নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ সেপ্ঢেম্বর৷৷ বর্বরতম ঘটনার সাক্ষী হল রাজধানী আগরতলা৷ অটো রিকশায় বাড়ি ফেরার পথে ১০ জনের লালসার শিকার হলেন এক মহিলা৷ দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আগরতলায় তিন থানার বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়া এবং অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে৷ নির্যাতিতা মহিলা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন৷ বর্বরোচিত দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় কলঙ্কিত হয়েছে রাজ্য৷ এদিকে, চাপে পরে অবশেষে মামলা নিয়েছে পুলিশ৷ পূর্ব আগরতলা মহিলা থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে৷ অটো চালক সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

নির্যাতিতা মহিলা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে জিবি হাসপাতাল থেকে বটতলা যাওয়ার জন্য অটো রিকশায় উঠেছিলেন তিনি৷ ওই অটো চালক তার পূর্ব পরিচিত৷ কিন্তু, অটো চালক তাঁকে ভুল পথে নিয়ে যায় এবং দফায় দফায় তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ তিনি জানান, প্রথমে অটো চালক তাঁকে ঊষাবাজার নিয়ে যায় এবং সেখানে দুজন মিলে তাঁকে ধর্ষণ করে৷ এর পর সেখান থেকে তাঁকে অন্য আরেকটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে আরও আটজন মিলে ধর্ষণ করেছে৷ পাশবিক অত্যাচারে তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন৷ এর পর তিনি নিজেকে সার্কিট হাউস এলাকার একটি নির্জন স্থানে পান৷ সেখানেই ধর্ষকরা তাঁকে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে বলে তিনি জানিয়েছেন৷
তিনি আরও জানান, ধর্ষকরা নিজেদের মধ্যে ডাকাডাকি করার সময় কয়েকজনের নাম শুনতে পেয়েছি৷ তারা হল অটো চালক প্রদীপ, বিশাল, আকাশ, বাসু এবং সান্তু৷ নির্যাতিতা মহিলা এদিন অভিযোগ করেন, ধর্ষণের মামলা নিতে পুলিশ অস্বীকার করেছে৷ বরং দুর্ব্যবহার করে তাঁকে এবং তাঁর স্বামীকে তাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ৷ তিনি বলেন, সংজ্ঞা ফিরে আসার পর স্বামী ও আত্মীয়দের ফোন করি৷ তখন তারা এসে আমাকে উদ্ধার করে এবং আমরা প্রথমে এডিনগর থানায় যাই৷ কিন্তু, সেখানে তাদের অভিযোগ নেওয়া হয়নি৷ তাঁর কথায়, গতকাল রাতে এডিনগর থানা, এনসিসি থানা, পশ্চিম আগরতলা থানা এবং পশ্চিম আগরতলা মহিলা থানা তাদের মামলা নেয়নি৷ বরং তাদের সাথে ওই থানার পুলিশ আধিকারিকরা দুর্ব্যবহার করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন৷
এদিকে মহিলার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়া শুরু হলে তাঁকে হাঁপানিয়াস্থিত টিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁর স্বামী৷ ওই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই পুলিশের ভূমিকায় সমালোচনা শুরু হয়ে যায়৷ ফলে চাপের মুখে পূর্ব আগরতলা মহিলা থানায় ধর্ষণের একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ পাশাপাশি নির্যাতিতা মহিলার মেডিক্যাল করেছে পুলিশ৷ পূর্ব আগরতলা মহিলা থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে৷
রাতের শহর আগরতলা মোটেও নিরাপদ নয় বলে ইতিমধ্যে সমালোচকরা মাঠে নেমে পড়েছেন৷ শুধু তা-ই নয়, বিট পুলিশের ভূমিকা নিয়েও নিন্দার ঝড় বইছে৷ কারণ, সারা আগরতলায় টহলদারির জন্য কয়েকশো বাইক কিনেছিল পুলিশ৷ কিন্তু, আদৌ তারা নজরদারি চালান কিনা সেই প্রশ্ণই এখন ঘুরে-ফিরে উঠছে৷ নির্যাতিতার জবানবন্দি অনুযায়ী, গতকাল রাতে একাধিক স্থানে নিয়ে গিয়ে তাঁকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে৷ অথচ, পুলিশের চোখে সেই ঘটনা ধরা পড়েনি, তা আশ্চর্যজনক মনে করা অস্বাভাবিক নয়৷
এদিনের ধর্ষণের ঘটনাকে ঘিরে শাসক ও বিরোধী উভয় দল ময়দানে নেমে পড়েছে৷ রাজনৈতিক ফায়দা যাতে কোনও পক্ষই নিতে না পারে সেই চেষ্টায় রয়েছেন সকলেই৷ এদিন, পুলিশের এডিজির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন বিধায়িকা কল্যাণী রায়, মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বর্ণালী গোস্বামী, বিজেপি মহিলা মোর্চার সভানেত্রী পাপিয়া দত্ত৷ তাছাড়া প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার, বিধায়ক বাদল চৌধুরী, প্রাক্তন মন্ত্রী রতন ভৌমিক ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজে গিয়ে চিকিৎসাধীন ওই গৃহবধূর সাথে দেখা করেন৷ ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েছেন৷ এদিকে, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক৷ তিনি জানান, আগামীকাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই গৃহবধূকে দেখতে যাবেন এবং ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিবেন৷

