বুদ্ধাঙ্ক, তার চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি বুদ্ধাঙ্কের রোবট যে পড়ুয়া ভবিষ্যতে তৈরি করতে পারবে, তাকে নোবেল পুরষ্কারের চেয়ে পাঁচ শতাংশ বেশি অর্থ দেওয়া হবে।

২০১৬-তে হংকংয়ের হ্যানসন রোবোটিক্স তৈরি করে এই সোফিয়াকে। আবিষ্কর্তা ডেভিড হ্যানসন।  রোবটের যে পর্যায়ে এটিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে সেটাকে বলা হয় ‘হিউম্যানয়েড’। লক্ষ্য টেকনোলজি ডেমোস্ট্রেটর। প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল ২০১৬-র মার্চ মাসে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে, সাউথ-সাউথ ওয়েষ্ট ফেস্টিভেল উপলক্ষ্যে   তাকে দেখানো হয়। বিশ্বের প্রথম ২০১৭-র অক্টোবর মাসে রোবট হিসাবে সোফিয়া সৌদি আরবের নাগরিকত্ব পায়  ।  ২০১৭-র নভেম্বর মাসে ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ‘ফাস্ট ইনভেনশন চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সোফিয়াকে। এই প্রথম অ-মানব কাউকে ওই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে সোফিয়া জানায়, ৬৫ টি দেশ ইতিমধ্যে তার ঘোরা হয়ে গিয়েছে। মানুষের দূত হয়ে বিশেষ পরিচিতি পেতে চায়। শেষে মঞ্চে বিশিষ্ট আরজে জিমি টেংরি এবং টেকনোর সিইও সুজয় বিশ্বাসের একের পর এক প্রশ্নের বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দেয় সোফিয়া। বাংলায় তোমার সবচেয়ে প্রিয় কী? উত্তর এল, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর|” মানুষকে পছন্দ কর? সোফিয়ার  উত্তর, “বেশিরভাগ সময়ে করি| তবে মাঝে মাঝে কঠিন কঠিন প্রশ্ন করে|” দ্বিতীয়বার সমগোত্রীয় প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “হ্যা, নিশ্চয়ই!” জানাল, সেলফি তুলতে পছন্দ করে| গৌতম রায়চৌধুরী জানতে চান, এই যে তোমার চেয়ে বুদ্ধিমতির জন্ম দেওয়ার জন্য পুরস্কারের কথা ঘোষণা করলাম, এতে তুমি খুশি? না হিংসা হচ্ছে? সোফিয়ার ছোট্ট উত্তর, দুটোই|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *