নয়াদিল্লি, ২৭ জানুয়ারি (হি.স.) : আজ সম্পাদিত ‘বড়ো শান্তিচুক্তি’ অনুযায়ী আগামী তিন বছরের মধ্যে নবগঠিত বড়োল্যান্ড টেরিটরিয়াল রিজিওন (বিটিআর)-কে ১,৫০০ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বার্ষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি জানান, এ জন্য কেন্দ্ৰীয় সরকারের অধীনে শীঘ্রই একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি সব ধরনের নীতি নিৰ্ধারণ করবে। তিনি জানান, সংবিধান সংশোধন করে বিটিআর-কে দেওয়া হবে অধিক আর্থিক ক্ষমতা। বড়োদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ভাষা সুরক্ষা করা হবে চুক্তির বলে। সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের মিলনায়তনে বড়ো শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর সাংবাদিকদের জানান অমিত শাহ।
বড়ো শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্ৰী অমিত শাহ আরও বলেন, এনডিএফবি এখন আর কোনও সন্ত্ৰাসবাদী নয়, আজ থেকে আমরা ভাই–ভাই। বলেন, আত্মসমর্পণকারী সকলের কর্মসংস্থানের জন্য ভাবনচিন্তা চলছে। সকলকে বিশ্বাসে নিয়ে সব-কা সাথ সব-কা বিকাশের দিকে এগিয়ে যাব আমরা। তিনি বলেন, এই চুক্তির দ্বারা দীৰ্ঘদিনের বহু সমস্যার অবসান হবে। এখন থেকে বোড়োল্যান্ড টেরিটরিয়াল এরিয়া ডিস্ট্রিক্ট (বিটিএডি)-এর পরিচয় হবে বড়োল্যান্ড টেরিটরিয়াল রিজিওন (বিটিআর) নামে। তিনি জানান, আগামী ৩০ জানুয়ারি বড়োল্যান্ডের উগ্রপন্থী সংগঠনগুলির ১,৫৫০ জন সক্রিয় সদস্য এই চুক্তির বলে মূল স্রোতে ফিরে আসবেন। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হবে, জানান অমিত শাহ। তিনি বলেন, ১৯৮৭ সাল থেকে চলমান আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে উঠলে ২,৮২৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এঁদের মধ্যে ৯৪৯ জন বড়ো সংগঠনগুলোর সদস্য, ২৩৯ জন নিরপত্তা বাহিনীর জওয়ান, বাকি সাধারণ নাগরিক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ বলেন, পৃথক বড়োল্যান্ডের দাবিদার চারটি গোষ্ঠী হিংসার পথ ছেড়ে আজ শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, এটা কম কথা নয়। আজ থেকে আর পৃথক বড়োল্যান্ডের দাবি উঠবে না বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রশাসনিক স্তরের তথ্য দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিটিআর-এর জন্য নতুন ডিআইজি পদও ঘোষণা করেছেন।
এদিকে নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (নেডা)-এর আহ্বায়ক তথা অসমের বহু দফতরের মন্রীরি হিমন্তবিশ্ব শর্মা সাংবাদিকদের জানান, আজ সম্পাদিত চুক্তিতে জনজাতিদের ভূমির অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাছাড়া বিটিসি-র আসন সংখ্যা ৬০ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি। সংবিধানের ১২৫ নম্বর অনুচ্ছেদের সংশোধন করে বড়োল্যান্ডকে এই সব সুবিধা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বড়োভূমির ক্ষেত্ৰ সম্প্ৰসারণ সম্পর্কিত বিষয়ে ভাবনা–চিন্তা হবে। তবে বড়ো সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় এমন গ্রামগুলিকে নতুন বিটিআর এলাকা থেকে কৰ্তন করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, বড়ো আন্দোলনে নিহতদের নিকটাত্মীয়দের পাঁচ লক্ষ করে অর্থ সাহায্য দেওয়া হবে। এভাবে শান্তিচুক্তি অনুযায়ী, বিটিআর এলাকায় উপেন্দ্ৰনাথ ব্ৰহ্মের নামে হবে নতুন কেন্দ্ৰীয় বিশ্ববিদ্যালয়, অসমে বড়ো ভাষা হবে সহযোগী সরকারি ভাষা, গঠন হবে নতুন ক্ৰীড়া বিশ্ববিদ্যালয়, তামুলপুরে স্থাপিত হবে ক্যানসার হাসপাতাল অ্যান্ড মেডিক্যাল কলেজ, নির্মাণ করা হবে ট্রেনের কামরা তৈরির কারখানা।
প্রসঙ্গত, দিল্লিতে আজ কেন্দ্ৰীয় সরকার, রাজ্য সরকার এবং উগ্রপন্থী সংগঠন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অব বডোল্যান্ড (এনডিএফবি)-এর চার গোষ্ঠী-সহ বড়ো জনগোষ্ঠীয় কয়েকটি সংগঠনের মধ্যে সম্পাদিত হয়েছে ঐতিহাসিক ত্ৰিপাক্ষিক চুক্তিটি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্ৰী অমিত শাহ, অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের উপস্থিতিতে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের পাশাপাশি নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (নেডা)-এর আহ্বায়ক হিমন্তবিশ্ব শর্মা, বিটিসি-প্রধান হাগ্রামা মহিলারি-সহ (এনডিএফবি-আর)-এর সভাপতি রঞ্জন দৈমারি, এনডিএফবি (প্রগ্রেসিভ)-এর গোবিন্দ বসুমতারি, লরেন্স ইসলারি, এনডিএফবি (ধীরেন)-এর ধীরেন বড়ো, এনডিএফবি (সং)-এর সচিব বি সাওরাইগৌরা, নিখিল বড়ো ছাত্ৰ ইউনিয়ন (এবসু) সভাপতি প্রমোদ বড়ো-সহ আরও কয়েকজন সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীয় নেতা।