নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ সেপ্টেম্বর৷৷ চাপে পড়ে পদত্যাগ করলেন ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ভি এল ধারুরকর৷ আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে পদত্যাগ করতে হয়েছে তাঁকে৷ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে তাঁকে টেলিফোনে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, এদিন সকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর সাথে আলোচনার পর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন৷ সে মোতাবেক আজ তিনি কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র ই-মেলে পাঠিয়েছেন বলে সূত্রের খবর৷ এদিকে, তাঁর পরিবর্তে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অস্থায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অধ্যাপক সংগ্রাম সিনহাকে৷

সম্প্রতি আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ভিএল ধারুরকর জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে৷ তাঁর বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে ঠিকাদারি সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ৷ স্থানীয় একটি বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের স্টিং অপারেশনে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ভিএল ধারুরকরের কাজের বরাত দেওয়ার বিনিময়ে উপঢৌকন নেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়েছে৷ কলকাতা-ভিত্তিক এক সংস্থাকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনার বরাত পাইয়ে দিয়েছেন৷ এর জন্য তিনি লক্ষাধিক টাকা নগদ সংগ্রহ করেছেন৷ বাকি টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার জন্যও তিনি ওই সংস্থার এজেন্টকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজে তাঁদের কথোপকথনে লেনদেনের বিষয়টি পরিষ্কার ফুটে ওঠেছে৷ এ ঘটনাকে ঘিরে ত্রিপুরায় তোলাপাড় অবস্থা৷
কেলেঙ্কারির ঘটনায় ত্রিপুরা প্রদেশ এনএসইউআই সভাপতি রাকেশ দাস অধ্যাপক ধারুরকরের অপসারণ এবং গ্রেফতারি দাবি করেছিলেন৷ এ-বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার গুরুদায়িত্ব অধ্যাপক ভিএল ধারুরকরের ওপর৷ অথচ, তিনি নিজেই কেলেঙ্কারির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন৷ তাঁর কথায়, স্থানীয় একটি বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের স্টিং অপারেশনে তাঁর কুকীর্তি ফাঁস হয়েছে৷ কারণ, বহিঃরাজ্যের সংস্থাকে কাজের বরাত দেওয়ার বিনিময়ে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন৷
রাকেশ দাস এদিন ত্রিপুরা সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ণ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিবাজদের কীভাবে ঠাই দেওয়া হচ্ছে৷ তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের উচিত তাঁর বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া৷ তিনি ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অধ্যাপক ভিএল ধারুরকরকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছিলেন৷ শুধু তা-ই নয়, ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে তাঁকে অপসারণের দাবিও তিনি জানিয়েছিলেন৷
এদিকে, আজ অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদও অধ্যাপক ধারুকরকরের পদত্যাগ দাবি করেছে৷ পরিষদের কথায়, কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত কোনও ব্যক্তি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা অনুচিত৷ তিনি উপাচার্য পদের গরিমা ক্ষুণ্ণ্ করেছেন৷ তাই, তাঁর পদত্যাগ করা উচিত৷ এবিভিপিও তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছে৷
সূত্রের খবর, ত্রিপুরায় ওই কেলেঙ্কারির বিষয়টি তোলপাড় শুরু হয়ে যাওয়ায় অধ্যাপক ধারুরকর পদত্যাগ করেছেন৷ আজ ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কোনও আধিকারিকের সাথে এ-বিষয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি৷ তবে, উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগের পত্রটি তিনি কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে ই-মেলে পাঠিয়েছেন বলে সূত্রের দাবি৷ শুধু তা-ই নয়, তাঁর পরিবর্তে এখন থেকে নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য অস্থায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অধ্যাপক সংগ্রাম সিনহাকে৷
এদিকে অধ্যাপক ধারুরকর এবং অধ্যাপক সংগ্রাম সিনহাকে আজ বহু চেষ্টা সত্ত্বেও টেলিফোনে যোগাযোগ কররা সম্ভব হয়নি৷ কারণ, তাঁরা ফোন বন্ধ করে রেখেছেন৷ সূত্রের খবর, অধ্যাপক ধারুরকরের স্ত্রী আজ আগরতলায় এসেছেন৷ সম্ভবত, আগামী সোমবার তাঁর পদত্যাগ গ্রহণ করতে পারে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক৷ এর পরই তিনি ত্রিপুরা ছাড়বেন বলে সূত্রের খবর৷

