জিরানিয়া (ত্রিপুরা), ১১ জানুয়ারি (হি.স.) : পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জিততে ত্রিপুরাকে বলি করা হয়েছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করতে গিয়ে এভাবেই বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে বিঁধলেন ত্রিপুরার রাজপরিবারের সদস্য প্রদ্যুৎকিশোর দেববর্মণ। তাঁর সাফ কথা, ত্রিপুরা এমনিতেই অনেক বোঝা বইছে। নতুন করে বোঝা কাঁধে নেব না। ভোটব্যাঙ্ক স্ফীত করার জন্য নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন (সিএএ) ত্রিপুরায় কার্যকর হতে দেব না।
শনিবার জিরানিয়া মহকুমার অধীন দশরামপাড়ায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় মিছিল ও সমাবেশ সংগঠিত হয়েছে। প্রদ্যুতের নবগঠিত সংগঠন তিপ্রা-র উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় আয়োজিত আজকের সভামঞ্চে ত্রিপুরার শাসক জোট আইপিএফটিও অংশ নিয়েছে। দলীয় বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মা এদিন এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। প্রদ্যুৎকিশোর আজকের কর্মসূচি অরাজনৈতিক বলে দাবি করেছেন। কিন্তু, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিপুল সমাবেশ এতে লক্ষ্য করা গেছে।
প্রদ্যুৎকিশোর সভায় বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে আগাগোড়া নিজেকে অসাম্প্রদায়িক দাবি করেছেন। শুধু তা-ই নয়, রাজনীতির লাভালাভের জন্যই ত্রিপুরায় জাতি-উপজাতির মধ্যে বিভেদের বাতাবরণ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও তিনি সুর চড়িয়েছেন। প্রদ্যুতের কথায়, বাঙালি আমাদের শত্রু নয়। শত্রু ওই সব নেতারা, যাঁরা দিল্লি গিয়ে রাজনীতির স্বার্থে আমাদের বিক্রি করে দিয়েছেন। তাঁর সাফ কথা, আমিও হিন্দু। কিন্তু তার আগে আমি তিপ্রাসা।
তিনি বলেন, অতীতে ত্রিপুরায় লক্ষ লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। কাঞ্চনপুরেও মহারানি কাঞ্চনপ্রভা দেবী বাঙালি উদ্বাস্তুদের জমি দান করেছেন। কিন্তু এখন তাঁরা রাজপরিবারের সেই অবদান বেমালুম ভুলে গেছেন। আজ তিনি জোর গলায় বলেন, কাঞ্চনপুরে একটি ক্ষুদ্র মহল জাতি-উপজাতির মধ্যে দাঙ্গা লাগাতে চাইছে। কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশ থেকে লোক আনতে চাইছে। তাতে তাঁদের আপত্তি না থাকলেও ব্রু শরণার্থীরা এই রাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করুক, তা তাঁরা চাইছেন না। তিনি সুর চড়িয়ে বলেন, ব্রু শরণার্থীদের ত্রিপুরায় সম্মানের সাথে থাকতে দিতে হবে। এদিন প্রদ্যুৎ সাফ বলেন, বাঙালিদের সাথে আমাদের কোনও বিভেদ নেই। তাই সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রদ্যুৎকিশোর বলেন, ত্রিপুরা ইতিপূর্বে একাধিকবার শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। তাই এখন নতুন করে বোঝা বহনের ক্ষমতা নেই আমাদের। তাঁর দাবি, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাঙালি কিংবা তিপ্রাসাদের জন্য নয়। এই আইন চালু করা হয়েছে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে তিনি আজ বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্যই ত্রিপুরাকে বলি করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ১ কোটির অধিক সংখ্যালঘুদের ভারতে আশ্রয় দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেঁচে থাকতে ত্রিপুরায় এই আইন কার্যকর হতে দেব না, হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন তিনি। তাঁর কথায়, লড়াই ময়দানে হবে। সাথে আইনি লড়াইও চলবে। তিনি বলেন, সিএএ-এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি।
এদিন প্রদ্যুৎ জনজাতিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ত্রিপুরায় জনজাতি অংশের সকলকে একজোট হতে হবে। না-হলে, নেতারা আমাদের উপর সবসময় ছড়ি ঘুরাবেন। তাঁর বক্তব্য, মিজোরাম, নাগাল্যান্ডে নেতারা ভূমিপুত্রদের কথা শুনেন। কিন্তু ত্রিপুরায় নেতাদের কথা আমাদের শুনতে হচ্ছে। তাঁর আবেদন, এই পদ্ধতি বদলানোর সময় এসেছে। আমরা যা বলব, নেতাদের সেই কথা শুনতে হবে।