নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ সেপ্ঢেম্বর ৷৷ বিদ্যালয় শিক্ষা এবং তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১নং হলে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বি-শতবার্ষিক জন্মজয়ন্তী উদযাপন করা হয়৷ বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে এই উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেন, বিদ্যাসাগর একাধারে যেমন ছিলেন বিদ্যার সাগার অন্যদিকে তেমন ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক ও যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ৷

এদেশে তিনি মাতৃভাষার অর্থাৎ বাংলা ভাষায় আদর্শ শিশু শিক্ষার প্রবর্তকও ছিলেন৷ নারী শিক্ষার প্রসারে, বিধবা বিবাহ প্রচলন বাল্যবিবাহ রোধ করার ক্ষেত্রে তিনিই প্রথম অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন৷ দু’শো বছর আগের ভারতীয় সমাজে নানা কুসংস্কার সমাজের সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছিল৷ সেদিন বিদ্যাসাগর সেসব কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন৷ শিক্ষামন্ত্রী শ্রীনাথ আরও বলেন, বিদ্যাসাগর একদিকে যেমন সহজ সরল ও নরম মনের মানুষ ছিলেন তেমনি খুব কঠোর ও জেদিও ছিলেন৷ কোন কাজ তিনি করবেন মনে করলে সেটা শেষ না করে তিনি থামতেন না৷ বক্তব্যে তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যাসাগরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিদ্যাসাগরের জীবনাদর্শ অনুসরণ করে চললে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথের যেকোন বিঘ্নকে সহজে অতিক্রম করা যাবে৷
এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিদ্যাসাগরের চরিত্রে হার মেনে পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ছিল না৷ বিদ্যাসাগরের নারী শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলতে গিয়ে বলেন, তৎকালীন যুগের সমাজে দাঁড়িয়ে বিদ্যাসাগর বলেছিলেন নারী শিক্ষার প্রসার না হলে সমাজের উন্নয়ন হয় না বা সমাজকে অধঃপতনে যেতে কেউ আটকাতে পারবে না৷ তাই নারী শিক্ষা চাই, সমাজের উন্নয়নের জন্য শিক্ষিত নারী এবং একজন শিক্ষিত মা চাই৷ তিনি বলেন, আজ আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নারী শিক্ষার বিস্তারের জন্য যে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ নীতি গ্রহণ করেছেন সেই নীতি বিদ্যাসাগরের প্রদর্শিত পথেরই একটি অংশ৷ সুতরাং বিদ্যাসাগরের শিক্ষা নীতি ও আদর্শকে পাথেয় করে আমরা এগিয়ে যাব৷ এটাই হবে তাঁর জন্মদিন উদযাপনের স্বার্থকতা৷ সম্মানিত অতিথির ভাষণে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. অরুণোদয় সাহা বলেন, বিদ্যাসাগর একজন কিংবদন্তী পুরুষ৷ কঠোর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়েও তিনি ছিলেন দয়ার সাগর৷ নিরীহ সাধারণ মানুষের জন্য ছিল তাঁর অসম দয়া৷ বক্তব্যে তিনি আরো বলেন যে, দু’শো বছর আগে বিদ্যাসাগর যে সমাজ সংস্কারের কাজটি শুরু করেছিলেন সেটা আজও শেষ হয়নি৷ আজও সমাজে নানা কুসংস্কার ব্যাধির মতো বাসাবেধে আছে৷
আমাদের সকলের দায়িত্ব হবে সে কাজটি সম্পূর্ণ করা৷ তবেই হবে তাঁর জন্মদিন পালনের সার্থকতা৷ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ভাষণে আগরতলাস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার কিরিটি চাকমা বিদ্যাসাগরের ভাষা-সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেন৷ রামঠাকুর কলেজের অধ্যাপিকা শর্মিষ্ঠা ব্যানার্জীও বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিদ্যাসাগরকে মহামানব আখ্যা দিয়ে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, দু’শো বছর আগে যদি বিদ্যাসাগরের মতো-মানুষ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ না করতো তবে আজ নারী হিসাবে তিনি হয়তো এই মঞ্চে বক্তব্য রাখার সুযোগই পেতেন না৷ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা আধিকারের অধিকর্তা তনুশ্রী দেববর্মা৷ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাক্তন বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা রঞ্জিত কুমার দেবনাথ৷
অনুষ্ঠানে বিদ্যাসাগরের জন্মদিন উপলেক্ষ্য বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর এবং তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত শিশুদের বসে আঁকো প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ১৫ জন শিশুকে পুরস্কার ও প্রশংসাপত্র দেওয়া হয়৷ অতিথিগণ তাদের হাতে সেই পুরস্কার ও প্রশংসাপত্র তুলে দেন৷ অনুষ্ঠানে আগরতলা পুরনিগম এলাকার ৪টি বিদ্যালয়, ২টি মহাবিদ্যালয় এবং তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের শিল্পীগণ মনোজ্ঞ সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন৷ উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন বিদ্যাসাগর বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা৷

