শরণার্থী নেতাদের সাথে প্রশাসনিক বৈঠক নিষ্ফলা, আজ থেকে চলবে সকাল-সন্ধ্যা অনির্দিষ্টকালের রাস্তা অবরোধ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ অক্টোবর৷৷ প্রশাসনিক বৈঠকেও চিরে ভিজল না৷ তাই, অনির্দিষ্টকালের রাস্তা অবরোধ আন্দোলন জারি রাখবেন রিয়াং শরণার্থীরা৷ আজ সন্ধ্যায় কাঞ্চনপুর মহকুমা শাসকের সাথে রিয়াং শরণার্থী নেতাদের বৈঠক নিষ্ফলা হাওয়ায় আগামীকাল ফের সকাল পাঁচটায় অবরোধে বসবেন তাঁরা, জানালেন শরণার্থী নেতা ব্রোনো মিশা৷


প্রসঙ্গত, মিলছে না রেশন ও আর্থিক সহায়তা৷ তাই, রিয়াং শরণার্থীরা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দশদা থেকে আনন্দবাজার রাস্তা অবরোধ করেছেন৷ এদিন সকাল পাঁচটা থেকে সংগঠিত অবরোধের জেরে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে৷ অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য উত্তর ত্রিপুরা জেলা ও মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও রিয়াং শরণার্থীরা অবরোধ তুলে নেননি৷
ত্রিপুরায় সাতটি শিবিরে আশ্রিত রিয়াং শরণার্থীদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত ৩ অক্টোবর থেকে৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার ১ অক্টোবর থেকেই বিনামূল্যে রেশন ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে৷ তাই শরণার্থীদের বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনমুখী হয়েছে৷ সম্প্রতি আগরতলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, মিজোরাম সরকার এবং ত্রিপুরা সরকারের সাথে রিয়াং শরণার্থী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷


ওই বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা শাখার প্রধানসচিব এপি মহেশ্বরী বলেছিলেন, ত্রিপুরায় আশ্রিত রিয়াং শরণার্থীদের দাবি মেনেই মিজোরামে তাঁদের প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ তাঁদের নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার রক্ষার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ শুধু তা-ই নয়, সারা দেশের নিরিখে তাঁদের সার্বিক উন্নয়নে যে ফারাক রয়েছে তা-ও মেটানোর দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছে৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরায় আশ্রিত রিয়াং শরণার্থীদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তনে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে৷ তবে তাঁরা মিজোরামে ফিরে যাওয়ার পর যে ধরনের সমস্যা সামনে আসবে তার প্রতিকার করা হবে৷


ওইদিন তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, ত্রিপুরায় কোনও শরণার্থী শিবির খোলা রাখা হবে না৷ কেন্দ্রীয় সরকার শরণার্থী শিবিরের জন্য কোনও সহায়তা প্রদান করবে না৷ তাঁর বক্তব্য, তাঁদের মিজোরামে ফিরে যেতেই হবে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, মিজোরামে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিজেদের শামিল করতে হবে রিয়াং শরণার্থীদের৷ পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিবেশের সাথেও তাঁদের মানিয়ে নিতে হবে৷ কারণ, এডিসি গঠনের দাবি সম্পূর্ণই রাজনৈতিক৷ কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে আপাতত কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে না, বলেছিলেন তিনি৷


এদিকে, মিজোরামে ফিরে যেতে কোনওভাবেই রাজি ছিলেননা রিয়াং শরণার্থী নেতারা৷ তাঁদের সাফ কথা, রিয়াং শরণার্থীদের মিজোরামে সমস্ত সমস্যা সমাধানের উপায় হল এডিসি গঠন৷ তবেই রিয়াং শরণার্থীরা মিজোরামে ফিরে গিয়ে নিজেদের সুরক্ষিত ভাবতে পারবেন৷ রিয়াং শরণার্থী নেতা জোর গলায় বলেন, প্রয়োজনে ত্রিপুরায় না খেয়ে মরে যেতেও প্রস্তুত৷ কিন্তু তাঁদের দাবি না মানলে তাঁরা মিজোরামে ফিরে যাবেন না৷


শরণার্থী নেতাদের নানা কৌশল সত্ত্বেও মিজোরামে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া চলছে৷ তবে, বিনামূল্যে রেশন ও আর্থিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শরণার্থী নেতারা আন্দোলনের ইস্যু পেয়ে যান৷ এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি পরিবার মিজোরামে ফিরে গেছে৷ কিন্তু এখনও অনেকেই মিজোরামে ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছেন না৷ তাঁদের ওই দুর্বলতার সুযোগে বিনামূল্যে রেশন এবং আর্থিক সহায়তার দাবিতে আন্দোলনমুখী হয়েছেন শরণার্থী নেতারা৷


সম্প্রতি উত্তর ত্রিপুরার জেলাশাসককে পাঠানো এক চিঠিতে রিয়াং শরণার্থী সংগঠন হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, অবিলম্বে বিনামূল্যে রেশন এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু না হলে তারা খাদ্যগুদাম লুট করবেন এবং অবরোধ সংগঠিত হবে৷ গত মঙ্গলবার উত্তর ত্রিপুরার জেলাশাসককে এক চিঠিতে ৩১ অক্টোবর দশদা থেকে আনন্দবাজার রাস্তা অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিয়েছিলেন রিয়াং শরণার্থী নেতৃবৃন্দ৷ সে-মোতাবেক আজ সকাল পাঁচটা থেকে পাঁচ শতাধিক রিয়াং শরণার্থী দশদা-আনন্দবাজার রাস্তা অবরোধ করেন৷ খবর পেয়ে আনন্দবাজার থানার ওসি, কাঞ্চনপুর মহকুমার এসডিপিও বিশাল পুলিশ ও টিএসআর নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান৷ এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য এলাকায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে৷


এদিকে, কাঞ্চনপুরের মহকুমাশাসক তাদের অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য বার বার অনুরোধ জানান৷ কিন্তু তারা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত অবরোধ প্রত্যাহার করা হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য এদিন সন্ধ্যায় রিয়াং শরণার্থী নেতাদের আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছিল৷ শরণার্থী নেতা ব্রোনো মিশা জানান, কাঞ্চনপুর মহকুমা শাসকের সাথে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে৷ কিন্তু কোন সুরাহা হয় নি৷ তিনি বলেন, মহকুমা শাসক তাদের রাস্তা অবরোধ করার বদলে কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে আন্দোলন প্রদর্শন করার পরামর্শ দিয়েছেন৷ তার দাবি, প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশন এবং আর্থিক সহায়তা চালু করার প্রতিশ্রুতি না মিললে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে না৷

এদিন তিনি জানিয়েছেন, আগামীর ফের সকাল পাঁচটায় একই স্থানে রিয়াং শরণার্থীরা রাস্তা অবরোধ করবেন৷ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলবে ওই অবরোধ কর্মসূচি৷ তিনি জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এইভাবেই প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে৷ তিনি আজ অভিযোগ, খাবারের অভাবে এক শিশু মাতৃদুগ্দ পান করতে না পেরে অনাহারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে৷ তবে চিকিৎসকদের দাবি, অজানা জ্বরে ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *