নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল : ভাবাবেগ বুঝতে মহাবৈঠকের ডাক দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ নভেম্বর৷৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলের হাওয়া বুঝতে চাইছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ তাই, মহাবৈঠকের ডাক দিয়েছেন তিনি৷ শুক্রবার রাত নয়টায় তাঁর সরকারি বাসভবনে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে৷ চলবে শনিবারও৷ তাতে রাজ্য থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন কংগ্রেস, সিপিএম, আইএনপিটি, আইপিএফটি-সহ রাজ্যের ছাত্র সমাজ, আইন বিশেষজ্ঞ, এনজিও, জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি রাজপরিবারের সদস্য প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মণও৷ প্রস্তাবিত বৈঠকে যোগ দিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ এবং সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব দিল্লি ছুটে গেছেন৷ ত্রিপুরার দুই সাংসদও ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন৷ অবশ্য, উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্য রাজ্যগুলিকেও ডেকেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷


নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে মতামত জানতে রাজ পরিবারের সদস্য প্রদ্যুৎকিশোর দেববর্মণকে দিল্লি ডেকেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ আগামীকাল ওই বিল নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে অন্যান্যদের পাশাপাশি প্রদ্যুতেরও আলোচনা হবে৷ এ-বিষয়ে প্রদ্যুতের দাবি, ত্রিপুরা দেশের একমাত্র রাজ্য যেখানে একাধিকবার শরণার্থীদের থাকার জন্য জায়গা দেওয়া হয়েছে৷ ফলে, নতুন করে বোঝা নেওয়ার ক্ষমতা নেই আমাদের৷ জনজাতিদের ওই সমস্যা কেন্দ্রীয় সরকারকে বুঝতে হবে৷


প্রসঙ্গত, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করাতে চাইছে৷ ফলে সারা দেশের সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের ভাবাবেগ মেপে নেওয়াও প্রয়োজন বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ রাজপরিবারের সদস্য প্রদ্যুৎকিশোর জানিয়েছেন, গত ১৬ নভেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ব্রু শরণার্থীদের বিষয়ে আলোচনার সময় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়েও কথা হয়েছে৷ তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিবেদন করেছিলাম নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে পেশ করার আগে আমাদের সমস্যা শুনুন৷


প্রদ্যুতের বক্তব্য, ত্রিপুরায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে একাধিকবার শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ তাঁর দাবি, ১৯৪০ সালে যখন দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল তখন মহারাজা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন৷ তেমনি ১৯৪৬ সালে নোয়াখালিতে দাঙ্গা হাওয়ায় সেখান থেকে আগত হাজার হাজার শরণার্থীকে রাজ্যে থাকতে দেওয়া হয়েছিল৷ প্রদ্যুতের দাবি, ১৯৪৮ সালে কাঞ্চনপুরে মহারানি কাঞ্চনপ্রভা দেবী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত শরণার্থীদের জন্য ৩০০ একর জমি বরাদ্দ করেছিলেন৷ শুধু তাই নয়, ১৯৫৬, ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার ত্রিপুরায় শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে৷


তাঁর বক্তব্য, এদেশে ত্রিপুরা একমাত্র রাজ্য যেখানে একাধিকবার শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে৷ ফলে এখন পুনরায় বোঝা নেওয়ার ক্ষমতা নেই আমাদের, বলেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরার জনজাতিদের ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে৷ তা কেন্দ্রীয় সরকারকে বুঝতে হবে৷ তাদের সমস্যা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না৷
প্রদ্যুৎ জানিয়েছেন, গত ১৬ নভেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলার সময় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে পেশ করার আগে এই রাজ্যের নাগরিক সমাজের মতামত নিতে বলা হয়েছিল৷ তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের ডেকেছেন৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরার ছাত্র সমাজ, আইন বিশেষজ্ঞ, এনজিও, জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির সদস্যদের সাথে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে কথা বলবেন৷ আগামীকাল অমিত শাহের তাঁর সাথে দেখা হবে৷ তাই, আজ তিনি দিল্লি রওয়ানা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রদ্যুৎ৷


এদিকে, কংগ্রেস ওই বৈঠকে অংশ নেবে না বলে সাফ জানিয়েছে৷ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির কনভেনার পীযূষকান্তি বিশ্বাস জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল তৈরি করে মতামত নেওয়ার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না৷ তাঁর দাবি, কংগ্রেস শুরু থেকেই ওই বিলের বিরোধীতা করছে৷ ফলে, প্রস্তাবিত মহাবৈঠকে অংশ নেওয়া অর্থহীন, বলেন তিনি৷


অন্যদিকে, সিপিএম এখনও আগামীকালের বৈঠকে অংশগ্রহণ করবে কি না সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি৷ সিপিএম ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক গৌতম দাশ জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আলোচনার আমন্ত্রণ পেয়েছি৷ বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারও একই আমন্ত্রণ পেয়েছেন৷ তবে, ওই বৈঠকে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি৷
শাসকজোট শরিক উপজাতি ভিত্তিক আঞ্চলিক দল আইপিএফটিও মহাবৈঠকের আমন্ত্রণ পেয়েছে এবং দলের সাধারণ সম্পাদক তথা ত্রিপুরা সরকারের উপজাতি কল্যাণমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া তাতে অংশ নেবেন৷ দলের সভাপতি তথা রাজস্বমন্ত্রী এন.সি. দেববর্মা বলেন, আইপিএফটি ওই বৈঠকে অংশ নেবে এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সম্পর্কে আবারও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আপত্তি জানাবে৷
এদিকে, ত্রিপুরার আরেক উপজাতি ভিত্তিক আঞ্চলিক দল আইএনপিটিও ওই বৈঠকের আমন্ত্রণ পেয়েছে৷ দলের সাধারণ সম্পাদক জগদীশ দেববর্মা বলেন, আগামীকাল সভাপতি বিজয়কুমার রাঙ্খল-সহ দিল্লিতে যাচ্ছি৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ডাকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে যোগ দিচ্ছি৷ তবে, ওই বিলে আপত্তি রয়েছে আমাদের, তা সাফ জানাবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷


এতে সাফ হয়ে গেছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের ভাবাবেগ বুঝে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ কিন্তু বৈঠকের ফল কী হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে রাজনৈতিক মহলে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *