শিক্ষাঙ্গন হতে হবে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ অক্টোবর৷৷ শিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আজ মহাকরণে এক পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন৷ বৈঠকে বিদ্যালয় শিক্ষা, বুনিয়াদী শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা এবং সমগ্রশিক্ষা অভিযানের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়৷ পর্যালোচনায় বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো সম্পর্কিত বিষয়, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, পানীয় জল, বিদ্যুতায়ন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় যেমন উঠে আসে, তেমনি গুণগত শিক্ষার জন্য যথাযথ মনিটরিং এবং মূল্যায়নের উপরও গুরুত্বারোপ করা হয়৷

পর্যালোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, শিক্ষাঙ্গন হতে হবে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন৷ বিদ্যালয়ের শৌচাগার সহ সার্বিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর, স্থানীয় প’ায়েত ও পুর সংস্থা মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করায় তিনি তার প্রশংসা করেন৷ তিনি বলেন, এতে শ্রমদিবসের ভিত্তিতে চার হাজারের বেশি লোক কাজের সুযোগ পাবেন৷ পাশাপাশি প্রতিটি জেলাতেই অন্তত একটি করে মডেল সুকল গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা দপ্তরকে উদ্যোগ নিতে বলেন তিনি৷

এতে অন্যান্য বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাও মডেল সুকলে গিয়ে শিক্ষামূলক ভ্রমণ করতে পারবে এবং অনুপ্রাণিত হতে পারবে৷ শিক্ষা দপ্তরের মার্ট ক্লাস কর্মসূচিকে আরও সম্পসারিত করার জন্য গুরুত্বারোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মাধ্যমিক ও দ্বাদশে অনুত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা যেন বিদ্যালয়ে গিয়ে পুনরায় শিক্ষা নিতে পারে সেজন্য তাদের পুনরায় বিদ্যালয়ে ভর্তি করার বিষয়েও শিক্ষা দপ্তরকে উদ্যোগ নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, এতে তারা সুকলছুট হবে না এবং পরের বছর পাশ করতে পারবে৷ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কলেজের কাছাকাছি স্থানে হোস্টেল চালু করার উপর তিনি গুরুত্ব দেন৷ এদিনের বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ, মুখ্যসচিব ইউ. ভেঙ্কটেশ্বরলু উপস্থিত ছিলেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন৷


পর্যালোচনা বৈঠকে শিক্ষা দপ্তরের সচিব সৌম্যা গুপ্তা দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচি উপস্থাপন করেন৷ শিক্ষা দপ্তরের মূল করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে সচিব গুণগত শিক্ষার জন্য দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে অবগত করেন৷ ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সভায় শিক্ষা দপ্তর যে যে কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে এদিনের সভায় অনুপূঙ্খ আলোচনা করা হয়৷ তার মধ্যে এন সি ই আর টি-র সিলেবাস অনুবাদ করে শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান৷ এই সিলেবাস অনুযায়ী শিক্ষা দেওয়ার জন্য ৩১,২৬৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান৷ বিদ্যালয় শুরুর সময়সূচির পরিবর্তন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানান, ৩,২০১টি সিঙ্গেল শিফট বিদ্যালয়ের সময়সূচি পরিবর্তন করে সকাল আটটা থেকে বিদ্যালয় চালু করা হয়েছে৷ স্বচ্ছ বিদ্যালয় স্বচ্ছগ্রাম কর্মসূচি সম্পর্কে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়৷


সচিব জানান, প্রতিটি বিদ্যালয়েই শৌচাগার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে৷ বিদ্যালয়ে বিদ্যতায়নের জন্য বৈঠকে আলোচনা করা হয়৷ সচিব জানান, ২,৫৪৫টি বিদ্যালয়ে অভ্যন্তরীণ বিদ্যুতায়নের জন্য সমগ্র শিক্ষা অভিযানে ২৯ কোটি ৯২ লক্ষ টাকার অনুমোদন পাওয়া গেছে৷ ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষনস্তর উন্নয়নে শিক্ষা দপ্তরের কর্মসূচি নতুন দিশা নিয়েও এদিনের বৈঠকে আলোচনা করা হয়৷ এই সম্পর্কে সমগ্রশিক্ষা অভিযানের প্রকল্প অধিকর্তা তনুশ্রী দেববর্মা জানান, ৩ লক্ষ ১৬ হাজার ২৭০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে একটি সার্ভে করার পর তুলনামূলকভাবে দুর্বল শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদাভাবে ফোকাস সিলেবাস চালু করা হয়৷

এই সিলেবাস অনুযায়ী ছাত্র-ছাত্রীরা পাঠরত ক্লাসের সিলেবাসের সাথে সাথে নীচের ক্লাসের বিভিন্ন বিষয় যা পূর্বতন ক্লাসে শিখতে পারেনি তা শেখার সুুযোগ থাকছে৷ ত’তীয় থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন দিশার কর্মসূচির আওতায় থাকছে৷ এই কর্মসূচিতে ২২০ জন কী রিসোর্সপার্সনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও ১৭,৮৪২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকেও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ ৪,৪৩৬টি বিদ্যালয়ে সামার ক্যাম্প করে দুর্বল ছাত্র-ছাত্রীদের অতিরিক্ত পাঠ দেওয়া হয়েছে৷ এদিনের বৈঠকে সক্ষম ত্রিপুরা কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা করা হয়৷ এই কর্মসূচিতে ভিন্নভাবে সক্ষম ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে৷ এজন্য শিক্ষা দপ্তর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে বলে সভায় জানানো হয়৷


উচ্চশিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে উচ্চশিক্ষা অধিকর্তা সাজ ওয়াহিদ সভায় অবগত করেন৷ আলোচনায় রাজ্যে পি পি পি মডেলে আরও সাতটি ডিগ্রী কলেজ স্থাপনের বিষয়টি উঠে আসে৷ উচ্চশিক্ষা দপ্তরের আলোচনায় রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযানের অন্তর্গত বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা হয়৷ উচ্চশিক্ষা দপ্তরে নতুনভাবে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বৈঠকে অবগত করেন৷ তার মধ্যে জেনারেল ডিগ্রী কলেজগুলিতে প্লেসমেন্ট সেল চালু করা, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে অনলাইন এডমিশন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারন্যাল রেভিনিউ জেনারেশন ইত্যাদি বিষয়েও আলোকপাত করা হয়৷ এদিনের সভায় বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা উত্তম কুমার চাকমা, টি টি এ এ ডি সি-র শিক্ষা বিভাগের প্রধান আধিকারিক অমরদীপ দেববর্মা, বিশেষ সচিব অপূর্ব রায় ও আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷