মাছিমায় আগুনে বিধবস্ত সিপিএম’র পার্টি অফিস পরিদর্শনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সহ বিধায়ক দলকে বাধা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ নভেম্বর৷৷ একটা সরকার কতটা জনবিচ্ছিন্ন হলে মানুষের আস্থা ফেরানোর বদলে তাদের ভয় পাচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার সিপাহিজলা জেলার অধীন মাছিমাবাজারে আগুনে বিধবস্ত অফিস পরিদর্শনে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের বাধা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এভাবেই বিজেপিকে নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম-এর পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার৷ তিনি কটাক্ষ করে বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পুরণ করার বদলে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজেপির সহায়ক হবে না৷ বরং সময়ের সাথে রাজ্যের মানুষ ক্রমশ প্রতিবাদী হয়ে উঠবেন৷


বৃহস্পতিবার মানিক সরকার বিধায়কদের এক প্রতিনিধি দলকে নিয়ে মাছিমাবাজারে আগুনে বিধবস্ত সিপিএম-এর পার্টি অফিস পরিদর্শনে যান৷ পথে তাদেঁর বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷ শুধু তা-ই নয়, মানিক সরকার গো-ব্যাক স্লোগান তুলে তাঁদের পথ আটকেছে দুর্বৃত্তরা, এমনই অভিযোগ বিরোধী দলনেতার৷ আজ তিনি সোনামুড়া পার্টি অফিসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, বিরোধীরা এ রাজ্যে থাকতে পারবেন না, এমনটা বলে দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়৷ কারণ, ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তাতে বিরোধীদের কোনও স্থান রয়েছে বলে তিনি মনে করছেন না৷ তবে, রাজ্যের মানুষ এই পরিস্থিতি মেনে নেবেন না বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর কথায়, ক্রমশ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়ছে৷


তিনি বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, একটা সরকার কতটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে মানুষের আস্থা ফেরানোর বদলে তাদের ভয় পাচ্ছে৷ অবশ্য মানুষ যেভাবে প্রতিবাদী হয়ে উঠছেন তাতে তাদের ভয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে দাবি করেন তিনি৷ মানিক সরকারের কথায়, যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট বৈতরণী পার হয়েছিল বিজেপি সে প্রতিশ্রুতি পালন করতে না পেরে এখন বিরোধীদের মিছিল-মিটিং করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু মানুষ এখন আর ঘরে বসে থাকছেন না৷ কয়েকদিন আগে তফশিলি জাতি সমন্বয় কমিটির সমাবেশ ও গতকাল কৃষকসভার জনসভায় প্রমাণিত হয়েছে, মানুষ এখন রাস্তায় নামতে শুরু করেছেন৷ তাই বিজেপি ভয় পাচ্ছেন৷ তাঁর দাবি, সেই ভয় থেকেই আজ তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে৷


এদিকে এক বিবৃতিতে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী জানিয়েছে, আজ সিপিআই (এম)-এর একটি বিধায়ক দল রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের নেতৃত্বে সোনামুড়া মহকুমার ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রের মাছিমাবাজারে গত ১২ নভেম্বর রাজ্যের শাসক দল বিজেপি-আশ্রিত দুর্বৃত্ত বাহিনীর দেওয়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সিপিআইএম অফিসটি পরিদর্শনে রওয়ানা হয়েছিলেন৷ বিধায়ক দলে বিরোধী দলনেতা ছাড়া ছিলেন সিপিএম-এ পরিষদীয় দলের সচেতক তপন চক্রবর্তী, বিধায়ক রতন ভৌমিক, বিধায়ক সুধন দাস, বিধায়ক নারায়ণ চৌধুরী এবং বিধায়ক শ্যামল চক্রবর্তী৷ বিধায়ক দলের মাছিমাবাজারে আগুনে বিধবস্ত অফিসটি পরিদর্শনে যাওয়ার কর্মসূচি রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশককে নাকি গতকালই জানানো হয়েছিল৷


বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজ মাছিমাবাজারের সোয়া কিলোমিটার আগে বিজেপির সিপাহিজলা জেলা যুবমোর্চার সভাপতি প্রসেনজিৎ ঘোষের নেতৃত্বে কিছু যুবক রাস্তা অবরোধ করে সিপিএম-এর বিধায়ক দলকে আগুনে বিধবস্ত পার্টি অফিসটি দেখতে যেতে বাধা দেন৷ তারা স্লোগান তুলেন মানিক সরকার গো ব্যাক৷ ফলে বিধায়ক দলের মাছিমাবাজারে বিজেপি দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত অফিসটি পরিদর্শন করতে যাওয়া সম্ভব হয়নি৷


বিবৃতিতে রাজ্যে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের কোনও অস্তিত্ব নেই বলে হয়েছে৷ পাশাপাশি সমালোচনায় বলা হয়েছে, বিরোধী দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকা বিনা বাধায় যাওয়ার কোনও পরিবেশ নেই৷ আজ বিরোধী দলনেতা-সহ বিধায়ক দলকে সড়ক অবরোধ করে বাঁধা দেওয়ার ঘটনা তার একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত৷ সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *