নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ ডিসেম্বর৷৷ গুজামিল দিয়ে বেড়েছে স্বাক্ষরতার হার৷ তাই, নয়া সমীক্ষায় রাজ্যে স্বাক্ষরতার হার কমার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথের দেয়া তথ্য অনুসারে বাম জমানায় প্রকাশিত স্বাক্ষরতার হার বর্তমানে বাস্তবের সাথে অনেকটাই অমিল বলে মনে হচ্ছে৷ কারণ, ২০১৬ সালে সারা রাজ্যে সমীক্ষায় ৩২৩৩ জন নিরক্ষর ব্যক্তি চিহ্ণিত হয়েছিল৷ অথচ, এবছর রাজ্যে মাত্র ১১ শতাংশ এলাকায় সমীক্ষায় ৪২৩০ জন নিরক্ষর ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ জানিয়েছেন, স্বাক্ষরতার প্রকৃত হার নিরূপন করতে নয়া সমীক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে৷

বামফ্রন্ট আমলে প্রকাশিত সমীক্ষা রিপোর্টে রাজ্যে স্বাক্ষরতার হার দাঁড়িয়েছিল ৯৭ শতাংশ৷ কিন্তু, স্বাক্ষরতার ওই হারে গুজামিল রয়েছে বলে অতীতে একাধিক বার অভিযোগ উঠেছে৷ আজ মহাকরণে শিক্ষমন্ত্রী রতন লাল নাথ জানিয়েছেন, স্বাক্ষরতা ও শিক্ষিত হওয়া সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়৷ বাম জমানায় এই বিষয়টিকেই গুলিয়ে ফেলা হয়েছিল৷ তিনি বলেন, স্বাক্ষরতার হার নিরূপনে ১৫-৫০ বছর বয়সকে বিবেচনা করা হয়৷ সেই মোতাবেক ২০১১ আদমসুমারী অনুযায়ী রাজ্যে স্বাক্ষরতার হার দাঁড়িয়েছিল ৮৭ শতাংশ৷ কিন্তু, বামফ্রন্ট সরকার ওই স্বাক্ষরতার হারের নতুন ভাবে মূল্যায়ন করেছিল৷ ফলে, ২০১৪ সালে স্বাক্ষরতার হার গিয়ে দাঁড়ায় ৯৭ শতাংশ৷ শিক্ষামন্ত্রী বিদ্রুপ করে বলেন, বামফ্রন্ট সরকার নিজেদের তৈরী করা স্বাক্ষরতার হার সম্পর্কে বিভ্রান্ত ছিল৷ তাই ২০১৬ সালে সারা রাজ্যে প্রতীকি সমীক্ষার আয়োজন করেছিল বামফ্রন্ট সরকার৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, ওই সমীক্ষায় সারা রাজ্যে মাত্র ৩২৩৩জন নিরক্ষর হিসেবে চিহ্ণিত হয়েছে৷
শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, লিখতে পারা, পড়তে পারা এবং সংখ্যাতত্বের ভিত্তিতে গাণিতিক জ্ঞান থাকলেই তাকে স্বাক্ষর বলা যাবে৷ তিনি বলেন, অতীতে স্বাক্ষরতার সমীক্ষা সঠিক হয়নি বলে বারবার আওয়াজ তুলেছি৷ কিন্তু, তখন কেউই তাতে কর্ণপাত করেনি৷
তিনি বলেন, রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর স্বাক্ষরতার প্রকৃত হার নিরূপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে৷ তাই, গত ১৯ মার্চ রাজ্যের বাছাইকৃত কিছু এলাকায় স্বাক্ষরতার হার নিরূপনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল৷ তিনি জানান, আগরতলা পুর নিগমের ১২, ১৩ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড, রাজনগর ব্লক, ডম্বুরনগর ব্লক এবং খোয়াই পুর পরিষদের ১, ৩ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে স্বাক্ষরতার হার নিরূপণের সমীক্ষা করা হয়েছিল৷ তাতে, বাম জমানায় স্বাক্ষরতার হারের সাথে বিস্তর ফারাক উঠে এসেছে৷
তিনি জানান, ২০১৬ সালে পুর নিগমের ১২,১৩ ও ৩৫ নম্বরের ওয়ার্ডে মাত্র ছয়জন নিরক্ষর চিহ্ণিত হয়েছিলেন৷ কিন্তু, এখন ওই তিনটি ওয়ার্ডে ১৬২২ জন নিরক্ষর চিহ্ণিত হয়েছেন৷ তেমনি, রাজনগর ব্লকে ২০১৬ সালে ৫৬ জন নিরক্ষর চিহ্ণিত হয়েছিলেন৷ কিন্তু, এখন ওই ব্লকে ৬৭৬জন নিরক্ষর পাওয়া গিয়েছে৷ তিনি বলেন, ডম্বুরনগর ব্লকেও একই ধরনের ফারাক রয়েছে৷ ওই ব্লকে ২০১৬ সালে মাত্র ১৩৫জন নিরক্ষর চিহ্ণিত হয়েছিল৷ কিন্তু, এখন ওই ব্লকে ১১২৭ জন নিরক্ষর চিহ্ণিত হয়েছেন৷ একইভাবে খোয়াই পুর পরিষদের তিনটি ওয়ার্ডে ২০১৬ সালে মাত্র সাত জন নিরক্ষর পাওয়া গিয়েছিল৷ কিন্তু এখন এই সংখ্যাটি ৮৪৫৷ তিনি বলেন, ২০১৬ সালে সারা রাজ্যে ৩২৩৩ জন নিরক্ষর পাওয়া গিয়েছিল৷ অথচ এখন রাজ্যের মাত্র ১১ শতাংশ এলাকায় সীমাক্ষায় ৪২৩০জন নিরক্ষর চিহ্ণিত হয়েছেন৷ তাঁর কথায়, সারা রাজ্যে সমীক্ষা চালানো হলে ৬৫ হাজারের অধিক নিরক্ষর ব্যক্তি চিহ্ণিত হবেন৷ তাঁর দাবি, নয়া সমীক্ষায় স্বাক্ষরতার হার ৮৮ শতাংশে নেমে আসবে৷ তিনি জানান, আগামী ২১ ডিসেম্বরর স্বাক্ষরতা মিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে৷ ওই বৈঠকে সারা রাজ্যে স্বাক্ষরতার হার নিরূপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷

