নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ছাড়পত্র ,পূর্বোত্তরে এডিসি ও ইনার লাইনকে ছাড়

৷৷ অভিজিৎ রায় চৌধুরী৷৷ নয়াদিল্লি, ৪ ডিসেম্বর ৷৷ সংসদে পেশ করার লক্ষ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ছাড়পত্র দিয়েছে৷ এই বিল নিয়ে ২০১৬ সাল থেকে সারা দেশে প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে৷ তবে, সারা দেশের নজর ছিল উত্তর পূর্বাঞ্চলের দিকে৷ কারণ, এই অঞ্চলই নাগকিত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধীতায় সবচেয়ে বেশী সোচ্চার হয়েছে৷ পরিস্থিতি এমন পর্য্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি জোট শরিকরাও প্রতিবাদী হয়েছে৷ তাই, উত্তর পূর্বাঞ্চলের এডিসি এলাকা এবং ইনার লাইন পারমিট যুক্ত এলাকাকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বাইরে রাখা হয়েছে৷


অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড এবং মিজোরাম যেখানে ইনার লাইন পারমিট চালু রয়েছে সেই রাজ্যগুলিকে ওই বিলের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ষষ্ঠ তপশীল আওতাধীন এলাকাগুলিকেও ওই বিলের বাইরেই রাখা হয়েছে৷ প্রসঙ্গত, সংবিধানের ষষ্ঠ তপশীল মোতাবেক অসম, মেঘালয়, মিজোরাম এবং ত্রিপুরায় স্ব-শাসিত পরিষদ ও স্ব-শাসিত জেলা পরিষদ গঠন করা হয়েছিল৷ সেখানে স্ব-শাসন এবং সাংবিধানিক শাসন ক্ষমতা বলবৎ রয়েছে৷


কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ছাড়পত্র পেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল৷ আগামী সপ্তাহে সংসদের চলতি শীতকালীন অধিবেশনে এই বিলটি পেশ করা হবে৷ ধর্মের কারণে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানে নিপীড়িত হয়ে ভারতে আসা অ-মুসলমান উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এই বিলে৷
উল্লেখ করা যেতে পারে, মন্ত্রিসভায় এই বিলকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বহু সমাজকর্মী, রাজনীতিবিদদের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অসমের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও বৈঠক করেন৷


অন্যদিকে, সংসদে বিলটি পেশ করার আগেই এর বিরোধিতায় সরব হয়েছে কংগ্রেস৷ এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিআই(এম)-এর মতো দলগুলি৷ আবার বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ বিলুপ্তির সঙ্গে এই বিলের তুলনা করেছে৷ গত লোকসভায় বিলটি পাশ হলেও রাজ্যসভায় সরকার পক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় বিলটি পেশই করা হয়নি৷ ফলে লোকসভা মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিলটি খারিজ হয়ে যায়৷ সে সময় অসমে বিরোধীরা তো বটেই, বিজেপির জোট শরিক এনপিপি প্রধান তথা মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার নেতৃত্বে নেডা জোটের অন্য দলগুলিও বিলের বিরোধিতায় নামে৷ মন্ত্রিসভার বৈঠকে পেশ করার আগে বিষয়টি নিয়ে নর্থ-ইষ্ট ফোরাম ফর ইন্ডিজেনিয়াস পিপলের সদস্যদের সঙ্গেও বৈঠক করেন৷ এদিন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই বৈঠক হয়েছে৷ উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷


প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ত্রিপুরা সহ পূর্বোত্তরের রাজ্যের উপজাতি সংগঠনগুলির নেতৃত্বেদের সাথে আলোচনা করেছেন৷ পাশাপাশি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকেও ওই বৈঠকে ডাকা হয়৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে ত্রিপুরার সমস্ত রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন৷ কিন্তু, গত শনিবারের বৈঠকে ওই বিল কারোর কোন ক্ষতি করবে না বলে, তাঁদেরকে আশ্বস্থ করার চেষ্টা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ সেই সঙ্গে ওই বিলে আপত্তি থাকলে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনের পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ কারণ, ওই বিলের প্রতিবাদে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হোক, চাইছেন না তিনি৷
এদিকে, অসমে ইতিমধ্যেই এই সংশোধনী বিল জাতি-উপজাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করবে বলে সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে৷