নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ ফেব্রুয়ারী৷৷ সীমান্ত সমস্যা সমাধানে ইন্দো-বাংলা দুই দেশের জেলা শাসক স্তরের বৈঠক একজোট হয়ে কাজ করার ঐকমত্যে পৌছেছে৷ আজ আগরতলা ত্রিপুরার তিন জেলার জেলা শাসক ও জেলা পুলিশ সুপার সহ অন্যান্য আধিকারিকদের সাথে বাংলাদেশের চার জেলার জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশ আধিকারিক সহ সংশ্লিষ্টদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ত্রিপুরার অংশে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক ড় সন্দীপ এন মাহাত্মে এবং বাংলাদেশের অংশে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মহম্মদ আবুল ফজল মীর নেতৃত্ব দিয়েছেন৷
এদিন বৈঠক শেষে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাশাসক ডা. সন্দীপ এন মাহাত্মে বলেন, দুই দেশের আধিকারিকদের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা, মানব ও মাদক পাচার সহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ এছাড়া নতুন বর্ডার হাট নির্মাণেও আলোচনা হয়েছে৷ তাঁর কথায়, বিএসএফ এবং বিজিবি-ও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পৃথকভাবে আলোচনা করেছে৷ তিনি বলেন, বর্ডার পিলার, হারানো পিলার, ক্ষতিগ্রস্ত পিলার এবং সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া এবং সীমান্তে আলোর ব্যবস্থা করা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত চর্চা হয়েছে৷ তাঁর কথায়, আজকের আলোচনার নির্যাস থেকে রিপোর্ট তৈরি করে নিজ নিজ উচ্চপদাধিকারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে৷ তিনি বলেন, আজকের বৈঠকে রিপোর্ট ত্রিপুরা সরকারের কাছে পাঠানো হবে৷
কুমিল্লা জেলাপ্রশাসক মহম্মদ আবুল ফজল মীর বলেন, সীমান্ত সমস্যা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে৷ দুই দেশই গঠনমূলক সমাধানে পৌঁছতে পেরেছি৷ এখন থেকে সেই দিশাতেই একজোট হয়ে আমরা কাজ করব৷
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আরও তিনটি বর্ডার হাট চালু করার প্রস্তাবে দুই দেশ ঐক্যমতে পৌঁছেছে৷ আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের আধিকারিকস্তরের যৌথ প্রতিনিধি দল প্রস্তাবিত বর্ডার হাট এলাকা পরিদর্শন করবেন৷ সিপাহিজলা জেলায় জগতরামপুর, খোয়াই জেলা পহরমুড়া এবং পশ্চিম জেলায় বামুটিয়ায় তিনটি বর্ডার হাট স্থাপন করা হবে৷
এবিষয়ে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাশাসক ডা. সন্দীপ এন মাহাত্মে বলেন, সীমান্ত বাণিজ্য বৃদ্ধিতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আরও তিনটি বর্ডার হাট স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ সেই মোতাবেক আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারত-বাংলাদেশের আধিকারিকস্তরের যৌথ প্রতিনিধি দল প্রস্তাবিত বর্ডার হাট এলাকাগুলি পরিদর্শন করবেন৷ পরিদর্শন শেষে রিপোর্ট তৈরি করে দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হবে৷ ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷
তিনি বলেন, সিপাহিজলা জেলার জগতরামপুর, খোয়াই জেলায় পহরমুড়া এবং পশ্চিম জেলায় বামুটিয়ায় নতুন বর্ডার হাট স্থাপনের প্রস্তাবে দুই দেশ ঐক্যমতে পৌঁছেছে৷ তাতে, সীমান্ত বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আরও উৎসাহ মিলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷
সীমান্ত দিয়ে পাচার ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশের মূল চিন্তার বিষয়৷ এই সমস্যা সমাধানে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ খুবই জরুরি, তা দুই দেশের প্রশাসনিক কর্তারাও স্বীকার করেন৷ তাই, ত্রিপুরায় ভারত-বাংলাদেশ উন্মুক্ত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে ঊধর্বতন মহলের কাছে জোর তদ্বির করা হবে বলে দাবি করেন পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক ডা. সন্দীপ এন মাহাত্মে৷ এদিকে, ইয়াবা ট্যাবলেটের পাচার ক্রমশ বাড়ছে বলে তিনি জানিয়েছেন৷
তাঁর কথায়, দুই দেশের জেলা প্রশাসন স্তরে বৈঠকে মাদক ও মানব পাচার সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ উভয়েই এই সমস্যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ সাথে ওই সমস্যা একজোট হয়ে মোকাবেলায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, সিপাহিজলা এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা সীমান্ত পাচার সংক্রান্ত বিষয়ে গভীর চিন্তা ব্যক্ত করেছেন৷ তাই, বিএসএফ ও বিজিবির সহযোগিতায় ওই সমস্যা দৃঢ় হস্তে সমাধান করার বিষয়ে আমরা ঐক্যমতে পৌঁছেছি, বলেন তিনি৷
ডা. সন্দীপ এন মাহাত্মে স্বীকার করেন, সীমান্তের অনেকটা অংশ এখনও উন্মুক্ত রয়েছে৷ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ হলে সীমান্তের ওই অংশ দিয়ে অনুপ্রবেশ বন্ধ করা এবং পাচার ঠেকানো সম্ভব হবে৷ তবে, সমস্ত কিছু তাদের সাধ্যের মধ্যে নেই৷ তাই, দুই দেশের ঊধর্বতন মহলের কাছে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার জন্য পুনরায় অনুরোধ জানানো হবে৷
এদিকে, ইয়াবা ট্যাবলেটের পাচার অনেকটাই বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাশাসক৷ তিনি বলেন, গাঁজা পাচার আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে৷ সেই জায়গায় ইয়াবা পাচার বেড়েছে৷

