আরএসএস-বিজেপিকে অসমের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ওপর হামলা করতে দেবেন না, গুয়াহাটিতে হুঙ্কার রাহুলের

গুয়াহাটি, ২৮ ডিসেম্বর (হি.স.) : অসমের ইতিহাস, ভাষা, সভ্যতা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ওপর নাগপুর বা বিজেপিকে হামলা করতে দেবেন না। আরএসএস কখনও অসমকে পরিচালনা করতে পারবে না, অসম পরিচালিত হবে অসমের জনতার হাতে। শনিবার গুয়াহাটিতে আয়োজিত কংগ্রেসের এক সমাবেশে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ভাষণ দিচ্ছিলেন এআইসিসি-র প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্ৰত্যাহারের দাবি-সহ কংগ্ৰেসের ১৩৫-তম প্ৰতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে আজ খানাপাড়ায় পশু চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় ময়দানে আয়োজিত ‘অস্তিত্ব রক্ষার সমাবেশ’ শীৰ্ষক জনসভায় নিখিল ভারত কংগ্ৰেসের প্ৰাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী তাঁর ভাষণে বরাবরের মতো একাধারে আরএসএস এবং বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ওপর হামলা করে বক্তব্য পেশ করেছেন।

বিশাল সমাবেশ প্রধান বক্তার ভাষণে রাহুল গান্ধী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করে বলেন, লোকসভা ও রাজ্যসভায় যাতে এই আইন পাশ হতে না পারে তার জন্য কংগ্ৰেস ও তার মিত্রদলগুলোর বহু চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সাংসদ-সংখ্যা কম হওয়ায় তাঁদের এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং বিলটি পাশ হয়ে যায়। তবে আইনের বলে অসম তথা ভারতের কোথাও যাতে ক্ষতি না হয়, তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে কংগ্ৰেস।

রাহুল আরও বলেন, অসম চুক্তিকে হত্যা করার চেষ্টা চলছে। অসমের স্বার্থে এই চুক্তি অক্ষত থাকা জরুরি। অসমের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অসম চুক্তি করেছিলেন তাঁর বাবা তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। অসম চুক্তির ফলে রাজ্যে শান্তির বাতাবরণ ফিরে এসেছিল। কিন্তু বিজেপি তা ধ্বংস করে অশান্তির সৃষ্টি করছে। আসলে যেখানেই বিজেপি যায়, সেখানে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করে। তিনি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে শান্তিপূৰ্ণ আন্দোলনে বেরোলে যুবকদের বিজেপি সরকার গুলি করে হত্যা করেছে। প্ৰতিবাদকারী জনতা শান্তির কথা বলছেন। তাঁদের ওপর গুলি না চালিয়ে শান্তি-আলোচনা করা যেত, বলেন রাহুল গান্ধী। এ প্রসঙ্গে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত পাঁচজনকে শ্রদ্ধাঞ্জলিও জ্ঞাপন করেছেন তিনি।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, বিজেপি সরকার গঠনের আগাই নাকি তিনি বলেছিলেন, অসমে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে রাজ্যে আর ভ্রাতৃত্ববোধ থাকবে না, হিংসা হবে। আজ এই কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, অসম থেকে তিনি অনেক শিখেছেন। ১৫-১৬ বছর আগে তিনি যখন প্ৰথম অসম সফরে এসেছিলেন, তখন অসমের জনতার চিন্তাধারা, সংস্কৃতি এবং মহাপুরুষদের বিষয়ে বড় বেশি জানতেন না। কিন্তু এখন তিনি মহাপুরুষ শ্ৰীমন্ত শংকরদেব-সহ অসমের মহাপুরুষ তথা মহামনীষীদের বিষয়ে, অসমের ইতিহাস, কৃষ্টি-সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। জানতে পেরেছেন অসমবাসীর ভ্রাতৃত্ববোধ, চিন্তাধারা, সম্প্রীতির বিষয়ে। অসমের ভ্রাতৃত্ববোধ, ঐক্য সম্পর্কে এখন তিনি দেশজুড়ে প্রচার করছেন বলে দাবি করেছেন কংগ্ৰেসের সর্বভারতীয় নেতা রাহুল।

অসম এক সময় হিংসাজৰ্জর রাজ্য ছিল। বহুদিন পর রাজ্যে শান্তি এসেছিল। কিন্তু শান্ত এক রাজ্যকে পুনরায় অশান্ত করার প্রচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তুলেন বক্তা। তিনি বলেন, অসমবাসী সন্তানদের আজকের অবস্থা দেখে তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়ে এর জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছেন রাহুল। বলেন, আজ কোনও রাজনৈতিক ভাষণ দিতে তিনি আসেননি। এসেছেন এই প্ৰতিশ্ৰুতি দিতে যে অসমবাসীর সুখ-দুখে তিনি সবসময় রাজ্যবাসীর সঙ্গে থাকবেন। অসমের জনতার উদ্দেশে তাঁর আহ্বান, বিজেপির বিভেদকামী শক্তি রাজ্য তথা দেশের সাতাপুরুষের সম্প্ৰীতির ওপর আঘাত সহ্য করবেন না।

এদিকে কেন্দ্ৰীয় সরকার তথা প্ৰধানমন্ত্ৰী মোদীর তীব্ৰ সমালোচনা করে রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, বিজেপি সরকার দেশের অৰ্থব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশে অৰ্থনৈতিক মন্দাবস্থার সৃষ্টি করেছে। বেকারদের সংস্থাপন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মোদী সরকার। দেশের ২ কোটি বেকারকে সংস্থাপন দেবেন বলেছিলেন মোদী, কিন্তু কতজনকে কর্মসংস্থাপন দিলেন জানতে চেয়েছেন রাহুল। মোদীর ওপর হামলা করে বলেন, ৪৫ বছর পর দেশে বেকার বৃদ্ধির হার সৰ্বাধিক হয়েছে। রাহুল বলেন, প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদী বিমুদ্ৰায়ন, জিএসটি বলবৎ করে আজ ভারতমাতা-র ওপর আঘাত করেছেন। অসমে মোদীজি কতটি ফ্যাক্টরি স্থাপন করেছেন, তা প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে বলেছেন তিনি।

বরাবরের মতো আজও বলেন, কালোটাকার বিরুদ্ধে লড়াই করছে বলে মোদী সরকার তিন লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা নিজের বন্ধু শিল্পপতি, পুঁজিপতিদের দিয়েছেন। এক লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকার ট্যাক্স মাফ করেছেন তাঁদের। কিন্তু দেশের কৃষক, সধারণ ক্ষুদ্ৰ ব্যবসায়ীদের কত টাকা ঋণ মাফ করেছে মোদী সরকার, তারও জবাব চেয়েছেন রাহুল গান্ধী। কংগ্ৰেস নেতা গান্ধীর গুরুতর অভিযোগ, প্ৰধানমন্ত্ৰী মোদী তথা কেন্দ্ৰীয় সরকারের একই লক্ষ্য, দেশের জনতার মধ্যে ঝগড়া বাঁধিয়ে ১৫-২০ জন বন্ধু শিল্পপতিকে পুঁজি প্ৰদান করে লাভবান করা।

কংগ্ৰেসের আজকের গণসমবেশের মঞ্চে রাজ্যের প্ৰাক্তন মুখ্যমন্ত্ৰী তরুণ গগৈ, অসম প্রদেশ সভাপতি রিপুন বরা ভাষণ দিয়েছেন। সভামঞ্চে অন্যদের সঙ্গে ছিলেন অসমে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হরিশ রাওয়াত, দুই সাংসদ গৌরব গগৈ ও আবদুল খালেক, অসম বিধানসভায় কংগ্ৰেস দলপতি দেবব্ৰত শইকিয়া-সহ দলের আরও কয়েকজন জাতীয় ও প্রদেশস্তরের নেতা এবং সাংসদ-বিধায়ক।

খানাপাড়ায় গণসমাবেশের পর রাহুল গান্ধী যান পুলিশের গুলিতে নিহত শেম স্ট্যাফোৰ্ডের বাড়ি। সেখানে নিহতের পরিবারবর্গের প্রতি তাঁর সমবেদনা জ্ঞাপন করে সান্দ্বনা দেন তাঁদের।