নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৬ জানুয়ারি৷৷ রাজ্যের খ্যাতনামা পর্যটন ক্ষেত্র ঐতিহাসিক নীরমহল-এর মালিকানা রাজপরিবারের হাত থেকে রাজ্য সরকারের হাতে ফিরে এসেছে৷ সোমবার ত্রিপুরা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ মহারানি বিভু কুমারী দেবীকে নীরমহলের মালিকানা এবং দখলসত্ব দেওয়ার জন্য নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করে দিয়েছে৷ এ-বিষয়ে মহারানি বিভু কুমারী দেবীর সন্তান প্রদ্যুৎ কিশোর জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতের রায়কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানো হবে৷
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ২৫ এপ্রিল মহারানি বিভু কুমারী দেবী নীরমহলের মালিকানা এবং দখলসত্ব দাবি করে নিম্ন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন৷ ওই মামলায় ২০১৫ সালের ৮ জুন সিভিল জজ সি ডিভিশন মহারানি বিভু কুমারী দেবীর পক্ষে রায় দেয়৷ ওই রায়ের বিরুদ্ধে ত্রিপুরা সরকার ২০১৫ সালের ২৫ জুলাই উচ্চ আদালতে আপিল করে৷ ত্রিপুরা সরকারের পক্ষে মামলা দাখিল করেন আইনজীবী হিল্লোল লস্কর৷ ওই মামলায় সরকার পক্ষের পরিচালনায় ছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল অরুণকান্তি ভৌমিক, বরিষ্ঠ আইনজীবী দেবব্রত চক্রবর্তী ও হিল্লোল লস্কর৷ অন্যদিকে, মহারানি বিভু কুমারী দেবীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী বিআর চৌধুরী এবং দীপক দেব৷
মহারাজা বীরবিক্রম মাণিক্য বাহাদুর ত্রিপুরা সরকারকে নীরমহল দান করেছিলেন৷ নীরমহলকে ঘিরে মোট ভূমির পরিমাণ ৬.০১ একর৷ রাজপরিবারের পক্ষে ১৯৭৪ সালে ত্রিপুরা সরকারকে দানপত্র লিখে দেওয়া হয়েছিল৷ ত্রিপুরা সরকারকে ভূমি রাজস্ব ও সংস্কার আইনের ধারা ১০৭ মোতাবেক নীরমহল দান করা হয়েছিল বলে আদালতে অ্যাডভোকেট জেনারেল সওয়াল করেছেন৷ কিন্তু মহারানি বিভু কুমারী দেবীর আইনজীবী জোর সওয়াল করে বলেন, নিয়ম মেনে নীরমহল দান করা হয়নি৷
আজ রায় ঘোষণার পর অ্যাডভোকেট জেনারেল অরুণকান্তি ভৌমিক বলেন, কোনও কিছু দান করা হলে মেয়াদোত্তীর্ন হওয়ার পর মামলা করা যায় না৷ এক্ষেত্রে দানপত্র লিখে দেওয়ার ৩ বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়৷ তাছাড়া, রুদ্রসাগর জাতীয় জলাভূমির ২১ নম্বর তালিকায় রয়েছে৷ ফলে, নীরমহল এবং রুদ্রসাগরের জমিতে ত্রিপুরা সরকারের সম্পূর্ণ মালিকানা থাকা উচিত৷ তিনি বলেন, আদালতে মহারানি বিভু কুমারী দেবীর পক্ষে আইনজীবীর বক্তব্য টিঁকেনি৷ ত্রিপুরা হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করেছে৷ ফলে, নীরমহল পুনরায় ত্রিপুরা সরকারের হাতে চলে এসেছে৷
এ-বিষয়ে মহারানি বিভু কুমারী দেবীর সন্তান প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মণ বলেন, ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায়ে নীরমহল-এর মালিকানা পুনরায় রাজ্য সরকারের হাতে গিয়েছে৷ কিন্তু, আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হব৷ খুব শীঘ্রই আইনি পরামর্শ নিয়ে ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায়কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানো হবে৷