কলকাতা, ২৭ জানুয়ারি (হি.স.): বেলেঘাটায় ২ মাসের শিশু খুন কান্ডে গ্রেফতার করা হল স্বয়ং শিশুর মাকে| সোমবার দুপুরে অভিযুক্ত সন্ধ্যা জৈন মালোকে শিয়ালদহ কোর্টে তোলা হলে তাঁকে ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারপতি| এদিন সন্ধ্যাদেবীর হয়ে কোনও আইনজীবীই সওয়াল করতে রাজি হননি। ফলে সরকারী পক্ষের কৌশুলি পুরো ঘটনা বিস্তারিতভাবে শোনান বিচারপতিকে| যা শুনে রীতিমত তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন তিনি|
শনিবার দুপুরে বেলেঘাটার মহল্লা অ্যাপার্টমেন্টে তিন তলার বাসিন্দা সন্ধ্যা মালোর শিশুকন্যাকে অপহরণ করেছে এক দুষ্কৃতি। এমনটা জানিয়ে ফোন করা হয় বেলেঘাটা থানায়| সেই সময় ছাদে কাপড় শুকতে দিতে গিয়েছিলেন অভিযুক্তার গৃহকর্মী। তখনই আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীর চোখ এড়িয়ে দুষ্কৃতি হানা দেয় বলে দাবি ছিল তার। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রকাশ্যে আসে আসল ঘটনা।
বেলেঘাটা থানা পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটির মুখে ও নাকে সেলোটেপ পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। এরপর গোটা দিন পরিবার ও পুলিশের কাছে শিশু অপহরণের নাটক করেন তিনি। দেহটিকে ফেলে দেন আবাসনের সেপটিক ট্যাঙ্কে। রাতে পুলিশ তাকে নিয়ে গিয়ে ছোট্ট সানায়ার সেলোটেপ জড়ানো নিথর দেহ সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার করে। সত্য সামনে আসতে সন্ধ্যা মালোর মানসিক স্থিতি জানতে মনোবিদদের সাহায্য নিচ্ছেন পুলিশ।
গভীর রাতে জেরার মুখে মেয়েকে খুন করার কথা স্বীকার করেন অভিযুক্ত। এর পর তাঁকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে শিশুকন্যার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে খুনের কারণ নিয়ে এখনো ধোঁয়াশায় পুলিশ। এদিন ওই অভিযুক্ত জানান, শিশুকে সামলাতে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছিল তাঁর| সেই কারণেই খুন করেছেন তিনি| অভিযুক্ত আরও জানায়, ২ মাসের সন্তানকে খুনের জন্য ২ সপ্তাহ ধরে পরিকল্পনা করেছিল তিনি। বাড়িতে লোকজন থাকায় খুন করতে পারছিলেননা তিনি| তবে রবিবার স্বামী-সহ পরিবারের অন্যান্যরা বেরোতেই এই নৃশংস কান্ড ঘটানোর কথা ভাবেন তিনি| তবে সেক্ষেত্রে বাধ সাধছিলো শিশু সানায়ার পরিচারিকা। তাই পরিচারিকার ছাদে যাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগায় সে। তিনি ঘর ছাড়তেই সন্তানকে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টা করে সন্ধ্যা। কিন্তু ব্যথা পেতেই কাঁদতে শুরু করে খুদে। কান্না শুনলেই ছুটে আসবেন পরিচারিকা, টের পেতে পারেন প্রতিবেশীরাও। সেই কারণে সন্তানের কান্না বন্ধ করতে নাকে মুখে সেলোটেপ আটকে দেয় মহিলা। ফলে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয় ছোট্ট সানায়ার। এরপর দেহ লোপাট করতে মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে ফেলে দেয় শুকনো একটি সেপটিক ট্যাঙ্কে।
এরপরেই ঘরে ফিরে নিজেকে আঘাত করে সন্ধ্যা। খুলে দেয় ফ্ল্যাটের সদর দরজা। এরপর পরিবারের লোকেরা ফিরে এলে একইভাবে গল্প ফেঁদে বসে সে| ফোন করেন বেলেঘাটা থানায়| তবে মানসিক অবসাদ বা পোস্ট প্রেগন্যান্সি মানসিক পরিবর্তনের কারণেই এই খুন কিনা তা নিয়ে সন্দেহে রয়েছে তদন্তকারীর দল| মনোবিদদের কথায়, সন্তান জন্মের পরবর্তী মানসিক অবসাদ কিছু ক্ষেত্রে ভয়ংকর আকার নেয়। সেক্ষেত্রে মারাত্মক ভয়ংকর হয়ে ওঠেন মায়েরা।

