রাগ ও অভিমানে আক্রমণ শেষে সন্ধ্যায় প্রিয়াঙ্কার ডাকে দিল্লি ছুটলেন প্রদ্যুৎ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ সেপ্টেম্বর ৷৷ রাগ ও অভিমানে কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সাড়াশি আক্রমণ করলেও সন্ধ্যায় প্রিয়াঙ্কার ডাকে দিল্লি ছঁুটে গেলেন সদ্য প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মণ৷ সংগঠন পরিচালনায় অবহেলা এবং ইস্যুভিত্তিক অজ্ঞতাই কংগ্রেসের দুরবস্থা ডেকে এনেছে৷ অন্তত এদিন সকালে সাংবাদিকদের সাথে আলাপ চারিতায় একথাই মনে হয়েছে৷ তিনি কটাক্ষ করেও বলেছেন, এনআরসি সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই৷ অথচ, সুপ্রিম কোর্টে এনআরসি মামলা তুলে নেওয়ার জন্য রীতিমতো চাপ দিয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্ব৷ তাঁর অভিযোগ, ত্রিপুরায় কংগ্রেসের সংগঠন বিস্তারে হাইকমান্ড মোটেও আগ্রহী নন, শীর্ষ নেতৃত্ব এ-রাজ্যে আসতেও চান না৷ কিন্তু, সন্ধ্যায় দিল্লি ছঁুটে যাওয়ার ঘটনায় কংগ্রেসের রাজনীতি নতুন মোড় নিতে চলেছে বলে মনে করা অস্বাভাবিক নয়৷

এদিন প্রদ্যুৎ কিশোর বলেন, রাজ্যে এনআরসি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছি৷ কিন্তু, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক লুইজিনহো ফেলেরিও ওই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন৷ তিনি আরও বলেন, এডিসি-কে অধিক ক্ষমতায়নের প্রশ্ণে সংবিধানের ধারা ২৪৪-এ মোতাবেক রাজ্যের ভেতরে রাজ্য চেয়েছি৷ কিন্তু, কংগ্রেস হাইকমান্ড এক্ষেত্রেও সহযোগিতায় আপত্তি জানিয়েছেন৷

তাঁর কথায়, ত্রিপুরায় আপত্তি থাকলেও অসমের কারবি আলঙে ওই দাবি সমর্থন করেছে কংগ্রেস৷ প্রদ্যুতের অভিযোগ, কংগ্রেস দ্বৈত মানসিকতার রাজনীতিতে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে৷ তাই একসাথে ঘর করা সম্ভব হয়ে উঠছিল না৷ এ-জন্যই কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেই ইস্তফা দিয়েছি, বলেন তিনি৷

প্রদ্যুৎ আজ উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, এনআরসি সম্পর্কে ন্যুনতম ধারণা নেই তাঁদের৷ অথচ, সুপ্রিম কোর্টে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে কোনও কসুর করছিলেন না কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক৷ তাঁর দাবি, এনআরসি ইস্যুতে আমার মামলার সাথে অসমের কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ এমন-কি পাতালকন্যা জমাতিয়ার মামলার সাথেও আমার মামলার কোনও মিল নেই৷ তাঁর কথায়, যাঁরা ভারতীয় নন তাঁরা কোনও সাংবিধানিক পদ দখল করে রাখতে পারবে না৷ তাছাড়া, যাঁরা অবৈধভাবে এ-দেশে বসবাস করছেন তাঁদের চিহ্ণিত করতে হবে৷ সেই উদ্দেশ্যেই সুপ্রিম কোর্টে এনআরসি চেয়ে আবেদন জানিয়েছি, বললেন তিনি৷

প্রদ্যুতের অভিযোগ, কংগ্রেসের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এক বছরে একবারও ত্রিপুরায় আসেননি৷ এমন-কি, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সিপি জোশি তাঁর চার বছরের মেয়াদে ত্রিপুরায় এক বার কয়েক ঘণ্টার জন্য এসেছিলেন৷

তাতে সহজেই প্রমাণিত, কংগ্রেস নেতৃত্বের ত্রিপুরায় সংগঠন বিস্তারে কোনও আগ্রহ নেই৷ মূলত, তাঁদের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই৷ ফলে, এই অঞ্চলে সংগঠন শক্তিশালী করে তোলা কোনওভাবেই সম্ভব নয়, তোপ দাগেন তিনি৷ সাথে যোগ করেন, আগামী দিনে ত্রিপুরায় উপজাতি মহল্লায় কংগ্রেসের শক্তিবৃদ্ধির কোনও সম্ভাবনা নেই৷ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি পদ এবং প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে তাঁর ইস্তফা ত্রিপুরায় কংগ্রেসের অস্তিত্ব মুছে দিতে সহায়ক হবে৷

অবশ্য, রাজনীতিতে থাকবেন নাকি সন্ন্যাস নিয়েছেন, সে-বিষয়ে আজ প্রদ্যুৎ কিশোর ঝেড়ে কাশেননি৷ ফলে, আগামী দিনে ত্রিপুরায় কংগ্রেসের সংগঠন কোন স্তরে গিয়ে ঠেকবে, তা আন্দাজ করা যাচ্ছিলনা৷

কিন্তু, সন্ধ্যার মধ্যেই ছবি অনেকটা পাল্টে দিয়েছে৷ এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর জরুরি তলবে সঙ্গে সঙ্গেই দিল্লি ছঁুটে গেছেন প্রদ্যুৎ কিশোর৷ অবশ্য, তিনি জানিয়েছেন ব্যক্তিগত কারণে প্রিয়াঙ্কার ডাক পেয়ে দিল্লি এসেছি৷ এর সাথে রাজনীতির কোনও যোগ নেই৷ কিন্তু, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, প্রদ্যুতের ঘর ওয়াপসি এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা৷