নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ নভেম্বর৷৷ সাংবাদিক সুদীপ দত্তভৌমিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ধৃত টিএসআর অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডেন্ট স্বরূপানন্দ বিশ্বাসকে বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করেছে সিবিআই৷ তাঁকে পাঁচদিনের সিবিআই হেফাজতের আবেদন জানানো হয়েছিল৷ কিন্তু আদালত চারদিনের হেফাজত মঞ্জুর করেছে৷
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/11/DSC_9496-1024x681.jpg)
গতকাল সিবিআই ত্রিপুরার সাংবাদিক সুদীপ দত্তভৌমিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে টিএসআর অ্যাসিস্ট্যান্ট কমাডেন্ট স্বরূপানন্দ বিশ্বাসকে গ্রেফতার করেছিল৷ সূত্রের খবর, সুদীপ দত্তভৌমিক হত্যার সঙ্গে মূল অভিযুক্ত টিএসআর কমাডেন্ট তপন দেববর্মার সাথে ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছিলেন টিএসআর অ্যাসিস্ট্যান্ট কমাডেন্ট স্বরূপানন্দ বিশ্বাসও৷ তাই সিবিআই তাকে গ্রেফতার করেছে৷
২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর আগরতলার শহরতলি বোধজংনগর থানার অধীন আরকে নগরে অবস্থিত টিএসআর-এর দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নের ক্যাম্পে নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক সুদীপ দত্তভৌমিক৷ তাঁকে পর পর দুটি গুলি করে টিএসআর জওয়ানরা হত্যা করেছিল৷ কমান্ডেন্ট তপন দেববর্মার নির্দেশেই তাঁকে খুন করা হয়েছিল বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে৷ ওই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে কমান্ডেন্ট তপন দেববর্মা, নায়েক সুবেদার অমিত দেববর্মা, রাইফেলম্যান নন্দকুমার রিয়াং ও ধর্মেন্দ্র সিংকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল৷
সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর বিজেপি ত্রিপুরা বনধপালন করেছিল৷ এছাড়া ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ত্রিপুরা-সহ সারা দেশ তোলপাড় হয়েছে৷ আগরতলায় ত্রিপুরা পুলিশের দেওয়া ফ্লোরোজিন জ্যাকেট পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন রাজ্যের সাংবাদিকরা৷ বিজেপি-র ত্রিপুরা প্রদেশ কমিটি ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বাসভবন ঘেরাও করেছিল৷ শুধু তা-ই নয়, অসমের সাংবাদিকরাও ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের কুশপুত্তলিকা দাহ করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন৷ ওই সময় সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডে সিবিআই দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল বিজেপি৷ তাছাড়া ত্রিপুরায় ক্ষমতার পরিবর্তন হলে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল বিজেপি৷
সেই মোতাবেক ত্রিপুরায় ২০১৮ সালে ক্ষমতার পালাবদলের পর বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার সাংবাদিক শান্তনু ভৌমিক ও সাংবাদিক সুদীপ দত্তভৌমিক হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়৷ সিবিআই ওই মামলা গ্রহণ করেছিল৷
এদিকে, পূর্বতন সরকার সাংবাদিক হত্যা মামলায় এসআইটি গঠন করেছিল৷ দন্ত শেষে আদালতে চার্জশিটও জমা দিয়েছিল এসআইটি৷ টিএসআর-এর কমাডেন্ট তপন দেববর্মা এবং রাইফেলম্যান নন্দকুমার রিয়াং বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছে৷ কিন্তু নায়েক সুবেদার অমিত দেববর্মা এবং রাইফেলম্যান ধর্মেন্দ্র সিং জামিন পেয়েছেন৷
গতকাল সিবিআইয়ের তিন আধিকারিক টিএসআর-এর অযাসিস্ট্যান্ট কমান্ডেন্ট সর্বানন্দ বিশ্বাসকে গ্রেফতার করেন৷ তিনি হত্যাকাণ্ডের সময় টিএসআর দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন৷ বর্তমানে তিনি টিএসআর তৃতীয় ব্যাটালিয়নে কর্মরত৷
আজ সিবিআই-এর আইনজীবী প্রবীর সাহা জানিয়েছেন, সাংবাদিক হত্যা মামলায় ত্রিপুরা পুলিশের এসআইটি আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে৷ ফলে পরবর্তী তদন্তের জন্য ত্রিপুরা সরকার ওই মামলা সিবিআই-এর হাতে তুলে দিয়েছে৷ সেই মোতাবেক সিবিআই পৃথক একটি মামলা নথিভুক্ত করেছে৷ প্রবীরবাবু জানিয়েছেন, ওই হত্যাকাণ্ডের সময় প্রকৃতভাবে কী ঘটেছিল সিবিআই তা এখন খোঁজে বের করবে৷ এ-ক্ষেত্রে টিএসআর-এর অ্যাসিস্টেন্ট কমাডেন্ট স্বরূপানন্দ বিশ্বাস ওই হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত আছেন বলে সিবিআই প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে৷ তাই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷
তিনি জানান, আজ মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে সিবিআই স্বরূপানন্দ বিশ্বাসের পাঁচদিনের হেফাজত চেয়েছিল৷ আদালত চারদিনের সিবিআই হেফাজত মঞ্জুর করেছে৷ আগামী ১৮ নভেম্বর পুনরায় তাকে আদালতে তুলবে সিবিআই৷ সূত্রের খবর, তাকে প্রাচীন আগরতলা থানার লকআপে রেখে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করবে৷