নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ নভেম্বর৷৷ রাজ্যে গার্হস্থ্য সংক্রান্ত অপরাধ আরও কমিয়ে আনার লক্ষ্যে পুলিশ প্রশাসন, মহিলা কমিশন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে (এনজিও) একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁর কথায়, রাজ্যের প্রায় ৪৩ শতাংশ মহিলা তাঁদের স্বামী বা নিকট আত্মীয়দের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে থাকেন৷ এক্ষেত্রে নতুন যাঁদের বিয়ে হবে সেই সব নবদম্পতির বিবাহ নিবন্ধীকরণ করার উপর গুরুত্ব দিতে হবে৷ আজ প্রজ্ঞাভবনে ’মহিলা সংক্রান্ত অপরাধে তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক তিনদিনের কর্মশালার উদ্বোধন করে এ-কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব৷
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/11/75310390_2098811153553882_8346298388836253696_n.jpg)
প্রসঙ্গত, পুলিশ দফতরের উদ্যোগে এবং জাতীয় মহিলা কমিশনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই কর্মশালায় ৫০ জন পুলিশ আধিকারিককে মহিলা সংক্রান্ত অপরাধে তদন্তের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে৷ এঁদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি রয়েছেন মহিলা পুলিশ আধিকারিক৷
উদ্বোধনী ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী দেব বলেন, ত্রিপুরায় মহিলাদের সুরক্ষিত রাখা রাজ্য সরকারের প্রধান দায়িত্ব৷ বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজ্যে মহিলা সংক্রান্ত অপরাধ অনেক কমেছে৷ এটা রাজ্যের জন্য একটা শুভ লক্ষণ ৷ কিন্তু আমরা চাই রাজ্যে কোনও ধরনের মহিলা নির্যাতনের ঘটনা যাতে না ঘটে৷ এক্ষেত্রে নববিবাহিত দম্পতিদের বিবাহ নিবন্ধীকরণের পাশাপাশি ১৪-২০ বছর বয়সি ছেলে-মেয়েদের প্রতিও বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে সমাজ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে ৷ আর সমাজ ব্যবস্থা তখনই শক্তিশালী হবে যখন মহিলাদের শক্তিশালী ও সচেতন করা যাবে ৷ তাঁর মতে, মহিলারা সুরক্ষিত থাকলে তা সমাজের পক্ষে মঙ্গল ৷ কারণ, বর্তমান রাজ্য সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্যাতিতা মহিলাদের সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ধর্ষণের শিকার মহিলাদের ক্ষতিপূরণ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লক্ষ টাকা করা হয়েছে, শারীরিকভাবে নির্যাতিতা বালিকাদের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লক্ষ টাকা করা হয়েছে, ত্রিপুরা ভিকটিম কমপেনসেশন স্কিম অনুসারে মানব পাচারের শিকার ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ক্ষতিপূরণ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লক্ষ টাকা করা হয়েছে, যৌন নির্যাতনের শিকার কোনও মহিলা বা বালিকার মত্যু হলে ক্ষতিপূরণ ১ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লক্ষ টাকা করা হয়েছে ইত্যাদি ৷ এছাড়াও মহিলাদের সশক্তিকরণের উদ্দেশ্যে পুলিশ প্রশাসনে নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ পদ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে ৷ ছিনতাইবাজদের কঠোর শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে কঠোর আইন প্রণয়নও করা হয়েছে, জানান তিনি৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন সরকার আসার পর মহিলা সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে খুব কম সময়ের মধ্যেই অপরাধীদের গ্রেফতারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অপরাধীদের সাজার হারও ২৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৯ শতাংশে পৌঁছেছে ৷ তাঁর দাবি, পুলিশ প্রশাসন আইন প্রয়োগে কঠোর মনোভাব নিয়ে কাজ করার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মহিলারা হচ্ছেন সমাজের শক্তির আধার ৷ রামায়ণ, মহাভারতের মতো প্রাচীন ধর্মগ্রন্থেও মহিলাদের শক্তির আধার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে ৷ তাই কোনও দেশ বা রাজ্যকে উন্নত করতে হলে মহিলাদের সুরক্ষিত রাখা একান্ত প্রয়োজন ৷ তাঁর দাবি, রাজ্যে মহিলা নির্যাতনের হার কমে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে ৷ রাজ্যের মহিলাদের সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি মহিলা কমিশন, এনজিও সবাইকে মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, পরামর্শ দেন তিনি ৷
অনুষ্ঠানে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অখিল কুমার শুক্লা বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্য হল মহিলাদের সুরক্ষা প্রদান করা ৷ এতে দেখা গেছে গত দেড় বছরে মহিলা সংক্রান্ত অপরাধ অনেক কমেছে ৷ তিনি বলেন, মহিলাদের যদি সমাজে সম্মান না থাকে তা-হলে সমাজেরও কখনও উন্নতি হতে পারে না ৷ কারণ কোনও পরিবারের শিশুদের প্রথম শিক্ষা ও সংস্কার তৈরি হয় তাদের মায়ের কাছ থেকে ৷
অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বর্ণালী গোস্বামী বলেন, রাজ্যের নির্যাতিত মহিলারা যাতে সহজেই আইনি সহযোগিতা পেতে পারেন সে বিষয়ে রাজ্য মহিলা কমিশন কাজ করছে ৷ রাজ্যে মহিলা নির্যাতনের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে মহিলা কমিশন সব সময়ই পুলিশ প্রশাসনকে সহযোগিতা করে যাবে ৷ এছাড়া বক্তব্য পেশ করেন পুলিশের অতিরিক্ত মহানির্দেশক রাজীব সিং, পুনীত রস্তোগি (আইজি, ক্রাইম অ্যান্ড ট্রেনিং) এবং রাজ্য সরকারের আইনসচিব গৌতম দেবনাথ ৷ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর এম লীলাবতী ৷