প্রাণকান্ত হত্যা : ধৃত আরও এক

নিজস্ব প্রতিনিধি, চুড়াইবাড়ি, ১৭ নভেম্বর৷৷ উত্তর ত্রিপুরার কদমতলা থানাধীন মধ্য ব্রজেন্দ্রনগর এলাকার তাঁতিপাড়ায় প্রাণকান্ত দাস (২৫) খুনের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে আরও একজনকে রবিবার গ্রেফতার করেছে কদমতলা থানার পুলিশ৷ প্রাণকান্ত খুনের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে এ-নিয়ে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷


পুলিশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যে তিন খুনিকে গ্রেফতারের পর রবিবার গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁতিপাড়ার জনৈক বাদল তাঁতির ছেলে মদন তাঁতি (৩৫)-কে৷ জানা গেছে, এই খুন কাণ্ডের পর তিনজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মদনের নাম প্রকাশ্যে আসে৷ এ ঘটনার আরেক অভিযুক্ত এখনও পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ৷


প্রসঙ্গত, গত ১১ নভেম্বর সকালে ত্রিপুরার উত্তর জেলার কদমতলা থানাধীন ব্রজেন্দ্রনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য ব্রজেন্দ্রনগর এলাকার গভীর জঙ্গলে গরু চরাতে গিয়ে এক ব্যক্তি একটি পাহাড়ি ছড়ায় সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় একটি মৃতদেহ উপুর হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন৷ ভয় পেয়ে তিনি তড়িঘড়ি বিষয়টি গ্রামবাসীর নজরে আনেন৷ ইত্যবসরে খবর পেয়ে দলবল নিয়ে অকুস্থলে উপস্থিত হন ধর্মনগর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রাজীব সূত্রধর ও কদমতলা থানার ওসি কৃষ্ণধন সরকার৷ তাঁরা পচাগলা বিবস্ত্র অজ্ঞাতপরিচয়ের মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কদমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যান৷


খবর পেয়ে পরেরদিন কদমতলা থানায় ছুটে আসেন মৃত যুবকের বড় বোন অর্চনা দাস ও তার আত্মীয় পরিজনরা৷ তার পর তাঁরা কদমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে মৃতদেহটি দেখে শনাক্ত করেন৷ মৃত যুবক প্রাণকান্ত দাসের বোন অর্চনা দাস জানান, তাঁরা দুই ভাই ও দুই বোন৷ বছর দুয়েক আগে মা মারা যান৷ বাবা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত৷ বর্তমানে তাঁরা নিজের গ্রাম ছেড়ে পশ্চিম পানিসাগরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ছোট বোনের বাড়িতে বাবা ও ছোট ভাই প্রাণকান্তকে নিয়ে বসবাস করতেন৷ মাঝে-মধ্যে বজেন্দ্রনগরের তাঁতিপাড়ার বাড়িতে এসে প্রাণকান্ত দেখাশোনা করে যেত৷


বোন অর্চনা আরও জানান, বড় ভাই সৌদি আরবে কর্মরত৷ বেশ কয়েক বছর আগে দুই বোনের বিয়ে হয়েছে৷ ছোট ভাই প্রাণকান্ত দাসও সৌদি আরবে থাকত৷ কিন্তু বছর দুয়েক আগে সে সৌদি আরব থেকে বাড়িতে এসে আর যায়নি৷ প্রাণকান্ত অসুস্থ বাবা ও ব্রজেন্দ্রনগরের বাড়ি দেখাশোনা করত৷ মাঝে-মধ্যে কাঠমিস্ত্রির কাজ করে নিজের পরিবার প্রতিপালন করত সে৷


গত ৮ নভেম্বর শুক্রবার প্রাণকান্ত পশ্চিম পানিসাগরের বোনের বাড়ি থেকে ব্রজেন্দ্রনগরে নিজেদের বাড়িতে আসে, দেখাশুনার জন্য৷ কিন্তু আর ফিরে যায়নি৷ বোন ও আত্মীয় পরিজনদের ধারণা ছিল, হয়ত-বা সে ব্রজেন্দ্রনগরের বাড়িতে রয়ে গিয়েছে৷ বজেন্দ্রনগর এলাকাটি ভারত-বাংলা সীমান্তে হওয়ায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকায় ফোনেও যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছিল না৷


অর্চনা বলেছিলেন, তাঁতিপাড়ায় অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে তারা প্রাণকান্তের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু নেটওয়ার্কের গোলযোগে তা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি৷ প্রাণকান্তের বোন কাঁদতে কাঁদতে আরও জানান, তাদের ব্রজেন্দ্রনগরের বাড়ির পাশে জনৈক শচীন্দ্র তাঁতির ছেলে নিবোধ তাঁতির জমি সংক্রান্ত বিবাদ চলছিল বহুদিন ধরে৷ তাই তিনি ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য পাশের বাড়ির নিবোধ তাঁতিদের প্রতি সন্দেহ ব্যক্ত করেছেন৷ এই সন্দেহের বশে প্রাণকান্তের বোন অর্চনা দাস কদমতলা থানায় নিবোদ তাঁতি-সহ আরও তিনজনের বিরুদ্ধে এক এজাহারও দায়ের করেছিলেন৷


অন্যদিকে ধর্মনগরের এসডিপিও রাজীব সূত্রধর জানান, অর্চনা দাসের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁরা ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ৬১/১৯ নম্বরে মামলা রুজু করে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেন৷ তদন্তের পর আজ পর্যন্ত চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ ওসি কৃষ্ণধন সরকার এবং এই মামলার তদন্তকারী অফিসার বুদ্ধিমান দেববর্মাকে সঙ্গে নিয়ে এসডিপিও নিজে কোমর বেঁধে মাঠে নেমে চবিবশ ঘণ্টার মধ্যে প্রাণকান্ত দাস হত্যার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে শচীন্দ্র তাঁতির ছেলে নিবোদ তাঁতি, প্রয়াত গণেশ তাঁতির ছেলে গোবিন্দ তাঁতি এবং মনু তাঁতির ছেলে বিজন তাঁতিকে গ্রেফতার করেন৷ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আজ মদন তাঁতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷


এদিকে ওসি কৃষ্ণধন সরকার জানান, তাঁরা খুব গুরুত্ব সহকারে মামলাটির তদন্ত করছেন৷ তবে ঘটনাটি প্রেমজনিত বলে তাঁদের প্রাথমিক তদন্তে ধরা পড়েছে৷ প্রাণকান্ত দাসকে মেরে ফেলার পর তার মৃতদেহটি প্রথমে তাঁতিপাড়ার অজ্ঞাত এক বাড়িতে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল৷ পরে সুবিধামতো রাতের অন্ধকারে গভীর জঙ্গলে লাশটি ফেলা হয়েছিল৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *