থানার লকআপে অস্বাভাবিক মৃত্যু, বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি বিরোধী দলনেতার, সুদীপ চাইলেন নিরপেক্ষতা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ জানুয়ারি৷৷ থানার লকআপে এটিএম হ্যাক কাণ্ডে সন্দেহভাজন অপরাধীর মৃত্যুতে বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাইলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার৷ তাঁর সাফ কথা, উদয়পুরেও একইভাবে লকআপে মারধোরের ফলে কয়েদির মৃত্যুর ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তে কোন বিচার হয়নি৷ তাই, সুশান্ত ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের বদলে বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক চাইছি৷ সাথে তিনি যোগ করেন, যে থানায় ঘটনাটি ঘটেছে সেখানের কর্মীদের না সরিয়ে তদন্ত হলে তাতে কোন লাভ হবে না৷ যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁদের এক মুহূর্তও থানার দায়িত্বে রাখা উচিত হবে না৷ এদিকে, প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ ওই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন৷ তিনি চাইছেন, তদন্তে কোনও ভাবেই যেন প্রভাব খাঁটানো না হয়৷

গত শনিবার রাতে পশ্চিম আগরতলা থানায় এটিএম হ্যাক কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ধৃত সুশান্ত ঘোষের মৃত্যু হয়েছে৷ তাঁর পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপারের কাছে মামলা করেছে৷ সুশান্তর পরিবারের দাবি, থানায় তাকে খুন করা হয়েছে৷ পুলিশ নিজেকে বাঁচাতে আত্মহত্যার গল্প সাজিয়েছে৷ এদিকে, গতকালই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ওই ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন৷

আজ সকালে লঙ্কামুড়া ঘোষপাড়ায় সুশান্তের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়েছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধীদলনেতা মানিক সরকার৷ তিনি এদিন সাংবাদিকদের বলেন, থানার লকআপে একজন সন্দেহভাজন কয়েদির মৃত্য অস্বাভাবিক বলেই মনে হচ্ছে৷ তাঁর কথায়, সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে তাতে বাস্তব ভিত্তি রয়েছে বলে মনে করি৷ তিনি বিদ্রুপের সুরে বলেন, লকআপের ভিতরে কিভাবে একজন কয়েদি ফাঁসি দিতে পারল তা বোঝা বড় দুস্কর৷

তিনি বলেন, এধরণের ঘটনায় নিয়ম কানুন পদ্ধতি মেনে পদক্ষেপের ব্যবস্থা রয়েছে পুলিশে৷ তাতে তদন্ত হবে. অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি পাবে৷ কারণ, পুলিশের হেফাজতে থেকে মৃত্যু, জবাব তাদের দিতে হবে৷ তবে, পশ্চিম আগরতলা থানায় কর্মীদের না সরিয়ে তদন্ত হলে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে এমনটা মানুষ বিশ্বাস করবে না৷ তাঁর সাফ কথা, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁদের এক মুহূর্তও থানায় রাখা উচিত নয়৷ তিনি বলেন, সুশান্তের পরিবারের সাথে কথা বলে বুঝেছি, তাঁরা পুলিশের উপর আস্থা হারিয়েছেন৷

তিনি ত্রিপুরা সরকারকে নিশানা করে বলেন, ত্রিপুরায় আইনের শাসন নেই আগেও বলেছি৷ এখনো একই কথা বলছি৷ তাঁর কথায়, এই ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত দিয়ে কোন লাভ হবে না৷ কারণ, উদয়পুরেও একইভাবে থানার লক আপে মারধোরের ফলে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছিল৷ ওই ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তে কোন কিনারা হয়নি, তোপ দাগেন মানিক সরকার৷ তাঁর দাবি, সুশান্তের মৃত্যুর ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের বদলে বিচারবিভাগীয় তদন্ত দেওয়া হোক৷ কারণ, থানার লক আপে একের পর এক ঘটনা ঘটবে৷ কিন্তু, কোন বিচার হবে না, তা মেনে নেওয়া যায় না৷

এদিকে, থানায় সিসিটিভি নিয়েও বিদ্রুপ করেন বিরোধী দলনেতা৷ তাঁর কটাক্ষ, রাস্তার মোড়ে সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে৷ কিন্তু, থানায় সিসিটিভি থাকবে না তা খুবই অস্বাভাবিক বলেই মনে হচ্ছে৷ এদিন বিজেপি বিধায়ক তথা প্রাক্তন স্বাস্থ্য মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মণ বলেন, থানার লকআপে মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের উপর মানুষ ভরসা রাখতে পারছে না৷ ওই ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘনে শামিল৷ তিনি বলেন, ওই মৃত্যুর ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চাপিয়ে দিলে আরও একটি অপরাধ করা হবে৷ তিনি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সমস্ত সত্য উদঘাটন করুন৷ সুদীপবাবু বলেন, থানার সিসিটিভি ফুটেজ জনসমক্ষে আনা উচিত৷ কারণ, পুলিশের ভুমিকা নিয়ে নানা সন্দেহ দেখা দিয়েছে৷ মানুষের মনে প্রশ্ণ জেগেছে৷ সুদীপের দাবি, ময়না তদন্তের রিপোর্ট সঠিক ভাবে প্রকাশ হোক৷ তাতে কোনও প্রভাব কাম্য নয়৷ কোনও ধরনের প্রভাব ছাড়া থানার লকআাপে মৃত্যুর ঘটনায় সঠিক তদন্ত হোক চেয়েছেন তিনি৷

এদিকে, বিজেপি বিধায়ক ডাঃ দীলিপ দাস আজ মৃত সুশান্ত ঘোষের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, মৃত্যু কোনও ভাবেই কাম্য নয়৷ তাই, রাজ্য সরকার সর্বোত ভাবে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াবে৷ ওই পরিবারকে সব রকম ভাবে সহায়তা দেবে৷ অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতা সুবল ভৌমিক আজ মৃত সুশান্ত ঘোষের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছেন৷ তাদের সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন৷ তিনি ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তে আপত্তি জানিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *