আর দু-তিন মাস, ক্যাব পাশ হয়ে যাবে, কোনও শক্তি হিন্দুদের নাগরিকহীন করতে পারবে না, করিমগঞ্জে ঘোষণা মন্ত্রী হিমন্তবিশ্বের

করিমগঞ্জ (অসম), ২৩ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : আর দু-তিন মাস অপেক্ষা করুন। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) পাশ হয়ে যাবে। তখন কোনও শক্তি হিন্দুদের নাগরিকহীন করতে পারবে না। এনআরসিতে নাম উঠেছে বলে আজ যাঁরা আনন্দে আত্মহারা, অদূর ভবিষ্যতে তাঁরা কান্নার জন্য প্রস্তুত থাকুন। সোমবার করিমগঞ্জে বিজেপ-র কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন সমাবেশে এভাবেই এনআরসি-ছুট হিন্দু বাঙালিদের অভয়বাণী শুনিয়েছেন রাজ্যের অর্থ, স্বাস্থ্য ও পূর্তমন্ত্রী তথা নেডা-র আহ্বায়ক ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
রাজ্য সরকারের সেকেন্ড-ইন-চিফ হিমন্তবিশ্ব আরও বলেন, করিমগঞ্জ আসনে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে দিয়েছে, সনাতনীরা জোটবদ্ধ হলে পৃথিবীর যে কোনও অপশক্তি প্রতিহত করা সম্ভব। পাঁচ হাজার বছর আগেকার ঋগবেদে উল্লেখ রয়েছে, “একম সত বিপ্রা বহুধা বদন্তি”। অর্থাৎ সত্য এক, জ্ঞানীরা যাকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করেন এবং তা একমাত্র হিন্দু জ্ঞানীরাই বলতে পারেন। তাই, ভারতবর্ষে যতদিন হিন্দুত্ব থাকবে, ততদিন অন্য ধর্মাবলম্বীরা সুরক্ষিত থাকবেন। কিন্তু যেদিন ভারতে সনাতনী ধ্বজ উড়বে না, সেদিন মুনি-ঋষির দেশ ভারতবর্ষে অপশক্তির ধারক সাম্প্রদায়িকরাই শাসন চালাবে। তখন কোনও জাতি শান্তিতে বসবাস করতে পারবে না। এর আগাম অশনি সংকেত অসমে ইতিমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।

আক্রমাণাত্মক হিমন্তবিশ্ব ভারতের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও বিবিধতার মধ্যে একতা ধরে রাখতে সনাতনীদের জোটবদ্ধ হ‌ওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আর‌ও বলেন, ভারতের পূর্বতন কোনও সরকার কেবলমাত্র ভোটব্যাংক অক্ষুণ্ণ রাখতে তিন তালাকের বিরুদ্ধে রা কাড়েনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুসলিম মা-বোনদের ধর্মীয় গোঁড়ামির নামে তিন তালাকের অত্যাচার থেকে রক্ষা করতে সংসদে বিল পাশ করিয়ে আইনের প্রচলন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ পদক্ষেপে আজ ধর্মীয় গোঁড়ামির হাত থেকে রেহাই পেয়ে মুসলিম মহিলারা মুক্ত আকাশের নীচে শ্বাস নিচ্ছেন।

এনআরসি প্রসঙ্গে মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে পৃথিবীর যে কোনও দেশ থেকে ভারতবর্ষে আশ্রিত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, জৈন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য বিজেপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যদিনের মতো আজও তিনি জোরের সঙ্গে দাবি করেছেন, সম্প্রতি প্রকাশিত এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা জাতির দলিল নয়। চূড়ান্ত তালিকায় যাঁদের নাম আসেনি, তাঁদের অভয় দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে খুব শীঘ্রই সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হবে। এতদিন অপেক্ষা করেছেন, আর দু-তিন মাস, মোদী আপনাদের অপেক্ষার অবসান ঘটাবেন। যদি সব ঠিকঠাক থাকে তা-হলে আগামী নভেম্বরের মধ্যেই তা পাশ হয়ে যাবে। এর পর সমগ্র দেশের সঙ্গে অসমেও পুনর্বার এনআরসি-র নবায়ন হবে। তখন আজ যাঁরা হাসছেন, আনন্দ করছেন তাঁদেরকে কান্নার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন ড. শর্মা।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সম্পর্কে মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব বলেন, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার জনগণ এর বিপক্ষে নন। পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা পর্যন্ত প্রত্যেকটি নির্বাচনে বিজেপিকে দুহাত উজাড় করে ভোট দিয়ে তা প্রমাণ করে দিয়েছেন তাঁরা। বরাক-ব্রহ্মপুত্রের মধ্যে বিভেদ জি‌ইয়ে রাখতে একটি রাজনৈতিক শক্তি সক্রিয় ছিল। রাজ্যের জনগণ তাদের কূটচাল বুঝতে পেরে বিভেদকামী এই শক্তিকে বরাক-ব্রহ্মপুত্রের জলে চিরদিনের মত বিসর্জন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আজ দুই উপত্যকায় সমস্তরে উন্নয়নের জোয়ার বইছে।

রাতাবাড়ির উপনির্বাচনের পর জেলাবাসীর জন্য অনেক সুখবর রয়েছে বলেও আজকের সভায় ঘোষণা করেছেন মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। বরাকের সুপারি ও কয়লা সিন্ডিকেট নিয়ে হিমন্ত বলেন, এটা মিডিয়ার বানানো গল্প। এর কোনও বাস্তবিকতা নেই। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ১০০ আসনের লক্ষ্য নিয়ে রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব এগিয়ে চলছে, মিডিয়ার বানানো গল্পে বিভ্রান্ত হলে সেঞ্চুরির লক্ষ্যভেদ করা সম্ভব হবে না। একটি চক্র সরকারকে বদনাম করতে এ-ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিরোধীদের পাতানো ফাঁদে পা দিলে বিজেপি লক্ষ্যচ্যুত হবে। এ-সবকে পাত্তা না দিয়ে সরকার এবং দল সম্মিলিতভাবে জনগণের উন্নয়নের চিন্তা করছে। লোকসভা নির্বাচনে দলের অভাবনীয় জয়ের মূল কারিগর দলীয় ভোটার, শুভাকাঙ্ক্ষী সাধারণ জনগণ, দলীয় কার্যকর্তা ও সকল স্তরের কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন সভায় রাজ্যের অর্থ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা করিমগঞ্জবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এই নির্বাচন ক্ষেত্রের জনগণ কৃপানাথ মালাহকে জয়ী করে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, সংকল্প ও একতা থাকলে যে-কোনও অসম্ভবকে অনায়াসে সম্ভব করা যায়। দীর্ঘ ২৬ বছরের প্রতীক্ষার পর বিজেপি এই আসন পুনরুদ্ধার করতে সফল হয়েছে। করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির জনগণ দু-হাতে কৃপা করেছিলেন বলেই আজ কৃপানাথকে সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতকে শক্ত করতে উপহার স্বরূপ তুলে দিতে পেরেছেন।

বিজেপির করিমগঞ্জ জেলা সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত আজকের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন সভায় প্রাসঙ্গিক বক্তব্য পেশ করেছেন বন ও পরিবেশ, আবগারি ও মৎস্যমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, শিলচরের সাংসদ ডা. রাজদীপ রায়, করিমগঞ্জের সাংসদ কৃপানাথ মালাহ, এআইডিসি-র চেয়ারম্যান মিশনরঞ্জন দাস, শিলচরের বিধায়ক দীলিপকুমার পাল, পাথারকান্দির কৃষ্ণেন্দু পাল, প্রদেশ বিজেপি-র উপ-সভাপতি বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য। উপস্থিত ছিলেন বরাক বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক নিত্যভূষণ দে, করিমগঞ্জ বিজেপির প্রভারী রূপম সাহা, শিপ্রা গুন, মুন স্বর্ণকার, জেলা বিজেপির উপ-সভাপতি ডা. মানস দাস, অমরেশ রায়, নির্মল বণিক প্রমুখ। আজকের গোটা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ দাস।