নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে তীব্র আপত্তি জেনে রাজ্যবাসীকে বোঝানোর চেষ্টা রাম মাধবের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ নভেম্বর৷৷ সংসদের শীতকালিন অধিবেশনে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করাতে দৃঢ় মনস্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ স্বাভাবিক ভাবেই এই বিল নিয়ে মানুষের স্নায়ুর চাপ মেপে নেওয়াটাও জরুরী বলে মনে করছে বিজেপি৷ আজ একদিনের ঝটিকা সফরে রাজ্যে এসে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব উপজাতি ভিত্তিক আঞ্চলিক দলগুলির সাথে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে কথা বলেছেন৷ তাদের ভাবাবেগ বোঝার চেষ্টা করেছেন৷ একই সাথে দলের নেতাদেরও বক্তব্য জেনে নিয়েছেন৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে শাসক জোট উপজাতি ভিত্তিক আঞ্চলিক দল আইপিএফটি এবং বিরোধী আইএনপিটি বিরোধীতা করেছে৷

শুধু তাই নয়, প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মনও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে তাঁর কাছে আপত্তি জানিয়েছেন৷ তাই আজ সন্ধ্যায় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে শারদ সম্মান অনুষ্ঠানে রাম মাধব নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে সকলকে নিশ্চিন্তে থাকতে অভয় দিয়েছেন৷ তাঁর দাবি, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সংখ্যালঘুদের ভারতে নাগরিকত্ব প্রদানের মাধ্যমে দেশের ঐতিহ্যকে বজায় রাখা হবে৷ একই সাথে উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিশেষ করে ত্রিপুরার জনজাতি ও স্থায়ী নাগরিকদের অধিকার খর্ব করা হবে না৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে সকলকে নিশ্চিন্তে থাকতে বলেছেন৷


সামনেই এডিসি নির্বাচন৷ ফলে, নির্বাচনের আগে উপজাতি মহল্লায় দলের ভিত মজবুত হয়েছে কি না তা যাচাই করে নেওয়াও প্রয়োজন বলে মনে করেছে বিজেপি৷ তবে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে ত্রিপুরার মতামত জেনে নেওয়া বিজেপির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ উত্তর পূর্বাঞ্চলের পার্বতী রাজ্য ত্রিপুরা জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল বলেও পরিচিত৷ ফলে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল জনজাতি ভাবাবেগকে কতটা নাড়িয়েছে তা বুঝে নিতেই এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব, এমনটাই মনে করা হচ্ছে৷ এদিন তিনি রাজ্য অতিথিশালায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বদের সাথে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন৷ তাদের আলোচ্য বিষয়ে সাংগঠনিক ও এডিসি নির্বাচনও প্রাধান্য পেয়েছে বলে সূত্রের দাবি৷ দলীয় নেতাদের সাথে বৈঠক শেষে রামমাধব শাসক জোট আইপিএফটি এবং আইএনপিটির কাছ থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সম্পর্কে মতামত জেনেছেন৷ প্রদেশ কংগ্রেস প্রাক্তন সভাপতি প্রদ্যুৎ কিশোরও এই বিল নিয়ে মতামত জানিয়েছেন তাঁর কাছে৷


এদিন আইপিএফটির সাধারণ সম্পাদক তথা উপজাতি কল্যাণমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধীতা করেছে আইপিএফটি৷ তিনি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এবং এনআরসি ইস্যুতে দিল্লীতে সবিস্তারে আলোচনা হবে বলে স্থির হয়েছে৷ ওই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উপস্থিত থাকবেন৷ মেবার কুমার জমাতিয়ার কথায়, ১৯৪১, ১৯৫১ এবং ১৯৭১ এ প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে বহু নাগরিক ত্রিপুরায় এসেছেন৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হলে ত্রিপুরায় জনজাতিরা আরও সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে৷ তাঁর ধারণা, রাজ্যের ত্রিশ শতাংশ জনসংখ্যা থেকে জনজাতিরা কমে কুড়ি শতাংশে পৌঁছাবে৷ তাঁর মতে, ত্রিপুরা এমনিতেই অতি জনাকীর্ণ৷ ফলে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে নাগরিকদের এরাজ্যে নাগরিকত্ব দেওয়া হলে ত্রিপুরার ভারসাম্য নষ্ট হবেই৷ তিনি জানান, সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ হওয়ার আগে উত্তর পূর্বাঞ্চলের জনজাতি নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বৈঠক করবে বলে মনে হচ্ছে৷


এদিকে, প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদ্যুৎ কিশোর জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আবারও রাম মাধবের কাছে আপত্তি জানিয়েছি৷ ওই বিল সংসদে পেশ করার আগে রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা করা হোক, ওই দাবী রাম মাধবের কাছে জানানো হয়েছে৷ তিনি বলেন, আইএনপিটিও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের তীব্র বিরোধীতা করেছে৷
আজ দিনভর নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে এই রাজ্যের মানুষের ভাবাবেগ বুঝেছেন রাম মাধব৷ তাই এদিন সন্ধ্যায় আগরতলায় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে শারদ সম্মান অনুষ্ঠানে তিনি রাজ্যবাসীকে আশ্বস্থ করেছেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব প্রদানে এ রাজ্যের জনজাতি ও স্থায়ি নাগরিকদের অধিকার খর্ব করা হবে না৷ এদিন তিনি বলেন, নাগরকিত্ব সংশোধনী বিল খুবই গুরত্বপূর্ণ৷

বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, শিখ ও পার্সি জাতির নাগরিকদের এদেশে নাগরিকত্ব প্রদানে সংশোধনী বিল সংসদে পেশ হতে চলেছে৷ তিনি বলেন, এদেশে তাঁদের আতিথেয়তা ভারতের কর্তব্য৷ দুই হাজার বছরের ওই ঐতিহ্যই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের মাধ্যমে বজায় রাখা হবে৷ তিনি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ভারতের জনতত্বে কোনও প্রভাব ফেলবে না৷ তাঁর দাবি, ভারতের কৃষ্টি, সংসৃকতি, ভাষা ও সামাজিক সৌভ্রাতৃত্বেও ওই বিল কোনও প্রভাব ফেলবে না৷ প্রত্যেকটি বিষয়ের সুরক্ষা সুনিশ্চিতের মাধ্যমেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনা হচ্ছে৷


এদিন তিনি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করার ক্ষেত্রে ত্রিপুরার বিষয়টিও মাথায় রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তাঁর কথায়, ১৯৭১ এ সমসাময়িক কালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রচুর মানুষ এই রাজ্যে এসেছেন৷ তাঁর দাবি, তাঁদের নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করার জন্যই ওই বিল আনতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ একই সাথে জনজাতিদের অধিকারও সুরক্ষিত রাখার জন্য ভেবেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তিনি আশ্বস্থ করেন, এই রাজ্যের জনজাতিদের অধিকারে কোন হস্তক্ষেপ করা হবে না৷ কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল৷ তাঁর সাফ কথা, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের শরণার্থীদের এদেশে নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে, কিন্তু দেশের বর্তমান নাগরিকদের ক্ষতিগ্রস্তের বিনিময়ে নয়৷


এদিকে, ওই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবও রাজ্যবাসীকে আশ্বস্থ করেছেন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে একজনও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না৷ বরং ওই বিল দেশ ও রাজ্যের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *