মহারাষ্ট্রে দিনভর তৎপর শিবসেনা, শেষবেলায় এনসিপি-কে সরকার গড়তে ডাকলেন রাজ্যপাল

মুম্বই, ১১ নভেম্বর (হি.স.) : মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগতসিং কোশিয়ারির কাছে গিয়ে সরকার গড়ার দাবি জানাল শিবসেনা। সোমবার সরকার গড়ার দাবি জানাতে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন শিবসেনা সুপ্রিমো উদ্ধব ঠাকরের পুত্র আদিত্য ঠাকরে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শিবসেনার শীর্ষ নেতৃত্ব। বৈঠকে ছিলেন শিবসেনার বর্ষীয়ান নেতা একনাথ শিণ্ডে। এরপর রাজ্যের তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে এনসিপি-কে ডেকে পাঠান রাজ্যপাল। এদিন সকালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শিবসেনা সাংসদ অরবিন্দ সাওয়ান্ত|  

শিবসেনার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক বজায় রেখে সমস্ত রকমের চেষ্টা করেছে বিজেপি বলে সোমবার জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সংসদবিষয়কমন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। পাশাপাশি শিবসেনা যে শর্ত চাপিয়েছে তা অবাস্তব বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। মহারাষ্ট্রে শিবসেনাকে পাঁচ বছরের জন্য সমর্থন করা উচিত কংগ্রেসের বলে সোমবার জানিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা জেডি(এস) নেতা এইচ ডি দেবেগৌড়া। আদিত্য ঠাকরেকে সম্ভাবনাময় এবং দূরদর্শী নেতা হিসেবে অভিহিত করেছেন সদ্য প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী তথা শিবসেনা সাংসদ অরবিন্দ সাওয়ান্ত। এদিকে  রাজ্যপালের কাছে ২৪ ঘন্টা সময় চাইল এনসিপি। এই প্রসঙ্গে রাজ্যপালের কাছে ২৪ ঘণ্টা সময় চাইল এনসিপি। এদিন রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অজিত পাওয়ার, ধনঞ্জয় মুণ্ডে। অন্যদিকে এনসিপি নেতা নবাব মালিক জানিয়েছেন কংগ্রেসের সঙ্গে বৈঠক করে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


 সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আদিত্য ঠাকরে জানিয়েছেন, রাজ্যপালের কাছে শিবসেনা সরকার গড়ার দাবি জানিয়েছে। রাজ্যপালের কাছে দুইদিন সময় চাওয়া হলেও তিনি তা খারিজ করে দেয়। আদিত্য ঠাকরে আরও জানিয়েছেন, রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে শিবসেনা সরকার দাবি জানিয়েছে। কংগ্রেস এবং শিবসেনার সঙ্গে কথা হয়েছে। গোটা প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য তিনদিন সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যপাল তা দিতে অস্বীকার করেছে।


অন্যদিকে শিবসেনাকে সমর্থনের প্রসঙ্গ ধোঁয়াশা রেখে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে জানিয়েছেন, কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি এবং প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সোনিয়া গান্ধী ইতিমধ্যেই এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের সঙ্গে কথা বলেছেন। মঙ্গলবারও এই নিয়ে বৈঠক হবে। তখনই বিষয়টি স্পষ্ট।


অপর কংগ্রেস নেতা মানিকরাও ঠাকরে জানিয়েছেন, রাজ্যপালের কাছে কংগ্রেস এবং এনসিপির তরফ থেকে কোনও চিঠি যায়নি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।


উল্লেখ করা যেতে পারে শিবসেনা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করলেও কংগ্রেস এবং এনসিপির কোনও চিঠি দেখাতে পারেনি শিবসেনা নেতারা।

সোমবার সকালে শিবসেনা সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প এবং পাবলিক এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রী অরবিন্দ সাওয়ান্ত ঘোষণা করেছেন, কেন্দ্রের এনডিএ সরকার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি| কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন অরবিন্দ সাওয়ান্ত| সোমবার সকালে মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে অরবিন্দ সাওয়ান্ত লিখেছেন, ‘সেনার অবস্থান সত্য? মিথ্যা পরিবেশে আমি কেন দিল্লিতে থাকব? আমি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করছি|’ অরবিন্দ সাওয়ান্তের মতে, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে, ক্ষমতা এবং আসন ভাগ করা নিয়ে একটি ফর্মুলা তৈরি করা হয়েছিল| শিবসেনা এবং বিজেপি উভয়েই তাতে সম্মত হয়েছিল| অপর একটি টুইটে সাওয়ান্ত লিখেছেন, ‘কিন্তু এখন, সমস্ত কিছু অস্বীকার করা হচ্ছে এবং শিবসেনাকে মিথ্যে প্রমাণিত করার প্রচেষ্টা চলছে| যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক|


সোমবার কর্ণাটকের হুব্বল্লিতে এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিবসেনাকে চূড়ান্ত কটাক্ষ করে প্রহ্লাদ জোশী জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে শিবসেনা যতটুকু আসন পেয়েছে তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ভারী শিল্পমন্ত্রীর পদ থেকে অরবিন্দ সাওয়ান্তের পদত্যাগকে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে আখ্যা দিয়েছেন প্রহ্লাদ জোশী। বেলগামীতে দুই বিজেপি নেতা রাজু কাঙে আর অশোক পুজারির সম্প্রতি কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমারের সঙ্গে দেখা করেছেন। এই বিষয়ে প্রহ্লাদ জোশী জানিয়েছেন যে দুই নেতার সঙ্গে তার কথা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

সোমবার এইচ ডি দেবেগৌড়া জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রে যদি শিবসেনাকে  কংগ্রেস সমর্থন করে তবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য সেই সমর্থন বজায় রাখা উচিত। তবে তখনই মানুষ কংগ্রেসের উপর আস্থাশীল হয়ে উঠবে। পাঁচ বছরের জন্য কোনও রকম ভাবেই শিবসেনাকে বিরক্ত করা উচিত নয় কংগ্রেসের।
মহারাষ্ট্রের পুরনো দিনের রাজনৈতিক সমীকরণের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে এইচ ডি দেবেগৌড়া জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রে বিজেপিকে রাজনৈতিক জায়গা করে দিয়েছিলেন বাল ঠাকরে। এমন আসন সমঝোতা করতে বাল ঠাকরের বাসভবনে যেতে হয়েছিল অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। আজ বিজেপি সেই ইতিহাস ভুলে গিয়েছে। এখন উদ্ধব ঠাকরে ঠিকই করে রেখেছেন যে তিনি বিজেপিকে উচিত শিক্ষা দেবেন।

সোমবার কেন্দ্রীয় ভারীশিল্পমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছে অরবিন্দ সাওয়ান্ত। শিবসেনা সুপ্রিমো উদ্ধব ঠাকরের পুত্র আদিত্য ঠাকরে প্রশংসা করে অরবিন্দ সাওয়ান্ত জানিয়েছেন, আদিত্য ঠাকরের মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকৃত নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে তাঁর মধ্যে দূরদর্শীতা রয়েছে। দেশের এক দূরদর্শী নেতা হচ্ছে আদিত্য ঠাকরে। বিজেপিকে বাদ দিয়ে অন্য দলের সাহা্য্য নিয়ে রাজ্যে সরকার গড়তে চাইছে শিবসেনা। সেই কারণেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে তাঁর এই ইস্তফা বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ করা যেতে পারে আদিত্য ঠাকরেকে মুখ্যমন্ত্রী করা নিয়ে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার পড়েছে। পাশাপাশি বিজেপির কাছে শিবসেনা দাবি করেছিল আড়াই বছর করে মুখ্যমন্ত্রী পদ ভাগ করে নেওয়ার। কিন্তু শিবসেনার সেই শর্ত মানেনি বিজেপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *