ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলিকে এগিয়ে আসতে ফের আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ নভেম্বর৷৷ সরকারে পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতি রেখে ব্যাঙ্কগুলিরও নিজস্ব কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন৷ কৃষি, রাবার, মৎস্য চাষ, প্রাণি পালন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পর্যটন এবং ডেয়ারী শিল্পের মতো অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলিতে ব্যাঙ্ক ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আজ আগরতলায় প্রজ্ঞাভবনের ৪নং হলে অনুষ্ঠিত স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির ১৩০তম সভায় এই আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ সভায় আলোচনাক্রমে তিনি বলেন, সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্ণিত করে সুবিধাভোগীদের প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদানে এগিয়ে আসতে হবে ব্যাঙ্কগুলিকে৷ একই সঙ্গে ক্ষেত্র পর্যায়ে গিয়ে গ্রামের সফল কৃষক বা স্ব-উদ্যোগীদের নামের তালিকা ব্যাঙ্কগুলির কাছে রাখার উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যাঙ্কের কাছে এসমস্ত স্ব-উদ্যোগীদের নামের তালিকা থাকলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষেরগ ঋণ প্রদানে অনেকটাই সুবিধা হবে৷ ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করাও সহজতর হয়ে উঠে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যাঙ্কের আধিকারিকগণ যারা ক্ষেত্র পর্যায়ে গিয়ে নিজ উদ্যোগে ঋণ প্রদান করে থাকেন সেই সকল আধিকারিক কিংবা ব্যাঙ্ক কর্মীদের উৎসাহিত করা দরকার৷ প্রয়োজনে তাদেরকে ইনসেন্টিভ বা পুরস্কার দেওয়ার বিষয়ে ব্যাঙ্কগুলিকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন৷ রাজ্যে আগামী দিনগুলিতে যে সমস্ত পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হবে সেই দিকেও ব্যাঙ্কগুলিকে দৃষ্টি রেখে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নিতে পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, সাব্রুমের ফেণী নদীর উপর নির্মীয়মান সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে এবং চিটাগাং বন্দর গিয়ে পণ্য পরিবহণ শুরু হলে রাজ্যে বাণিজ্য বিকাশের বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হবে৷


রাজ্যে রাইস মিল এবং স্মোকহাউস যুক্ত করার শিল্প ইউনিট গড়ার ক্ষেত্রে যে সমস্ত উদ্যোগীরা এগিয়ে আসছেন তাদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রেও ব্যাঙ্কগুলিকে উদ্যোগ নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি সভায় ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টারগুলি যাতে বিভিন্ন প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ সক্ষম হয়েছেন এবং যারা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না তাদেরকে চিহ্ণিত করে ব্যাঙ্কগুলিকে তাদের সাথে আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সভায় মুখ্যসচিব ইউ ভেঙ্কটেশ্বরলু বলেন, রাজ্য সরকার কৃষি মৎস্য চাষ এবং ডেয়ারী শিল্পের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে৷ অ্যানুয়েল ক্রেডিট প্ল্যান অর্থাৎ এসিপি-র নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলেন তিনি৷ মুখ্যসচিব কিষাণ ক্রেডিট কার্ড প্রদানে লক্ষ্যমাত্রা পৌঁছাতে চলতি মাসে জেলাশাসকদের সঙ্গে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের বৈঠক আয়োজন করার বিষয়ে আলোচনা করেন৷ ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিই ও অশোক কুমার প্রধান সভায় স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির বিস্তারিত কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত করেন৷


সভায় স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির ১২৯ তম সভায় গৃহিত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে যে সমস্ত কর্মসূূচি রূপায়ণ হয়েছে এবং যেসব ঘাটতি রয়েছে সেইগুলি নিয়ে বিশদ আলোচা করা হয় এবং চলতি বছরের নানাবিধ কর্মসূচির রূপরেখাও তৈরি করা হয়৷ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত ব্যাঙ্কের সি ডি রেশিও ৫৬ শতাংশ যা ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে ৬৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়৷ যে সকল ব্যাঙ্কের কম সিডি রেশিও রয়েছে তাদের আরও যত্নবান হয়ে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয় স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির পক্ষ থেকে৷ চলতি বছরের সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত ২১,৪৮৩ জনকে কষাণ ক্রেডি কার্ড প্রদান করা হয়েছে৷ এমএসএমই-তে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে চলতি বছরে সেপ্ঢেম্বর মাস পর্যন্ত নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৫২ শতাংশ সাফল্য এসেছে৷ পিএমইজিপি প্রকল্পে চলতি বছরের সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত ৫৩টি প্রকল্পের প্রস্তাব মঞ্জুরী দিয়েছে ব্যাঙ্ক বলে সভায় জানানো হয়৷ প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনায় ১,২০,৯৫৫ জনকে চলতি বছরের সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত ৬৯২.৮৬ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া প্রকল্পে ১৩ জন মহিলাকে ঋণ দেওয়া হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়৷ চিফ মিনিস্টার্স বি এড অনুপ্রেরণা যোজনায় চলতি বছরের সেপ্ঢেম্বর মাস পর্যন্ত ৯৮৮ জন আবেদনকারীর ঋণ মঞ্জুর করেছে ব্যাঙ্ক৷


সভায় আলোচনায় পর্যটন সহায়ক প্রকল্পে ২৪টি ঋণ প্রস্তাব মঞ্জরী দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়৷ এছাড়াও এদিনের সভায় স্বসাহায়ক গোষ্ঠীদের ঋণ প্রদান ডেয়ারী ডেভেলপমেন্ট স্কীম, শিক্ষা ক্ষেত্রে ঋণ প্রদান, বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙ্কের নতুন শাখা খোলা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়৷ এদিনের সভায় অতিরিক্ত মুখ্য সচিব মনোজ কুমার, ভারত সরকারের ফিনান্সিয়্যাল সার্ভিস দপ্তরের ডেপুটি সেক্রেটারি অশোক কুমার ডোগরা, অর্থ দপ্তরের সচিব এন ডার্লং, শিক্ষা দপ্তরের সচিব সৌম্যা গুপ্তা, মৎস্য দপ্তরের সচিব রামেশ্বর দাস, বিজার্ভ ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যনেজার সুনীল কুমার , ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার, ডি জি এম সহ বিভিন্ন ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান, প্রতিনিধি, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিক, বিভিন্ন বীমা কোম্পানীর আধিকারিকগণ অবস্থিত ছিলেন এবং আলোচনা অংশ নেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *