BRAKING NEWS

রাবার গাছের পাতার বোটা থেকে মধু আহরণ, কৃষকদের বিকল্প আয়ের দিশা দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৬ ডিসেম্বর৷৷ রাবার গাছের পাতার বোটা থেকে আহরিত মধু ভীষণ দামী এবং তার ওষুধি ব্যবহারিক গুণও প্রচুর৷ তাই মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ওই মধু বিক্রি করে চাষিদের আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়ার দিশা দেখিয়েছেন৷ এক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সর্বোত সাহায্য করবে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ শুক্রবার ইম্ফলে মেঘালয় সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত উত্তরপূর্বাঞ্চল ফুড শো-র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সারা ত্রিপুরায় ২৫ হাজার কৃষককে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে৷ তাঁরা রাবার গাছের পাতার বোটা থেকে মধু আহরণ করবেন৷ সেই মোতাবেক তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে৷


এবিষয়ে রাবার বোর্ডের ডেভলপমেন্ট অফিসার শ্যামল সেন জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাবার গাছের নানা উপকারিতা নিয়ে গবেষণা চলছিল৷ সেই গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে রাবার গাছের পাতার বোটা থেকে আহরিত মধু খুবই উৎকৃষ্টমানের৷ ওই মধু খুবই সুস্বাদু এবং তার ওষুধি ব্যবহারিক প্রয়োগও রয়েছে৷ তিনি বলেন, উদ্যান বিদ্যার অধীনে কৃষকদের প্রশিক্ষিত করে মধু সংগ্রহ এবং বিক্রয়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ইতিমধ্যে দক্ষতা বিকাশ দপ্তরের উদ্যোগে বহু কৃষকদের এবিষয়ে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে৷ তিনি জানান, খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদ এবং রাবার বোর্ড যৌথভাবে কৃষকদের এবিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে৷


আজ ইম্ফলে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, রাজ্যে প্রচুর রাবার গাছ রয়েছে৷ প্রতিবছর ৮৬ হাজার মেট্রিক টন রাবার উৎপন্ন হচ্ছে৷ এই রাবার গাছের মাধ্যমে বিকল্প আয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে৷ তিনি বলেন, রাবার গাছের পাতার বোটা থেকে মধু আহরণের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জনের সুযোগ রয়েছে৷ কারণ, ওই মধু সারা বিশ্বে কদর রয়েছে৷ তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে৷ তাছাড়া রাজ্য সরকারও কৃষকদের নানাভাবে সহায়তায় পরিকল্পনা নিয়েছে৷ এদিন তিনি জানান, খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদ ২৫ হাজার কৃষকদের ঋণ প্রদানের বন্দোবস্ত করবে৷ তাঁর দাবি, রাবার গাছের পাতার বোটা থেকে মধু আহরণের মাধ্যমে একজন কৃষক বছরে নূ্যনতম ৫০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন৷ তাতে ত্রিপুরার কৃষকদের আর্থিক অবস্থায় পরিবর্তন আসবে৷ তাঁর কথায়, কৃষকরা ওই বিকল্প রোজগারে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পারবেন৷


তিনি জানান, ইতিমধ্যে বাছাই করা কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ কারণ, ওই মধু আহরণের পদ্ধতিগত বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ছাড়া এই কাজ সম্ভব নয়৷
এদিকে, গো-পালন নিয়ে সমালোচনার জবাব দিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ আমূলের বাণিজ্যিক ব্যাপ্তি নিয়ে কারোর নূ্যনতম ধারণা নেই৷ তাই গো-পালনে লজ্জাবোধ করেন অনেকেই৷ শুক্রবার ইম্ফলে মেঘালয় সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত উত্তরপূর্বাঞ্চল ফুড শোতে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, ১১ হাজার কোটি টাকা উত্তরপূর্বাঞ্চলের থেকে দুগ্দজাতীয় পণ্য আমদানির জন্য বর্হিরাজ্যকে দিতে হচ্ছে ৷ তাই তিনি ত্রিপুরায় গো-পালনে জোড় দিয়েছেন৷ এদিন তিনি বলেন, দুগ্দজাতীয় পণ্যের সারা বিশ্বেই চাহিদা রয়েছে৷ ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে এই দুগ্দজাত পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে প্রচুর উপার্জন হচ্ছে৷ তাই ত্রিপুরায় দুগ্দজাত পণ্য উৎপাদনে জোড় দেয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, দুগ্দজাত পণ্য উৎপাদনে ফুড প্রসেসিং ইন্ড্রাস্ট্রি খোলা হলে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে ৷


তিনি জানান, উত্তরপূর্বাঞ্চল প্রতি বছর ১১ হাজার কোটি টাকার দুগ্দজাত পণ্য আমদানি করে থাকে৷ এই অঞ্চলে এই পণ্য উৎপাদনে পরিকাঠামোর অভাবে প্রচুর টাকা বর্হিরাজ্যে যাচ্ছে ৷ তিনি দাবি করেন, ত্রিপুরায় আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে দুগ্দজাত পণ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ৷ কারণ, গো-পালনে জোড় দেওয়া হয়েছে ৷ তিনি বলেন, ১০ লক্ষ গবাদি পশু রাজ্যের ৫৮টি ব্লকে ক্লাস্টার করে প্রদান করা হবে৷ তাতে যে দুধ মিলবে, তার থেকে দুগ্দজাত পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে ৷ তিনি বলেন, অন্তত বছরে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা রাজ্যের সাশ্রয় হবে ৷ কারণ, তখন বর্হিরাজ্য থেকে দুগ্দজাত পণ্য আমদানি কমবে ৷ এদিন তিনি বিদ্রূপ করে বলেন, গো-পালন নিয়ে জোর দেওয়ায় সমালোচিত হচ্ছি ৷ অথচ আমূলের বাণিজ্যিক ব্যাপ্তি নিয়ে কারোর কোন ধারণা নেই৷ তিনি জানান, ত্রিপুরায় গো-পালনে মানুষ দারুণ ভাবে উপকৃত হবেন৷ কারণ, তারা আর্থিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারবেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *