নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ সেপ্ঢেম্বর৷৷ রাজ্যবাসীর মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে৷ সমষ্টিগত উন্নয়নের কথা ভাবছেন রাজ্যের সাধারণ মানুষ৷ উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুরের দামছড়ায় জনতা দরবার অনুষ্ঠান শেষে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এই অভিমত ব্যক্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁর কথায়, রাজধানীতে বসে রাজনীতি করতে চাই না৷ ত্রিপুরার প্রত্যেক জনগনের কাছে পৌঁছাতে চাই আমি৷ কারণ, রাজ্যবাসীর মানসিকতায় পরিবর্তন আমাকেও তাঁদের প্রতি দায়বদ্ধতা আরও বাড়িয়েছে৷
নির্বাচন-সহ বিভিন্ন কারণে বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে সোমবার থেকে শুরু হয় মুখ্যমন্ত্রীর জনতা দরবার৷ এদিন জনতা দরবার অনুষ্ঠিত হয়েছে উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুরে অবস্থিত দামছড়া কমিউনিটি হল-এ৷ বেশ কিছুদিন ধরেই জনতা দরবারকে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রশাসনিক তৎপরতা চলছিল ওই এলাকায়৷ দলমত নির্বিশেষে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সমস্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে৷ সে অনুযায়ী সোমবার অনুষ্ঠিত জনতা দরবারে বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন৷ তাঁরা নিজেদের অভাব-অভিযোগ তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে৷

সাধারণ মানুষের কথা শোনার জন্য প্রশাসনিক শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে দামছড়ায় উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি সবার কথা শোনেন এবং এক মাসের মধ্যেই সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন৷ বাকি যে সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য সমীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে, তা-ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷
মূলত, জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন সিংহভাগ জনজাতি অংশের লোকজন৷ কেউ বলছিলেন সুকলের কথা, আবার কেউ চিকিৎসা পরিষেবার দাবি তুলে ধরেছেন৷ আবার অনেকে রাস্তাঘাট, প্রশাসনিক পরিকাঠামো ইত্যাদির কথাও বলেছেন৷
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, জনতা দরবারের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে রাজ্যবাসীর মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে৷ তাঁর দাবি, এদিন সমস্যা সমাধানের জন্য কোনও রাজনৈতিক নেতা সেই অর্থে আসেননি৷ বরং সাধারণ মানুষ এসেছেন৷ এর মধ্যে ৯৯ শতাংশই জনজাতি অংশের৷
এদিন জনতা দরবারের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মানুষের অভাব-অভিযোগ শোনার পর, ছোটখাটো সমস্যা স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকদেরই সমাধান করে দেওয়ার জন্য বলেন তিনি৷ পঞ্চায়েতসচিব থেকে শুরু করে মুখ্যসচিবকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে যেখানেই দায়িত্বে আছেন, সেখানেই যেন সংশ্লিষ্টরা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন৷ প্রশাসনিক আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, যেখানেই থাকবেন, ’ত্রিপুরা নির্মাণের কাজ করবেন’৷
জনতা দরবার শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ এখন সমাজের সার্বিক কল্যাণের কথা ভাবছেন৷ জনতা দরবারে উপস্থিত হয়ে মানুষের উত্থাপিত বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে এই দাবি করেন তিনি৷
বিরোধীদের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি এ জায়গায় এসে কারোর কাছ থেকেই শোনেননি যে তাঁরা কেউ খেতে পাচ্ছেন না৷ রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকায় না গিয়ে, সত্যের মুখোমুখি না হয়ে, আগরতলায় বসে রাজনীতি করার ফলেই এ-ধরনের অভিযোগ করে থাকেন বিরোধীরা৷ রাজ্যের জনজাতি অংশের মানুষের কাছে গিয়ে আসল সত্য জানার জন্য বিরোধীদের প্রতি আহ্বান রাখেন বিপ্লব দেব৷ এদিন তাঁর সাথে ছিলেন বিধানসভার উপাধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন-সহ অন্যরা৷
এদিকে, জনতা দরবার শেষে মুখ্যমন্ত্রী সবার সঙ্গেই বসে দুপুরের আহার গ্রহণ করেছেন আজ৷ মুখ্যমন্ত্রী খাবেন বলে আগে থেকেই রাজকীয় আয়োজন না করার জন্য বলা ছিল৷ তাই সংশ্লিষ্ট আধিকারিক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে বসে কালাপাতায় পরিবেশিত খিচুড়ি খেয়েই দুপুরের আহার সারেন তিনি৷ প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান অনুযায়ী প্লাস্টিকের ব্যবহারও এদিন করা হয়নি৷ গোটা আয়োজনই ছিল প্লাস্টিকমুক্ত৷

