ঔদ্ধত্যের ফল পেয়েছে বিজেপি, উপনির্বাচনে সবকটি আসনে দলের জয়ে প্রতিক্রিয়া মমতার

কলকাতা, ২৮ নভেম্বর (হি.স): পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার । প্রথমবার উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা আসনে জয়লাভ করল তৃণমূল । খড়গপুর সদর ও করিমপুরেও জয়লাভ করেছে তৃণমূল । কালিয়াগঞ্জে জয়ের পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করেন । জয়ের কৃতিত্ব ভোটারদের দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর কথায়, ‘ঔদ্ধত্য আর অহঙ্কারের ফল পেয়েছে বিজেপি। এই জয় মানুষের জয় । ‌বাংলায় ঔদ্ধত্য চলে না’‌ ।

সকাল থেকেই বাড়িতে বসে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । সেই সঙ্গে টেলিফোনে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছিলেন দুই মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে । তিন আসনেই তৃণমূলের জয় যে অনিবার্য তা আন্দাজ করেই তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
বলেন, ‘লোকসভা ভোটের পর থেকেই বিজেপির দম্ভ বেড়ে গিয়েছিল । এনআরসি করে দাও, একে নাগরিকত্ব দাও ওকে দেশ থেকে বের করে দাও । যেন জমিদারি ওদের । নাগরিকত্ব দেওয়ার ওরা কে । এমনিতেই তো সবাই এ দেশের নাগরিক ।‘

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, ‘বিজেপি এর আগে কালিয়াগঞ্জের রাজবংশীদের ভুল বুঝিয়েছিল । কিন্তু এবার আর তাঁরা বিজেপির ফাঁদে পা দেননি । তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন । খড়্গপুরে আবার অবাঙালিরা আমাদের প্রচুর ভোট দিয়েছেন । সব ধর্ম, জাতি ও ভাষাভাষি মানুষ যে তৃণমূলের পাশে রয়েছেন, আমাদের সমর্থন করছেন তা এই ভোট ফলাফলে পরিষ্কার । এই জয় তাই মানুষের জয় ।‘
বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘বাংলায় অহঙ্কারের জায়গা নেই । বিজেপি অকারণে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করছিল। বাংলাকে ক্রমাগত অপমান করছিল । ঔদ্ধত্যের ফল পেয়েছে বিজেপি । এই প্রথম আমরা কালিয়াগঞ্জে জয় পেলাম । এই জয় মানুষের জয় ।’  

উপনির্বাচনে জয়ের পর প্রত্যাশিকভাবেই উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মমতার গলায় এখন  আত্মবিশ্বাস ।  বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের  ‘ঊনিশে হাফ, একুশে সাফ’ কটাক্ষকে বিঁধলেন নিজস্ব ভঙ্গিতে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের  খোঁচা, ‘এটা সবে ১৯ । ২১ অনেক দেরি’ ।    
লোকসভা ভোটের আগে দিলীপ ঘোষ ঘোষণা করেছিলেন, ১৯-এ তৃণমূল হাফ । একুশে সাফ । ভোটে ১৮টি আসন প্রাপ্তির পর সেটাই হয়ে ওঠে বিজেপির যুদ্ধজয়ের মন্ত্র । গলার কাঁটার মতো সেই মন্ত্রকেই বিঁধলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বলেন,’ ‘বড় বড় কথা বলেছিল, ঊনিশে হাফ, একুশে সাফ । ৫ মাস আগে নির্বাচন হয়েছিল । মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, সাফ কারা হয়ে গেল । এটা সবে ১৯ ।  ২১ অনেক দেরি । বিজেপি বাংলার পাপ । সারা দেশের পাপ ।’      

তৃণমূলের জন্মের পর প্রথমবার কালিয়াগঞ্জ ও খড়্গপুরে জিতেছে তারা । ফলাফলে সন্তুষ্ট দলনেত্রী আবারও মনে করিয়ে দিলেন, তৃণমূলের ২১ বছর হল । কালিয়াগঞ্জ ও খড়্গপুর কোনওদিন পাইনি । এটাও আমরা পেয়েছি।  জাতি, ধর্ম জোট বেঁধে হারিয়ে দিয়েছে বিজেপিকে ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তিন আসনেই ভোটারদের ধন্যবাদ-জ্ঞাপন করতে আমি নিজে যাব । মানুষের আশীর্বাদেই তিন কেন্দ্রে সবুজ ঝড় ।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘এই ফলাফলের মাধ্যমেই মানুষ বলেছে ১-২-৩, বিজেপিকে বিদায় দিন ।’

বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে তৃণমূল সুপ্রিমো আরও বলেন, ‘গোটা দেশে সর্বনাশী খেলা খেলছে বিজেপি। নাগরিক বিল-এনআরসি  নিয়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে । বিভেদের খেলা চালাচ্ছিল । তবে ওদের ঔদ্ধত্য, অহংকার বাংলায় চলবে না । বাংলার মানুষ বুদ্ধিমান । তারাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।’ এনআরসি ইস্যুতে বিজেপিকে একহাত নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কর্নাটকের মতো রাজ্যগুলো থেকে বাংলার মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে । তারা আমাদের কাছে সাহায্য চাইছেন । আমরা কিন্তু এ রাজ্যের মানুষের একমাত্র বন্ধু । আমদের মানবিক সরকার ।’


এরপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংযোজন, ‘মানুষের ওপর বিশ্বাস, ভরসা রেখেছে তৃণমূল । বাংলার সম্প্রীতি, একতার জয়। মানুষে–মানুষে ভেদাভেদ করেছে বিজেপি । তারই ফল পেল হাতেনাতে ।’‌ এরপরেই সাবধানী মমতা বলেন, ‘আমাদের আরও নম্র হতে হবে । মানুষের পাশে থাকতে হবে।’‌
এই জয় যে আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই জয় সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই । বিশেষ করে লোকসভা ভোটের পর যে সমালোচনা ও তির্যক মন্তব্য রাজনৈতিক মহল থেকে উড়ে আসছিল তা কাটিয়ে এ যেন শীতের গোড়াতেই বসন্ত এনে দিয়েছে তৃণমূলে ।

করিমপুরে যে তৃণমূলের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে তা শাসক দলের নেতারা আগেই বলছিলেন । কারণ করিমপুর ২ নম্বর ব্লক সংখ্যালঘু অধ্যুষিত । কিন্তু তৃণমূল ভাবেনি যে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা আসনেও তাঁরা জিততে পারে । দীর্ঘ ২১ বছর পর এই কেন্দ্রে জয়লাভ করে তৃণমূল । ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটেও কালিয়াগঞ্জে কংগ্রেসের কাছে ৪৬ হাজার ভোটে হেরেছিল তৃণমূল । ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে তৃণমূল সেখানে পিছিয়ে ছিল ৫৬ হাজারেরও বেশি ভোটে । সেই ব্যবধান কমিয়ে দিয়ে তৃণমূল যে কালিয়াগঞ্জে ২৩০৪ ভোটে জিতেছে তা আদতে বিপুল জয় ।

একইভাবে বরাবরই খড়্গপুর বিধানসভা আসন অধরা ছিল তৃণমূলের কাছে । ২০১৬-র ভোটে এবং উনিশের লোকসভা ভোটে খড়্গপুরে জিতেছিল বিজেপি । লোকসভায় সেখানে ৪৫ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানের জিতেছিল বিজেপি । কিন্তু সেই ব্যবধান মুছে দিয়ে দিলীপ ঘোষকে হারিয়ে যেভাবে খড়্গপুরেও এগিয়ে গেছে তৃণমূল তা ঐতিহাসিক বললে কোনও ভুল হবে না ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *