নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ অক্টোবর৷৷ রাজ্যের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যেই বিদ্যুৎ বিক্রয়ে ডিউটি বসানো হয়েছে৷ এতে অবশ্য রাজ্যের ৫২ শতাংশ ভোক্তাকে ছাড় দেওয়া হয়েছে৷ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে এ-কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী তথা উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা৷ তাঁর দাবি, বিদ্যুৎ বিক্রয়ে ডিউটি বসানোয় রাজ্য সরকারের প্রতি বছর ১১৫ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা বহিঃরাজ্য থেকে আয় হবে৷
এদিন তিনি বলেন, রাজ্যে আয় বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বিদ্যুৎ বিক্রয়৷ এটি লাভজনক ক্ষেত্র হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে৷ তাঁর কথায়, রাজ্যে আয়ের উৎস খুবই সীমিত৷ ফলে, আমাদের কেন্দ্রের উপর নির্ভর থাকতে হচ্ছে৷ তবে, ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর রাজস্ব আয় ২৫.৯৪ শতাংশ বেড়েছে, বলেন তিনি৷

উপমুখ্যমন্ত্রীর কথায়, রাজ্যে আয় বৃদ্ধির চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারের৷ কিন্তু, সাধারণ মানুষের পকেট কেটে সেই আয় করা হবে না৷ তিনি জানান, রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিক্রয়ে ডিউটি বসানো হয়েছে৷ কিন্তু, তা সম্পূর্ণ বহিঃরাজ্য থেকে আয়ের লক্ষ্যেই ওই সিদ্ধান্তে নিয়েছে ত্রিপুরা সরকার৷ এ-বিষয়ে এক হিসাব তুলে ধরে উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওটিপিসি ১,০৪৭ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা, নিপকো ১৮১ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা, বিদ্যুৎ নিগম ১৭৭ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা বহিঃরাজ্য থেকে বিদ্যুৎ বিক্রয় করে আয় করছে৷ তাছাড়া বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রয় করে নিগমের আয় হচ্ছে ৫২৪ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা৷ তাই ওই বিদ্যুৎ বিক্রয়ে ডিউটি বসিয়ে আয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ তাঁর হিসেব অনুযায়ী ওটিপিসি ৬২ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা, নিপকো থেকে ১০ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা, বিদ্যুৎ নিগম ১০ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা বহিঃরাজ্যে বিদ্যুৎ বিক্রয়ে ডিউটি বাবদ রাজ্যের আয় হবে৷ তেমনি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রয়ের ফলে ৩১ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা রাজ্য সরকারের আয় হবে৷
উপমুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজ্যের বাইরে বিদ্যুৎ বিক্রয়ে ৬ শতাংশ, রাজ্যের ঘরোয়া ভোক্তাদের কাছ থেকে ৫ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক ভোক্তাদের কাছ থেকে ৭.৫ শতাংশ হারে ডিউটি সংগ্রহ করা হবে৷ এতে রাজ্যের ভোক্তাদের কাছ থেকে ডিউটি বাবদ বছরে ২৪ কোটি টাকা রাজ্য সরকারের আয় হবে৷ অবশ্য, আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বল বিদ্যুৎ ভোক্তাদের ছাড় দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ উপমুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কুটিরজ্যোতি প্রকল্পে সমস্ত ভোক্তাদের ওই ডিউটির আওতার বাইরে রাখা হয়েছে৷ তাছাড়া, প্রতিমাসে যে গ্রাহকের ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিল আসে তাঁদেরকেও ডিউটি ছাড় দেওয়া হয়েছে৷ তাঁর কথায়, রাজ্যে ৮ লক্ষ ২৫ হাজার ৯৩৮ জন বিদ্যুৎ ভোক্তা রয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে ৪ লক্ষ ২৬ হাজার ৮৮৪ জন ভোক্তাকে ডিউটি ছাড় দেওয়া হয়েছে৷
এদিন উপমুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্যুৎ বিক্রয়ে ডিউটি আরোপ করা হচ্ছে৷ উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, অসম ৬, দিল্লিতে ৫ শতাংশ, মহারাষ্ট্রে বিভিন্ন স্তরে সর্বনিম্ন ৯.৩ শতাংশ, গুজরাটে সর্বনিম্ন ৭.৫ শতাংশ এবং তামিলনাড়ুতে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ ডিউটি সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ তাঁর দাবি, দেশে ষাটের দশকে অন্যান্য রাজ্যে ডিউটি বসানো হয়েছে৷ তিনি জানান, অসমে ১৯৬৪ সালে এবং মেঘালয়ে ১৯৭২ সাল থেকে ডিউটি সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ এদিন তিনি আশ্বাস দেন, ত্রিপুরাবাসীর কাঁধে বোঝা চাপিয়ে সরকার আয় করবে না৷ তবে, রাজ্যের স্বার্থে সামান্য অংশীদারিত্ব নিতে হবে একাংশ রাজ্যবাসীকে৷

