নৈহাটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ এএনআই তদন্ত দাবি সিপিএম-বিজেপির

নৈহাটি, ৯ জানুয়ারি (হি.স.) : ভয়াবহ বিস্ফোরণের তীব্রতায় কেঁপে উঠল গঙ্গার দুই পার নৈহাটি ও চুঁচুড়া। উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটিতে বাজেয়াপ্ত বাজি নিষ্ক্রিয় করতে গিয়েই এই বিস্ফোরণ হয়| ক্যামেরাবন্দি হয়েছে আকাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া ওঠার ছবি। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে বিস্ফোরণের শব্দে কেপে ওঠে নৈহাটি সহ গঙ্গার ওপারে অবস্থিত হুগলী জেলার চুঁচুড়া শহরও। প্রচন্ড শব্দে কেপে ওঠে নৈহাটি, হালিশহর, কাঁচড়াপারা , শ্যামনগর সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। এই বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে ভেঙে পড়েছে নৈহাটি গঙ্গার তীরবর্তী রা মঘাট সংলগ্ন ১০ টি বাড়ি। এই বিস্ফোরণের আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এই ঘটনায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করার ক্ষেত্রে কোনওরকম নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশের দিকে উঠেছে গাফিলতির আঙুল। ঘটনায় এএনআই তদন্ত দাবি করেছে বিজেপি|ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে এনআইএ তদন্তের দাবি করে সিপিএম-ও |   

সম্প্রতি নৈহাটির দেবকের মামুদপুরে একটি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। তাতে প্রাণ হারান মোট পাঁচজন। ওই বাজি কারখানায় তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর পরিমাণ বাজি বাজেয়াপ্ত করে নৈহাটি থানার পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা ওই বাজিই বৃহস্পতিবার রামঘাটের গঙ্গার পাশে নিষ্ক্রিয় করার কাজ চলছিল। ক্যামেরাবন্দি হয়েছে বাজেয়াপ্ত বাজি নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে বিস্ফোরণের আকাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া ওঠার ছবি। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতই ছিল যে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। কেঁপে ওঠে রামঘাট লাগোয়া বেশ কয়েকটি বাড়ি। ভেঙে পড়ে কাঁচের জানলা, দরজা। এদিকে বিস্ফোরণের জেরে একদিকে যখন গঙ্গাপাড়ে নৈহাটির আকাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া, তখন কেঁপে ওঠে নদীর উল্টোপাড়ে অবস্থিত হুগলির চুঁচুড়াও। কেঁপে ওঠে চুঁচুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকা হেরিটেজ বিল্ডিং, চুঁচুড়া কোর্ট ও জেলাশাসক ভবন। একাধিক বাড়ির জানলার কাঁচ ভেঙে পড়ে। ভেঙে পড়ে পুরসভার জানলার কাঁচ। বিকট আওয়াজের তীব্রতায় চুঁচুড়া হাসপাতালের ভিতরে ব্লাড ব্যাঙ্কের ঘরের কাঁচও ভেঙে পড়ে। আতঙ্কে বাসিন্দারা বাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়েন।

এই বিস্ফোরণের ফলে আহত হয়েছেন রাম ঘাট এলাকার বাসিন্দা সর্বানি মণ্ডলের ছেলে ও শশুর। সর্বানী দেবী বলেন “আমার ছোট ছেলে ঘরে ঘুমাচ্ছিল বিস্ফোরণের ফলে আমার বাড়ির অ্যাসবেস্টাসে’র চাল ভেঙে আমার ঘুমন্ত ছেলের ওপর পরে। আমার ছেলে লেপ মুড়ি দিয়ে ছিলো বলে প্রাণে রক্ষা পেলেও ওর বুকে আর হাতে ব্যাথা পেয়েছে। পাশের ঘরে আমার শশুর ছিলেন তার মাথায় লেগেছে, আমি নিজে কানে কিছু শুনতে পারছি না। গত চারদিন ধরে আমাদের এখানে বাজির মশলা নিষ্ক্রিয় করার কাজ করছে পুলিশ। এখানে বাজির মশলা নিষ্ক্রিয় করার বিষয়ে আমরা বারবার মানা করা সত্ত্বেও প্রশাসন আমাদের কোন কথা শোনে নি। আর আজ এই ধরনের ঘটনা ঘটে গেলো। আমরা এখন কোথায় যাবো। কি করবো এই শীতে। আমাদের তেমন অর্থ নেই যে আবার বাড়ি বানাবো।”

বাজি নিষ্ক্রিয় করার সময় ঘটনাস্থল থেকে ১০০ বা ১৫০ মিটার দূরেই ছিল পুলিশের গাড়ি। বোমা নিষ্ক্রিয়করণের পদ্ধতি নিয়ে ক্ষুব্ধ হন স্থানীয়রা। পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বচসা বেঁধে যায় দু’পক্ষের। বেআইনী বাজি গুলি নিষ্ক্রিয় করতে আসা পুলিশের ওপর এই বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা এদিন চরাও হন। উত্তেজিত জনতা ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের চারটি গাড়িতে ভাংচুর চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় কমব্যাট ফোর্স।  চুঁচুড়ায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছেন চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর। তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চুঁচুড়ার বাসিন্দারা। এর আগে ভাটপাড়াতে বোমা নিষ্ক্রিয়করণের সময়ও এমন ঘটেছিল বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। পুলিশের গাফিলতির জেরেই বার বার এঘটনা ঘটছে বলে দাবি তাদের। যাদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁরা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। যদিও ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন নৈহাটিতে বিস্ফোরণ কাণ্ডের জেরে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিস্ফোরণের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে যাচ্ছেন। কারও বাড়িতে যদি ফাটল ধরে থাকে, তাহলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। কোনও চিন্তা করবেন না।

এই বিস্ফোরণের ঘটনা জানাজানি হতেই ঘটনা স্থলে ছুটে আসেন সিপিআইএম নেত্রী গার্গী চট্টোপাধ্যায়। তিনি এলাকা ঘুরে দেখে বলেন, “আমরা চাই সরকার যত দ্রুত সম্ভব এই বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দিক। যে ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছে তা দেখে আমরা এন আই এ তদন্ত চাইছি। এখানে শুধু বাজি তৈরি হতো না অন্য কোন ঘটনা রয়েছে এর পেছনে তার সত্যতা অবশ্যই বের হওয়া উচিত। রাজ্যের বোমা বিশেষজ্ রা এই ঘটনার তদন্ত করতে ব্যর্থ।”

এদিন সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে যান হুগলির সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপি মহিলা মোর্চার সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের শাসক দলের মদতপুষ্ট সমাজবিরোধীরা এখন নানা জায়গায় বোমা তৈরির কারখানা খুলে বসেছে পুলিশ-প্রশাসনের মদতে অবাধে তারা দুষ্কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।  

অন্যদিকে, এই ঘটনা সম্পর্কে বিধায়ক অর্জুন সিং বলেন “আমি আগেই এই ঘটনায় এনআইএ তদন্তে’র দাবি করছি। ওরা সত্য ঘটনা ধামচাপা দিতে তড়িঘরি ওই উদ্ধার হওয়া মশলা নিষ্ক্রিয় করছিলো। কিন্তু ফের বড় বিস্ফোরন ঘটলো। ওরা ওরা জানেই না কোথায় এই বিপুল পরিমাণে বাজির মশলা নিষ্ক্রিয় করতে হয়? এন আই এ তদন্ত করলে সত্য সামনে আসবে।” ” অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নৈহাটি রাম ঘাট এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।