গুয়াহাটি, ২০ জানুয়ারি (হি.স.) : নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের জেরে গত দু মাসে অসম পর্যটনের কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। জানিয়েছেন অসম পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান জয়ন্তমল্ল বরুয়া।
সোমবার এক সাক্ষাৎকারে জয়ন্তমল্ল বরুয়া বলেন, ভারতের উত্তরপূর্বে অবস্থিত অসম তার নিজস্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক কলাকৃষ্টি, ভাস্কর্য, পরম্পরা ও দেবী কামাখ্যা-সহ নানা পুণ্যস্থানের জন্য দেশ ও বিদেশের পর্যটকরা আসেন। এছাড়া অসমের ঘন জঙ্গল, অরণ্য পরিবেষ্টিত পাহাড়, চা বাগান, ব্রহ্মপুত্র নদও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর মধ্যে অসম এমন একটি রাজ্য যেখানে সংস্কৃতি আর পরম্পরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ সবের কারণে সম্প্রতিককালে গোটা বছর পর্যটকদের আনাগোনা চলত। সেই সুবাদে কোটি কোটি টাকার আয় হয় রাজ্যের নানা ধরনের ব্যবসায়ী থেকে পর্যটন দফতরের। কিন্তু গত দু মাসে অসম পর্যটন হারিয়েছে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা। তবে এর জন্য তিনি দায়ী করেছেন, প্রথমে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল এবং পরবর্তীতে এই বিল আইনে পরিণত হওয়ার পর এর বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলনকে।
অসম পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান জয়ন্তমল্ল বরুয়া খেদের সঙ্গে বলেন, সিএএ-এর বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলনের প্রভাব সরাসরি পড়েছে রাজ্যের পর্যটন ক্ষেত্রে। পর্যটকরা রাজ্যে আসতে ভয় করছেন। নানাভাবে তাঁদের ভীতি দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু হলে কী, এখানে আসার পর কোনও বিপদে না-পড়েন সেই ভয় পর্যটকদের তাড়া করছে। দেশ ও বিদেশের পর্যটক না আসায় এই বিপুল পরিমাণের ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, প্রতি বছর নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত অসমে অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে। কিন্তু এবারই তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। আন্দোলনের ফলে লোকসান গত ডিসেম্বর মাসে ৫০০ কোটি টাকা এবং চলতি জানুয়ারিতে এখন পর্যন্ত আরও ৫০০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। এই লোকসান কোনওদিন পূরণ হবে না।
তবে এই ভয় দূর করতে অসম পর্যটন জোরদার কাজ শুরু করেছে, দাবি করেছেন জয়ন্তমল্ল। ভারতের প্রায় সমস্ত রেলওয়ে ও উড়োজাহাজের টিকিটের সঙ্গে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাছাড়া, গুগলের মাধ্যমেও বিশেষ ক্যাম্পেইন চালানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশের চারটি শহর যেমন চেন্নাই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, গোয়ায় রোড শো করা হবে। এর আয়োজন ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। রেলওয়ে টিকিটের পেছনের পৃষ্ঠায় অসম পর্যটনের বিভিন্ন স্থলের চিত্র সংবলিত প্রচার করা হবে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে জানিয়ে চেয়ারম্যান বরুয়া বলেন, এর মাধ্যমে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা অসম সম্পর্কে কিছুটা অবগত হতে পারবেন বলে আশা করেন তাঁরা।
জয়ন্তমল্ল বলেন, দেশ ও বিদেশ ছাড়াও অসম পর্যটন এবার ঘরুয়া পর্যটকদের আকর্ষিত করতে বিশেষ নজর দিয়েছে। গত বছর প্রায় ৬০ হাজার ঘরুয়া পর্যটক অসমের বিভিন্ন পর্যটনস্থল দর্শনে এসেছিলেন। এবার এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।