BRAKING NEWS

সম্পত্তির লোভে বৃদ্ধকে পাগল সাজিয়ে আটকে রাখা হল হাসপাতালে, কাঠগড়ায় পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ নভেম্বর ৷৷ ভয়ঙ্কর সামাজিক অবক্ষয়৷ সম্পত্তির লোভে সহজ সরল ধর্মপ্রাণ বৃদ্ধকে মানসিক হাসপাতালে নিয়ে একাংশ স্বাস্থ্যকর্মীর সহযোগিতায় আটক রাখল গুণধর পুত্র, পুত্রবধূ ও তথাকথিত সহধর্মীনি৷ ষড়যন্ত্রে জড়িত পুলিশও৷ ঘটনা রাজধানী আগরতলা শহর এলাকার ইন্দ্রনগরের জগৎপুর কালীবাড়ি এলাকায়৷ অসহায় ওই বৃদ্ধের নাম শান্তিপদ ভট্টাচার্য৷ বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের হস্তক্ষেপে বৃদ্ধকে মানসিক হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে৷


আত্মকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থা কতটা যে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে তার অন্যতম নজির স্থাপিত হয়েছে রাজধানী আগরতলা শহর সংলগ্ণ ইন্দ্রনগরের জগৎপুর কালীবাড়ি এলাকায়৷ ওই এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা শান্তিপদ ভট্টাচার্য ধর্মপ্রাণ মানুষ৷ বাড়িতে স্ত্রী, পুত্র পুত্রবধূ রয়েছে৷ তার নন্দননগরে আরও কিছু জায়গাও রয়েছে৷ তাছাড়া রয়েছে জিবি বাজারে রয়েছে দোকানভিটি৷ পুত্র সরোজ ভট্টাচার্য পেশায় ব্যবসায়ী৷ বেশ কিছুদিন ধরেই সম্পত্তি নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক ঝামেলা চলছিল৷ শান্তিপদ ভট্টাচার্যের এক বোন বৃন্দাবন এলাকায় থাকেন৷ কিছুদিন আগে তিনি বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন৷ সেখান থেকে ফিরে এসেই পরিবারের লোকজনদের জানান বৃন্দাবনের পরিবেশ তাকে আপ্লুত করেছে৷ তিনি সেখানে চলে যেতে চান৷ যাবার আগে বিষয় সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারাও করে দিতে চেয়েছেন৷


ইন্দ্রনগরের জায়গা স্ত্রী পুত্রকে দেবার কথা নিজেই জানান৷ শান্তিপদবাবু জিবি বাজারে দোকানভিটিও ছেলেকে দিয়ে দিতে রাজি হন তিনি৷ কিন্তু তাতে খাই মিটছিল না পুত্র পুত্রবধূ এবং তথাকথিত সহধর্মিনীর৷ যে বাড়িটি বিক্রি করে টাকা পয়সা নিয়ে বৃন্দাবনে চলে যেতে চেয়েছিলেন সেই বাড়িটি বিক্রি করে দিতে রাজি নয় পরিবারের অন্যরা৷ এনিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই ঝামেলা চলছিল৷ এরই জের ধরে স্ত্রী পুত্র এবং পুত্রবধূ মিলে ধর্মপ্রাণ সুস্থ সবল শান্তিপদ ভট্টাচার্যকে নিয়ে যাওয়া হয় নরসিংগড়স্থিত মানসিক হাসপাতালে৷ জানা গেছে মানসিক হাসপাতালেই চাকরি করেন গুণধর পুত্র সরোজ ভট্টাচার্যের শাশুড়ি৷ অপরদিকে পুলিশকেও তারা ম্যানেজ করে নেন৷ পুলিশের সহায়তাতেই বৃদ্ধ শান্তিপদ ভট্টাচার্যকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় নরসিংগড়স্থিত মানসিক হাসপাতালে৷

এই অমানবিক ঘটনা ঘটেছে গত ২৩ নভেম্বর৷ স্থানীয় লোকজনরা এ বিষয়ে বিশেষ কিছু জানতেন না৷ বাড়ির মালিক শান্তিপদ ভট্টাচার্যকে বাড়িতে এবং এলাকায় না দেখে স্থানীয় মানুষজনের সন্দেহ ক্রমশ ঘনীভূত হতে থাকে৷ এরই মধ্যে এলাকাবাসী প্রত্যক্ষ করেন পুলিশ গত ২৩ নভেম্বর শান্তিপদবাবুর বাড়িতে গিয়েছিল৷ গত কয়েকদিন ধরে শান্তিপদবাবুর কোন খোঁজখবর না পেয়ে তারই এক নিকট আত্মীয় খোঁজখবর নিতে শুরু করেন৷ তারা জানতে পারেন শান্তিপদবাবুকে পাগল সাজিয়ে মানসিক হাসপাতালে আটকে রাখা হয়েছে৷ সেখানে পাগলের চিকিৎসা চালানো হচ্ছে৷
সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়৷ এই চাঞ্চল্যকর ও সামাজিক অবক্ষয়ের ঘটনাটি স্থানীয় বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের নজরে আনেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷ খবর পেয়ে সুদীপ রায় বর্মন শুক্রবার ছুটে যান জগৎপুর কালীবাড়ি এলাকায়৷ সেখানে গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন৷ এ ধরনের সামাজিক অবক্ষয়ের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন৷ তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনার পেছনে পুলিশের মদত রয়েছে৷ পুলিশের কার্যকলাপে তিনি প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ মানসিক হাসপাতালের কর্মীও এই ঘটনায় জড়িত থাকায় তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ শান্তিপদ ভট্টাচার্য সুস্থসবল এবং ধর্মপ্রাণ মানুষ বলে উল্লেখ করেন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন৷
একমাত্র সম্পত্তির লোভেই তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন অজুহাত দেখিয়ে চক্রান্ত করে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন৷ স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে নিয়ে তিনি নিজেই ছুটে যান নরসিংগড়স্থিত মানসিক হাসপাতালে৷ সেখান থেকে শান্তিপদ ভট্টাচার্যকে তিনি নিজের গাড়ি করে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন৷
এদিকে এ ধরনের ভয়ঙ্কর সামাজিক অবক্ষয়ের ঘটনায় জড়িত পুত্র, পুত্রবধূ ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে নিউ ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ এই ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের জোরালো দাবি উঠেছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *